ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

পরীক্ষা বাতিল: ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০২০
পরীক্ষা বাতিল: ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া ফাইল ছবি

ঢাকা: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিলের পর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

পরীক্ষা বাতিলের যে সিদ্ধান্ত, তা আরো গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিত বলে মনে করেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইসরাত জাহান।

তিনি বলেন, প্রতিবছর দেখা যায় জেএসসি বা এসএসসিতে যেসব শিক্ষার্থী খারাপ করে তারা অনেকেই এইচএসসিতে ভালো ফল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। আবার অনেক ভালো শিক্ষার্থীও ঝরে পড়ে বিভিন্ন কারণে।

তার মতে, একজন পরীক্ষার্থীর প্রস্তুতি যেকোনো কারণে বদলে যেতে পারে এবং ভালো বা খারাপ যেকোনো কিছু হতে পারে। তাই মূল্যায়নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) এইচএসসি পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে কথা হলে বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন ওই শিক্ষার্থী। অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষাবিদরাও এ বিয়ষে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

আলম হোসেন নামে এক অভিভাবক বলেন, দেখা গেল টেস্টে একজন শিক্ষার্থীর রেজাল্ট খারাপ। এরপর পুনরায় গাইড করে বর্তমানে যে অবস্থায় তাকে আনা হয়েছে সেটি অনেক ভালো। এখন পরীক্ষা বাতিলের ফলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক উভয়েই মানসিকভাবে একটা খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেল। এতদিন যখন অপেক্ষা করা গেল তখন আরো কিছুদিন অপেক্ষা করাই যেত।

বিএম তানভির আহমেদ নামে আরেক অভিভাবক বলেন, এটি এক পক্ষের জন্য যেমন সুবিধার তেমনি অপর এক পক্ষের জন্য অসুবিধার। এটা ঠিক যে, করোনার মধ্যে পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটলো। তবে শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা কিছুটা বেড়ে গেল।

অন্যদিকে কোনো কোনো শিক্ষক বিষয়টিকে ইতাবাচক হিসেবে দেখলেও অনেকেই দেখছেন নেতিবাচকভাবে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) জেনারেল সেক্রেটারি শেখ কাওসার আহমেদ বলেন, এমন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্তটি সন্তোষজনক। একটা বড় ব্যাপার হলো শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা মানসিক চিন্তা থেকে মুক্তি পাবেন। ঘরে বসে থেকে যে সবাই পড়াশোনা করেছে ব্যাপারটা এমন নয়। হ্যাঁ, কিছু শিক্ষার্থী হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, তবে ভালোর দিকটাই বেশি। আমরা যদি অন্যান্য বছরের ফলাফলের হিসেব করি, তবে দেখা যায় গড় পাশের হার প্রায় ৮৫ ভাগ। এবার সেটা ১০০ ভাগে উন্নীত হতে পারে। আর উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য তাকে তো মূল্যায়নের মধ্য দিয়েই যেতে হবে।

তবে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বাশিস) সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনির মতে আগামী দিনের ভবিষ্যত বিনির্মাণে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।  

তিনি বলেন, করোনার এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে সরকার বাধ্য হয়েছে। এটি এক হিসাবে ভালো হয়েছে। আরেক হিসাব যদি করি, তবে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের জন্য এটি খুব একটা ভালো হয়নি। কারণ, তারা যখন উচ্চশিক্ষার জন্য যাবে, ভর্তি পরীক্ষা দেবে তখন এই দুর্বলতাটা কিন্তু রয়েই গেল। যদিও তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে বা নিয়েছে, কিন্তু পরীক্ষা না হলে প্রকৃত যে দক্ষতা, সেটি শিক্ষার্থীর আসে না। সাময়িকভাবে সরকার হয়তো বিকল্প ভাবতে পারেনি, কিন্তু অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে হলেও যদি এটা হতো, ভালো হতো। আগামী দিনের ভবিষ্যত বিনির্মাণে এর একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি।

জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল সমন্বয় করে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে আরো বিচার বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম।

তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে অভিমত জানানো হয়েছে, এটিকে সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করার আগে আরো বিচার বিশ্লেষণ, আরো বিবেচনা এবং মতামত নেওয়া প্রয়োজন। কেননা এর ফলে পরীক্ষার্থীদের মানসিকভাবে একটা প্রভাব পড়বে। তাদের মনস্তাত্ত্বিক কিছু ক্ষতি হবে, ফলাফলগতভাবেও কিছু ক্ষতি হবে। আর এইচএসসি পরীক্ষা উচ্চশিক্ষার জন্য মূল্যায়ন। পেছনের মূল্যায়ন না করে এখনকার বিষয়গুলোর ওপর মূল্যায়ন করা গেলেই ভালো হতো। ভাষাভিত্তিক বিষয়গুলোর জন্য একটা পরীক্ষা, সায়েন্স, আর্টস বা কমার্সের জন্য একটা করে আলাদা আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেত। অন্তত ৩০০ বা ৪০০ নম্বরের মধ্যে যদি নিয়ে আসা যেত সবগুলো ক্যাটাগরিকে, তাহলে এই পরিস্থিতিতে তারা (শিক্ষার্থীরা) বিষয়বস্তুগত প্রস্তুতিটি প্রকাশ করার সুযোগ পেত।

এছাড়া ডিসেম্বরে ফল প্রকাশ করলেই যে মার্চে বিশ্ববিদ্যায়ের ভর্তি হওয়া যাবে, এখনো সেই বিষয়টি পরিষ্কার নয়। কেননা আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রস্তুত নয়। সুতরাং সার্বিক বিষয় বিবেচনায় একটু সময় নিয়ে আরো বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবার সুযোগ এখনো রয়েছে বলে জানান তিনি।

সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞ যে কমিটি গঠন করা হয়ে‌ছে বা হ‌বে, তাদের আরো বেশি মতামত গ্রহণ এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমেই পরবর্তী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন অধ্যাপক আব্দুস সালাম।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২০
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।