ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষক সংকটে বাগেরহাটের দুটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২০
শিক্ষক সংকটে বাগেরহাটের দুটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়

বাগেরহাট: শিক্ষক ও কর্মচারী সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে বাগেরহাট জেলা শহরের দুই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে তেমনি বিদ্যালয়ের পরিবেশও চরম নোংরা হচ্ছে। এ সংকট কবে নাগাদ শেষ হবে তা বলতে পারেন না বিদ্যালয়ের প্রধানরাও।

জানা যায়, বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এই দুটিই বাগেরহাট জেলার প্রধান বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন ধরে জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে শুধু এই দুটি বিদ্যালয়ই সরকারি ছিল।

এরফলে জেলার মানুষের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির প্রতি অন্যরকম আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিল। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করে সরকার।
 
বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রভাতি ও দিবা দুই শিফটে এক হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন প্রধান শিক্ষক, দুইজন সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ৫৩ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। এরমধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৩২ জন শিক্ষক। শূন্য রয়েছে ২১ জন শিক্ষকের পদ। এরমধ্যে বাংলা বিষয়ে পাঁচজন, ইংরেজিতে দুইজন, গণিতে দুইজন, ইসলাম শিক্ষায় একজন, সামাজিক বিজ্ঞান একজন, ভৌত বিজ্ঞান দুইজন, জীব বিজ্ঞান দুইজন, ভূগোলে একজন, ব্যবসায় শিক্ষা দুইজন ও কৃষিশিক্ষা বিষয়ে একজন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এরফলে বেশিরভাগ সময় রুটিনমাফিক শিক্ষার্থীদের পাড়ানো সম্ভব হয় না। নির্ভর করতে হয় প্রাইভেট টিউটরের উপর। এর বাইরে তৃতীয় শ্রেণির দুইটি পদের মধ্যে দুইটি পদই শূন্য রয়েছে বিদ্যালয়টিতে।  

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারজান বাংলানিউজকে বলেন, স্যারেরা আমাদের আন্তরিকতার সঙ্গে পড়ালেও শিক্ষক সঙ্কট থাকার জন্য অনেক সময় ঠিকমত ক্লাস হয় না। আমাদের পড়ালেখায় সমস্যা হয়। জটিল বিষয়গুলোতে আমাদের নির্ভর করতে হয় প্রাইভেট টিউটরের ওপর।

এসএসসি পরীক্ষার্থী হামিম বাংলানিউজকে জানান, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে সব থেকে বেশি সমস্যা হয় বিজ্ঞান বিভাগের সাবজেক্ট নিয়ে। একজন স্যারের একই সময়ে একাধিক ক্লাস থাকে। এরফলে স্যারেরা চাইলেও আমাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারতেন না। সবমিলিয়ে সিলেবাস শেষ হয় না। পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক জীববিজ্ঞান ও রসায়ন সব বিষয় পড়ান।  

অন্যদিকে, বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রভাতি ও দিবা দুই শিফটে এক হাজার ৮৮৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন প্রধান শিক্ষক, দুইজন সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ ৫৩ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। এরমধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ২৭ জন শিক্ষক। শূন্য রয়েছে ২৬ জন শিক্ষকের পদ। এরমধ্যে দুইজন সহকারী প্রধান শিক্ষক, বাংলা বিষয়ে পাঁচজন, ইংরেজিতে তিনজন, গনিতে তিনজন, ভৌত বিজ্ঞানে তিনজন, সামাজিক বিজ্ঞানে তিনজন, জীববিজ্ঞানে দুইজন, ইসলাম শিক্ষায় দুইজন, কৃষি শিক্ষায় দুইজন ও চারু ও কারুকলায় একজন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া তৃতীয় শ্রেণির দুইটি পদের মধ্যে দুইটি এবং চতুর্থ শ্রেণির পাঁচটি পদের মধ্যে তিনটি পদই শূন্য রয়েছে। শিক্ষক সংকটের ফলে প্রচণ্ড বিড়ম্বনায় পড়তে হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। শিক্ষক সংকটের ফলে দুই শিফটের শিক্ষার্থীদের একত্র করেও পাঠদান করছে শিক্ষকরা।

শরীরচর্চা বিভাগের শিক্ষক কবির আকন বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। অনেক সময় শ্রেণি শিক্ষকও পাওয়া যায়না। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী না থাকায় বাইরে থেকে লোক ডেকে বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। এটা খুবই চ্যালেঞ্জিং আমাদের জন্য।

ছবি- বাংলানিউজদশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম্মাহ মেহজাবিন ও সামিয়া ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বিজ্ঞান বিভাগের সকল বিষয়ে একই শিক্ষকের উপর নির্ভর করতে হয়। আসলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক না হলে শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত দিতে পারেন না। তাই প্রাইভেট টিউটরের ওপর নির্ভর ও বাসায় অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়।

বাগেরহাটের সরকারি দুই বিদ্যালয়ের অভিভাবক ফোরামের আহ্বায়ক আহাদ উদ্দিন হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, বাগেরহাট শহরের সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে আমরা জেলার শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় মনে করি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এখানে শিক্ষক ও কর্মচারী সঙ্কট রয়েছে। এরফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হচ্ছে। আমরা অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক মহোদয়কেও বিষয়টি জানিয়েছি, তিনি আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছেন শিক্ষক সংকট সমাধানের জন্য।  

বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে বিদ্যালয়ের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। আমি বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছি। সাম্প্রতিক সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি পরীক্ষা চলছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে আমরা কিছু শিক্ষক পাব। আশাকরি আমাদের শিক্ষক সংকট দ্রুত পূরণ হয়ে যাবে।

দুই বিদ্যালয়ের সভাপতি জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়টি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। অতিদ্রুত বিদ্যালয়ের শিক্ষক সংকট নিরসণ হবে বলে আশা প্রকাশ করি।

বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।