ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ব্যাচ ২০২০: সবাই অটো পাস!

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০২০
ব্যাচ ২০২০: সবাই অটো পাস! ফাইল ছবি

ঢাকা: পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী, অষ্টমের জেএসসি-জেডিসির পর আরেকটি পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করলো সরকার। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করা হয় বুধবার।

আগামী শীতে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান ছুটি এবং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে অন্যান্য শ্রেণিতেও বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। উচ্চ শিক্ষা স্তরে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সেশনজটের আশঙ্কায় রয়েছেন লাখো শিক্ষার্থী।

বুধবার (০৭ অক্টোবর) অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানান।

আরও পড়ুন: এইচএসসি পরীক্ষা হচ্ছে না, জেএসসি-এসএসসির ফলে মূল্যায়ন

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা এইচএসসি পরীক্ষার্থী তারা দুটি পাবলিক পরীক্ষা— জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষা পার করে এসেছে। সে দুটির ফলাফল গড় অনুযায়ী এইচএসসিতে ফল নির্ধারণ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

দীপু মনি বলেন, আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে পারব। যাতে জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির বিষয়গুলো শুরু হতে পারে।

প্রায় ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের পর এখন প্রশ্ন উঠেছে- সব শিক্ষার্থীই কি এ বছর পাচ্ছে অটো পাস?

এ বছর এইচএসসির শিক্ষার্থীরা সবাই পাস করছে কিনা— জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, না। তারা তো জেএসসি এবং এসএসসি পাস করে এসেছে। ওই দুই পরীক্ষার ফল থেকে গ্রেডিং করে ফল প্রকাশ করা হবে।

গত মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রথমে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল করা হয়। এই পরীক্ষায় প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা ছিল। প্রাথমিক সমাপনী বাতিল করে নিজ প্রতিষ্ঠানে মূল্যায়নের নির্দেশ দেয় সরকার। সমাপনী বাতিল করায় এ বছর বৃত্তিও পাবে না শিক্ষার্থীরা।

এর পরপরই প্রায় ২০ লাখ পরীক্ষার্থীর জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষাও বাতিল করা হয়। এখন নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মূল্যায়িত হবে এসব শিক্ষার্থী। তবে কোন পদ্ধতিতে পঞ্চম ও অষ্টমের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে সে নিয়ে এখনও কোনো গাইডলাইন দেয়নি সরকার।

প্রাথমিক স্তরের প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও বার্ষিক পরীক্ষায় অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অবশ্য একটি পরিমার্জিত পাঠ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হলে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব না হলে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে— জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব পরোক্ষভাবে অটো পাসেরই ইঙ্গিত দেন।

আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর পর বার্ষিক পরীক্ষার সম্ভাবনা কমে আসছে কিনা— এমন প্রশ্নে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম হোসেন বলেন, আমরা ১৬ মার্চ পর্যন্ত ৩০-৩৫ শতাংশ পাঠ পরিকল্পনা শেষ করতে পেরেছি। রেডিও, টেলিভিশন, সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার করে পাঠদান কার্যক্রম চালাচ্ছি। আমাদের মেইন টার্গেট হলো— প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মিনিমাম একটা লার্নিং কমপিটেন্সি লাগে। এটা যাতে প্রতিটি শিশু অর্জন করতে পারে সে ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। পরীক্ষা বা মূল্যায়ন না।

‘স্কুলের শিক্ষকই বলতে পারবে বাচ্চারা সঠিকভাবে লার্নিং কমপিটেন্সি অর্জন করতে পেরেছে কিনা, সেট নিয়ে আমরা কাজ করছি। প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষকরা একটা টুলস তৈরি করবেন পরবর্তী ক্লাসে তুলে দেওয়ার জন্য। ’

অটো পাস দেওয়া হবে কিনা- প্রশ্নের জবাবে আকরাম হোসেন বলেন, আমাদের ধীরে ধীরে স্পেস কমে যাচ্ছে। সেটা হতেই পারে, পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। আমরা নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করি।

গণশিক্ষা সচিব বলেন, ১ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের একটা পাঠ পরিকল্পনা আছে। যদি স্কুল খুলতে পারি তাহলে সে অনুযায়ী চলবে। যদি স্কুল না খোলে, শেষ অপশন যদি ব্যবহার করতে না পারি তাহলে বুঝতেই পারছেন কী হবে!

গত ০১ অক্টোবর প্রাথমিকের সচিব সাংবাদিকদের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানালেও মন্ত্রণালয়ে আর কোন আপডেট তথ্য নেই বলে জানান অতিরিক্ত সচিব আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডিসেম্বরে বার্ষিক পরীক্ষার মৌসুম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় অনিশ্চয়তা থাকায় ষষ্ঠ, সপ্তম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও বার্ষিক পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। অষ্টম শ্রেণির জেএসসি-জেডিসিসহ মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে একটি গাইডলাইন তৈরি করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই গাইডলাইন দুই-একদিনের মধ্যেই জানিয়ে দেওয়া হবে।

বুধবার (০৭ অক্টোবর) অনলাইনে সংবাদ সম্মেলনে এসে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, মাধ্যমিক স্তরের অন্যান্য শ্রেণির মূল্যায়নের পদ্ধতি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০২০
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।