জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি): জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক ভ্যানচালককে মারধর ও মাদকের মামলা দেওয়ার হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (১৮ অক্টোবর) ভুক্তভোগী ভ্যানচালক নাহিদ হক বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।
ভ্যানচালক নাহিদ বলেন, শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ক্যম্পাসে রিকশা চালানোর সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন আমাকে চৌরঙ্গী মোড় থেকে আটক করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্ট্রোল রুমে নিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকেন। প্রায় চার ঘণ্টা সেখানে আমাকে আটকে রাখেন। মারধরের ঘটনা বাইরে বলবো না এ শর্তে তিনি আমাকে ছেড়ে দেন। এমনকি মারধরের ঘটনা নিয়ে মুখ খুললে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।
ক্যাম্পাসে রিকশা ও ভ্যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভ্যান নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের কারণ জানতে চাইলে নাহিদ বলেন, শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা মরিয়ম লিজা ফোন করে প্রান্তিকে যেতে বলেন। সেখান থেকে তার বৃদ্ধ বাবা ও বোনকে কোয়ার্টারে পৌঁছানোর জন্যই আমি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করি।
এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা মরিয়ম লিজা বলেন, ক্যাম্পাসের ছাত্রী হলগুলোর গেটের সামনে সাঁটানো পোস্টার থেকে আমি ভ্যানচালক নাহিদের ফোন নম্বর সংগ্রহ করি। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি থেকে আমার বাবা আসেন। বাবার অসুস্থতার কারণে আমি ভ্যানের জন্য নাহিদ হককে ফোন করি। ফোনে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি যে, তার কোনো সমস্যা হবে কি না। তিনি বলেছিলেন আমি নিয়মিতই ক্যাম্পাসে আসি।
তিনি বলেন, এ ঘটনাটি আমার জন্য অত্যন্ত দুঃখের। আমার জন্য একজন নিরীহ ভ্যানচালককে মারধরের শিকার হতে হয়েছে। আমি ইতোমধ্যে ওই ভ্যানচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া চেষ্টা করবো। এছাড়াও আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। এ ঘটনার যেন সুষ্ঠু বিচার হয়।
মারধরের ঘটনা অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহিন বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় অবৈধভাবে ক্যাম্পাসে ভ্যান চালানোর কারণে নাহিদকে আটক করা হয়েছিল। পরে রাতেই তাকে ভ্যানসহ ছেড়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা কানিজ বাংলানিউজকে বলেন, সুদীপ্ত শাহীনের নামে একাধিক অভিযোগ ইতোমধ্যে আমাদের কাছে এসেছে। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নূরুল আলমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট জমা দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। আর নাহিদের মারধরের বিষয়টি আমি শুনেছি। সোমবার (১৯ অক্টোবর) নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও অন্যান্যদের সঙ্গে কথা বলবো। অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
সুদীপ্ত শাহীনের বিরুদ্ধে তদন্তকারীর প্রধান উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. নূরুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, সুদীপ্ত শাহীন বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর তদন্ত শেষ হয়েছে। শুধু একজন আইন কর্মকর্তাকে দিয়ে অভিযোগগুলো লেখার কাজ বাকি আছে। আমরা দ্রুতই তদন্তের রিপোর্ট জমা দেবো।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০২০
আরআইএস