ঢাকা: জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল সমন্বয় করে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বিষয়টি নিয়ে আরও বিচার বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম।
বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি এ কথা জানান।
সমন্বয় পদ্ধতিতে ফল প্রকাশের আগে আরও বেশি মতমত প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই এখন একটা উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে। এখন পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যে অভিমত জানানো হয়েছে, এটিকে সিদ্ধান্ত হিসেবে গ্রহণ করার আগে আরও বিচার বিশ্লেষণ, আরও বিবেচনা এবং মতামত নেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং গবেষণার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এবং শিক্ষা বিশেষজ্ঞ, যারা শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন কলেজে কর্মরত আছেন, সেসব শিক্ষার্থী যারা পরীক্ষার্থী ছিলেন, তাদের অভিভাবক; এদের মতামত আরও বেশি করে নিয়ে যদি আমরা সিদ্ধান্তটি নিতে পারি, তবে মনে হয় সেটি আরও যৌক্তিক হবে।
মতামত গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রক্রিয়াটি খুব সহজ। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ অনেক অগ্রসর। একটা গুগল ফরমের মাধ্যমেই এই মতামত সংগ্রহ করা যেত পারে।
অধ্যাপক ড. মো. আবদুস সালাম
পরীক্ষার বিষয়ে এত দ্রুত সিদ্ধান্ত প্রকাশের কোনো প্রয়োজন সেভাবে দেখেন না উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম বলেন, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছিল। সিদ্ধান্তহীনতার মধ্যে থাকলেও আমি বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক কাজটি চলছিল। তারা প্রস্তুতি নিচ্ছিল, চর্চার মধ্যে ছিল। এটি একটি চমৎকার বিষয়। সিদ্ধান্তটি যদি এমন হতো যে, আমরা পরে জানাব, তবে তারা আরও অধিক সময় একাডেমিক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত থাকতো এবং অভিভাবকরাও তাদের গাইড করতেন, সংযুক্ত রাখতেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে পরীক্ষার্থীদের ওপর মানসিকভাবে একটা প্রভাব পড়বে। তাদের মনস্তাত্ত্বিক কিছু ক্ষতি হবে, ফলাফলগতভাবেও কিছু ক্ষতি হবে।
এইচএসসি পরীক্ষা উচ্চশিক্ষার জন্য মূল্যায়ন। তাই এটির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল আসলে এসএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষার ফল সমন্বয় করে প্রকাশ করার যৌক্তিকতা অ্যাসেসমেন্টের তত্ত্ব অনুযায়ী যায় না এবং সেটি হয় না। কারণ বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন; পরিস্থিতিও সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমাদের শিক্ষার্থীরা কিন্তু এ বছরও মার্চ মাস পর্যন্ত নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তারা প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছে, টেস্ট-প্রিটেস্ট পরীক্ষাও অংশগ্রহণ করেছে। সুতরাং প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ওয়েটেজ অ্যাড করার কোনো উপায় এখানে থাকছে না। আবার বিয়ষবস্তুগত কোনো মেলবন্ধনও কিন্তু নেই। কেননা জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার বিষয়বস্তু এক নয়। আর এইচএসসি পরীক্ষা উচ্চশিক্ষার জন্য মূল্যায়ন। সেহেতু এখনকার বিষয়গুলোর ওপর মূল্যায়ন করা গেলেই ভালো হতো। আর এমন অনেকেই আছে, যারা পূর্বে ভালো করেছে এখন খারাপ করতে পারে বা পূর্বে খারাপ করেছে এখন ভালো করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এই অধ্যাপক আরও বলেন, এই সমস্ত বিষয় বিবেচনা করে যেটা করার ছিল, হয়তো বিকল্প অনেকগুলো সম্ভাবনার, ভাবনার সুযোগ আছে। একটু নমনীয় হয়েও এই পরীক্ষাগুলো আয়োজন করা যায় কি না, সেটাও বিবেচনায় রাখা যেত। যেমন ভাষাভিত্তিক বিষয়গুলোর জন্য একটা পরীক্ষা, সায়েন্স, আর্টস বা কমার্সের জন্য একটা করে আলাদা আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত। অন্তত ৩০০ বা ৪০০ নম্বরের মধ্যে যদি নিয়ে আসা যেত সবগুলো ক্যাটাগরিকে, তাহলে এই পরিস্থিতিতে তারা (শিক্ষার্থীরা) বিষয়বস্তুগত প্রস্তুতিটি প্রকাশ করার সুযোগ পেত। এখন শিক্ষার্থী অভিভাবক সবাই একটা দোদুল্যমান অবস্থার মধ্যে থাকবেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি না, যদি শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা সেটি গ্রহণ করতে পারেন।
এদিকে ডিসেম্বরে ফল প্রকাশ করলেই যে মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া যাবে, এখনও তা পরিষ্কার নয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আরেকটি দিক আমি যেটা মনে করি, সেটি হলো আরেকটু অপেক্ষা করে বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কেননা আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রস্তুত নয়; ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধরেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বুয়েট। ধারণা করা হচ্ছে শীতকালে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভ আসতে পারে। তো এই পরিস্থিতি যদি বিরাজমান থাকে তাহলে তো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে না। সুতরাং এইচএসসির ফলাফল ডিসেম্বরে প্রকাশ করলেই যে আমরা মার্চ মাসে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দিতে পারবো, ব্যাপারটি তেমন নয়, আমি অন্তত তেমনটি দেখছি না।
সার্বিক বিষয় বিবেচনায় একটু সময় নিয়ে আরও বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার সুযোগ এখনও রয়েছে বলে মনে করেন অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২০
এইচএমএস/এমজেএফ