ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

অনলাইনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় ক্লাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
অনলাইনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় ক্লাস

খাগড়াছড়ি: পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান তিনটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় শিক্ষা প্রচলনের জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত বই প্রকাশ করেছে। এখন চ্যালেঞ্জ হলো এসব ভাষায় শিক্ষা দেওয়া।

২০২০ সালে করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে এসব ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খাগড়াছড়ির কিছু তরুণ শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষক ও এনজিও কর্মী উদ্যোগ নেন অনলাইনে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার। সেই উদ্যোগের ফসল হিসেবে ‘এমএলই অন লাইন স্কুল’ শুরু হয়েছে। মাল্টি ল্যাংগুয়েল এডুকেশন (এমএলই) ইতোমধ্যে শতাধিক ক্লাস প্রচার করেছে।  

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের কার্যালয়ের দুটি কক্ষের মধ্যে একটিতে চলে প্রশিক্ষণ আর অন্য কক্ষে প্রশাসনিক কার্যালয়। করোনায় প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বন্ধ রয়েছে। বন্ধের সময়ে প্রশিক্ষণ কক্ষে এখন ‘এমএলই অনলাইন স্কুল’ এর রেকডিং কার্যক্রম চলছে। রেকডিং করা এ ক্লাসগুলো অনলাইনে প্রচার করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষায় ১১৮টি ক্লাস প্রচার করা হয়েছে। প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির পাঠ্যসূচি অনুযায়ী তা করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ির ঠাকুরছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অনক ত্রিপুরা ও খাগড়াপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবলী ত্রিপুরা বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইনে ক্লাস নেওয়া সহজ কাজ নয়। তারপর নিজের ভাষার জন্য কাজ করতে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। পরিবারের সঙ্গে যে ভাষায় কথা বলি সেই ভাষায় শিশুদের পড়াচ্ছি।

এমএলই অনলাইন স্কুল পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব প্রশিক্ষক রিন্টু বিকাশ চাকমা বলেন, করোনাকালীন শিশুদের মূল বইগুলো নিয়ে অনলাইনে পড়ানো হলেও আমাদের মাতৃভাষার বইগুলো পড়ানো হচ্ছে না। তাই আমরা ভাবলাম শিশুদের হাতে যেহেতু সরকার মাতৃভাষার বই তুলে দিয়েছে তাহলে আমরা নিজেরা উদ্যোগ নিলে ঘরে বসেই তারা  পড়তে পারবে। সেই চিন্তা থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া।
এ কার্যাক্রমের সঙ্গে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষার ২৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ ৩৫ জন সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন। সবার নিজস্ব উদ্যোগে কোনো সম্মানী ছাড়াই এ ক্লাসের কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। শিশুদের অনলাইন ক্লাসের প্রতি আকৃষ্ট করতে ক্লাস নেওয়ার সময় ‘পাপেট’ প্রদর্শন করা হয়েছে। তিন ভাষার জন্য চারটি পাপেটের চরিত্র রাখা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস ১০ থেকে ১৫ মিনিট। এ পর্যন্ত প্রচারিত ক্লাস দেখা হয়েছে ১১ হাজার বার। আর অন্যান্য ক্লাসগুলো দেখা হয়েছে চার হাজার বার।

এমএলই অনলাইন স্কুল পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, করোনাকালে সব স্কুল বন্ধ ছিল। এজন্য চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষার শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা অনলাইনে ক্লাস চালু করেছি। এটি মূলত খাগড়াছড়িতে শুরু করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে রাঙামাটি, বান্দরবানসহ দেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা অনলাইনে আমাদের ক্লাসগুলো দেখতে পারবে।

স্থানীয়ভাবে সক্ষম প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মতো করে অনলাইনে ক্লাস নিতেও শুরু করেছে। এসব উদ্যোগ দেখে পাহাড়ের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার তিনটি ভাষার ক্লাস অনলাইনে প্রচার করা হয়েছে।

উদ্যোক্তারা জানান, প্রচারিত ক্লাসগুলো দেখে এখন অন্যরাও নিজেদের ভাষায় ক্লাস নিতে পারবে। এক সময় দেশের সব ক্ষুদ্র জাতিসত্তাদের ভাষার শিক্ষা তারা প্রচারের উদ্যোগ নিতে পারবে। তবে এজন্য সরকারের সহযোগিতা দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১
এডি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।