ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

ফুলেল শুভেচ্ছায় খুবি উপাচার্যের বিদায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
ফুলেল শুভেচ্ছায় খুবি উপাচার্যের বিদায় খুবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান ক্যাম্পাস ত্যাগ করছেন। ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান ১০ বছর ২ মাস একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে নেতৃত্ব দিয়ে সময় কাটিয়ে সাফল্যের স্বীকৃতি নিয়ে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা ১৫মিনিটে শত শত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর উপস্থিতিতে এক আবেগঘন পরিবেশে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

 

এর আগে সকাল থেকেই তিনি শেষ কর্মদিবসে অনুষ্ঠান-সভায় যোগদান ও উদ্বোধন প্রক্রিয়ায় ব্যস্ততম সময় অতিবাহিত করেন। তার বিদায়কালে অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিকেল তিনটার আগেই একে একে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ শুভানুধ্যায়ীরা তার আবাসিক ভবনের দিকে যেতে থাকেন।

তিনটার আগেই বাসভবন ও বাইরে সমাবশে ঘটে কয়েকশ মানুষের। অপেক্ষায় থাকেন তারা। বিকেল ২টা ৫৫মিনিটে তিনি বাসভবন থেকে বেরোতেই তাতে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। বসাভবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটক পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী তাকে বিদায়ী সালাম ও শুভেচ্ছা জানান।

বিকেল ৩টা ২মিনিটে তিনি প্রধান ফটকে পা রেখেই তার অসীম শ্রদ্ধার শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জনের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেন। এ সময় তিনি আবেগে, শ্রদ্ধায় কান্নায় ভেঙে পড়েন। একই সময় একের পর এক শিক্ষক, কর্মকতা-কর্মচারী উপাচার্যকে জড়িয়ে ধরে, হাত ধরে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান।

এসময় উপস্থিত সাংবাদিকরা তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন এ দিনটি আমার জীবনের স্মরণীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থী আমাকে বিদায় জানাতে এসেছেন এটা অভূতপূর্ব। খুবি যেনো এ ধারা অব্যাহত থাকে এবং দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে চলতে পারলে এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্ভাবনার পথে, সাফল্যের পথে বহুদূর এগিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান, বিভাগীয় প্রধান উপাচার্যের গাড়ির সঙ্গে বিশাল গাড়িবহরের যাত্রায় অংশ নেন।

খুবির ইতিহাসে কোনো উপাচার্যের বিদায়কালে সুখকর অভূত দৃশ্যের আবির্ভাব ঘটেনি। তিনি এর আগের মেয়াদেও ফুলেল শুভেচ্ছা নিয়ে বিদায় নেন। তবে খুবির উপাচার্য প্রফেসর ড, মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামানের উপাচার্যের এবারের বিদায়দৃশ্য দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রেকর্ড করলো।

সকাল ৯টায় তিনি নগরীর বয়রাস্থ খুবির চারুকলা ইনস্টিটিউটের জায়গায় ১১তলা বিশিষ্ট শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী আবাসিক ভবনের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। সকাল ১০টায় খুবি সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন। এরপর সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে একাডেমিক বিষয় নিয়ে শেষবারের মতো মতবিনিময় করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে খুবি প্রকাশিত ‘শতবর্ষে বঙ্গবন্ধু’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন। পরে তিনি কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে জিনোম ল্যাব উদ্বোধন করেন। দুপুর থেকেই তাকে ফুল দিয়ে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের ও বাইরের বিভিন্ন ব্যক্তি, সংগঠন, ডিন, ডিসিপ্লিনসহ বিভিন্ন মহল তার দপ্তরে আসেন।

শেষ কর্মদিবসে এসব কর্মসূচিতে উপাচার্য বলেন, আমি আপনাদের কাছে আপনজন হয়ে থাকতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলে গেলেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যাহত উন্নয়ন, শিক্ষা ও গবেষণার সাফল্য তাকে যেনো আনন্দ দেয় তিনি সে প্রত্যাশা করেন। তিনি যেনো দূর থেকেও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও উজ্জ্বল ভাবমূর্তি দেখতে পান।

তিনি বলেন, খুবি আমার কর্মকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, গবেষণা, গুণগত মানোন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও অবকাঠামোগত প্রসারেও আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। আমি দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার চেষ্টা করেছি। তার এই দীর্ঘ সময়ের কার্যক্রমের সংশ্লিষ্টতায় কেউ যদি কোনো কষ্ট পেয়ে থাকেন, তিনি তার জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত ডিন, ডিসিপ্লিন প্রধান ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এবং স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনকালে তার কর্মমেয়াদের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিক তুলে ধরে বক্তৃতা করেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরা, ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ, সমাজ বিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর মোছা. তাছলিমা খাতুন, শিক্ষা স্কুলের ডিন প্রফেসর এ কে ফজলুল হক, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুলের ডিন প্রফেসর এস এম জাহিদুর রহমান, জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর খান গোলাম কুদ্দুস, পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. উত্তম কুমার মজুমদার, এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. সারওয়ার জাহান, স্থাপত্য ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. খন্দকার মাহফুজ উদ দারাইন, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. আনিসুর রহমান, এফএমআরটি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. আব্দুর রউফ, গণিত ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. সর্দার ফিরোজ আহমেদ, অর্থনীতি ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. নাসিফ আহসান, রসায়ন ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. মো. রেজাউল হক, প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিন প্রধান ড. নিহার রঞ্জন সিংহ, ইতিহাস ও সত্যতা ডিসিপ্লিন প্রধান ড. মো. দুলাল হোসেন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন প্রধান মামুনুর রশীদ, খানজাহান আলী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মো. আব্দুল জব্বার, আইসিটি সেলের পরিচালক প্রফেসর ড. কামরুল হাসান তালুকদার।

বক্তারা উপাচার্যের নেতৃত্ব, সবাইকে নিয়ে কাজ করার মানসিকতা, তার মানবিকতা, সততা, নিষ্ঠা, সৌজন্যতা তুলে ধরে তার ভবিষ্যৎ জীবনের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০২১
এমআরএম/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।