ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

করোনা আতঙ্ক-উদ্বেগে ভুগছে দেশের ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২০
করোনা আতঙ্ক-উদ্বেগে ভুগছে দেশের ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত সাম্প্রতিক এক জরিপে করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের এই সময়টাতে অনেক শিক্ষার্থীর ১৬ শতাংশ উদ্বেগ ও আতঙ্কে ভোগার চিত্র উঠে এসেছে।

তাছাড়া শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের অনেকের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠার প্রবণতাও দেখা গেছে।

টেলিভিশন, ইন্টারনেট বা বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর শিশুদের ক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যা ইত্যাদি বিবিধ কারণে অনেক শিক্ষার্থী করোনাকালীন দূরশিক্ষণে অংশ নিতে পারছে না বলেও জানা গেছে এই জরিপে।

কোভিড-১৯ মোকাবিলার অংশ হিসেবে গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পেতে ব্র্যাক দেশের আট বিভাগের ১৬টি জেলায় মে মাসের ৪-৭ তারিখে এই জরিপটি পরিচালনা করে। এতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পড়ুয়া ১৯৩৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের মধ্য থেকে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বিস্তারিত সাক্ষাৎকারও নেওয়া হয়েছে।

শনিবার (২০ জুন) ডিজিটাল সম্মলেনে এই জরিপের ফলাফল তুলে ধরা হয় বলে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানায় ব্র্যাক।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ-আতঙ্কে ভুগছে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা ২৯ শতাংশ। নারী শিক্ষার্থী, মাধ্যমিক পড়ুয়া, পল্লীঅঞ্চলের বাসিন্দা ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থী-এদের সবার মধ্যে ১৭ শতাংশ ছাত্রছাত্রী উদ্বেগ ও আতঙ্কে ভুগছে। আতঙ্কে ভুগলে কী করে এ প্রশ্নের উত্তরে তারা জানিয়েছে, একেবারেই নীরব হয়ে যায়, মেজাজ খারাপ করে, পড়াশোনা বা খেলাধুলা কোনোটাই করে না, বাইরের কাউকে দেখলে আতঙ্ক বোধ করে, একা থাকতে ভয় লাগে ইত্যাদি।

করোনা ভাইরাস মহামারির এই সময়ে ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়ালেখার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হওয়ার কথা জানিয়েছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখার ব্যাপারে নির্দেশনা না পাওয়া এর একটি কারণ বলে প্রতীয়মান হয়। ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশেষ করে মাদ্রাসা ও গ্রামাঞ্চলের ছাত্রছাত্রীরা এই সমস্যার কথা জানিয়েছে।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২২ শতাংশ ঘরে খাদ্যাভাবকে এজন্য দায়ী করেছে, যা মাদ্রাসা ও শহরাঞ্চলে বসবাসকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি।

জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, ৯০ শতাংশ উত্তরদাতা করোনাকালীন পরিচ্ছন্নতা বিধি (সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা) মেনে চললেও ১০ শতাংশ তা মেনে চলছে না। দেশের ৩ কোটি ১০ লাখ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় এই উপাত্ত যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলে জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া, ১৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছে তারা সাধারণ ছুটি বা লকডাউন চলাকালেও বাড়ি থেকে বাইরে চলাচল করেছে।

জরিপের উপাত্ত অনুযায়ী শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন নিপীড়নের শিকার হয়েছে ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে (৮২ শতাংশ) এসব নিপীড়নের ধরন মানসিক। তবে শারীরিক ও যৌন নিপীড়ন, ঘরে বন্ধ করে রাখা বা জোর করে কাজ করানোর মতো ঘটনাও জানিয়েছে জরিপে অংশগ্রহণকারীরা। এখানেও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা অন্যদের চেয়ে বেশি ১৬ শতাংশ। এছাড়া ২ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা বলেছে।

নারী শিক্ষার্থীর যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা আরও বেশি হতে পারে বলে জরিপ প্রতিবেদনে মত প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে তথ্য দিতে হয়তো সংকোচ বোধ করেছে।

শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ (৫৪ শতাংশ) স্কুল খোলার পর বাড়তি ক্লাস করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছে। তবে করোনা সংক্রমণ বেড়ে চলেছে তা জানা থাকলেও ৪৯ শতাংশ এখনই স্বল্প সময়ের মধ্যে স্কুল খুলে দেওয়ার পক্ষে। এছাড়া পাঠ্যসূচি বা সিলেবাস ছোট করা এবং পরীক্ষায় কড়াকড়ি শিথিল করার পক্ষেও অনেকে মত দিয়েছে। করোনাকালীন মানসিক চাপ বা ক্ষতি নিরাময়ের জন্য উত্তরদাতা শিক্ষার্থীরা যেসব পন্থার কথা বলেছে তার মধ্যে স্কুল খোলার পর বিনোদনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ, উপহার প্রদান, উপবৃত্তির অর্থ বাড়ানো এবং দূরশিক্ষণ ও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে আরও জোরদারে পদক্ষেপ গ্রহণ উল্লেখযোগ্য।

দূরশিক্ষণে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দ্রুত এই কার্যক্রমকে শক্তিশালী করে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে জরিপ প্রতিবেদনে মত প্রকাশ করা হয়।

এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। এছাড়াও প্যানেল আলোচক হিসেবে যোগ দেন এই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিদ্যালয়) আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম ও অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) রতন চন্দ্র পণ্ডিত, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক তপন কুমার ঘোষ, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ, এটুআই প্রকল্পের উপদেষ্টা অনীর চৌধুরী, ইউনেস্কোর শিক্ষা বিভাগের প্রধান সুন লি, ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিক্ষা বিভাগের প্রধান নূর শিরিন মো. মোক্তার, যুক্তরাজ্য সরকারের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ডিএফআইডি) মানব উন্নয়নবিষয়ক টিম লিডার ফাহমিদা শবনম, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বৈদেশিক সহায়তা বিভাগ ইউএসএইডের আলী মো. শহিদুজ্জামান এবং ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচির পরিচালক ড. শাফিকুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০২০
এসই/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।