ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রাথমিক-মাধ্যমিকের বহু শিক্ষার্থী শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২১
প্রাথমিক-মাধ্যমিকের বহু শিক্ষার্থী শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে ...

ঢাকা: ২০২০ সালের মার্চ থেকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে। যেসব শিশুরা সমাজের দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত, তাদের অবস্থা আরও সংকটাপন্ন।

অনেকদিন ধরে বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষায় ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া, মানসিক এবং অর্থনৈতিক সমস্যাসহ দীর্ঘমেয়াদী নানা ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে।  
 
কোভিড-১৯ এর কারণে দেশে দারিদ্র্যের রূপ কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা জানতে পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশান রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি) যৌথভাবে পুরো দেশজুড়ে তিনধাপে একটি টেলিফোন জরিপ করে।  

২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত এটি করা হয়।  

এই গবেষণার ৩য় ধাপের দ্বিতীয় অংশ হলো ‘কোভিড ইমপ্যাক্ট অন এডুকেশন লাইফ অব চিলড্রেন। ’
 
সোমবার (১০ মে) গবেষণার ফলাফল যৌথভাবে উপস্থাপন করেন পিপিআরসির চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন।  

ফলাফলে দেখা গেছে, শিক্ষণ ঘাটতির মুখে রয়েছে প্রাথমিক স্তরের ১৯% এবং মাধ্যমিক স্তরের ২৫% শিক্ষার্থী।  

৩য় ধাপের ৬ হাজার ৯৯টি পরিবারের মধ্যে দ্বিতীয় অংশের জরিপে ৪ হাজার ৯৪০টি পরিবারের স্কুলগামী শিশুদের ওপরে গবেষণা করা হয়।  

প্রতিটি ক্ষেত্রে ৩টি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে- স্কুলের ধরন (প্রাথমিক/মাধ্যমিক), স্থান (শহর/গ্রাম) এবং লিঙ্গ (পুরুষ/নারী)।

হতদরিদ্র, মাঝারি দরিদ্র, ঝুঁকিপুর্ণ দরিদ্র এবং দরিদ্র নয় এমন পরিবারগুলোর ওপরে এই গবেষণা করা হয়।

এমনকি মহামারি শুরুর আগে মাধ্যমিক স্কুলগামী শিশুদের একটি বড় অংশ (২১%) ও প্রাথমিক স্কুলগামী শিশুদের একটি বড় অংশ (১৪%) ঝরে যেত। গ্রামের চেয়ে শহরের বস্তিতে থাকা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশুদের মাঝে ঝরে পড়ার হার বেশি। যারা স্কুলে ভর্তি হয়েছিল, মহামারিতে বন্ধ থাকার কারণে তাদের সমস্ত রুটিন এলোমেলো হয়ে গেছে। যদিও অনেকেই পড়াশোনা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে তবুও অধিকাংশ শিক্ষার্থী ছয়টি উপায়ে তাদের পড়াশোনা চালিয়েছে। এগুলো হলো তদারকিবিহীন নিজস্ব পড়াশোনা, পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় পড়াশোনা, অনলাইনে বা টিভির মাধ্যমে দূরবর্তী শিক্ষণ, কোচিং/প্রাইভেট এবং স্কুল থেকে মাদরাসায় ভর্তি। তবে এসব ক্ষেত্রেও অনেক অনিয়ম ছিল।
 
কোভিড-১৯ এর কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিশুদের মাঝে সৃষ্ট শিক্ষণ ঘাটতি পর্যবেক্ষণে এই সমীক্ষাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো তৈরি করেছে।  

দেখা গেছে, এই ঝুঁকিটি সৃষ্টি হয়েছে পড়াশোনা না করা এবং সঠিক পদ্ধতিতে পড়াশোনা না করার কারণে যেমন তদারকি ছাড়া নিজে নিজেই পড়া ও অনিয়মিত পড়া। প্রাথমিক স্তরের কমপক্ষে ১৯% এবং মাধ্যমিকের ২৫% শিক্ষার্থী শিক্ষণ ঘাটতিজনিত ঝুঁকিতে রয়েছে। সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এর ফলে ভবিষ্যতে শেখার ক্ষমতা কমে যাবে এবং ঝরে পড়ার হার বাড়বে।  

শহরের শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকি বেশি বলে পরিলক্ষিত হয়েছে- নারীদের ২৬% এবং পুরুষদের ৩০% রয়েছে এই ঝুঁকিতে।  

দরিদ্র শ্রেণির মানুষদের মাঝে যারা অতি দরিদ্র, সেইসব পরিবারের মাধ্যমিক স্কুলগামী ৩৩% পুরুষ শিক্ষার্থীর কোভিড-সৃষ্ট অর্থনৈতিক ধাক্কায় স্কুল ছেড়ে দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ফলাফলে আরও দেখা গেছে, দূরবর্তী শিক্ষণের জন্য যে সুবিধা থাকা দরকার তা আছে বা ব্যবহার করছে ১০% শিক্ষার্থী। ফলে সরকারি ও বেসরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে এই বন্ধে লেখাপড়া শেখার হার খুব কম। অবশ্য যারা দরিদ্র নয় এবং শহরের বস্তিতে থাকে মাধ্যমিক পর্যায়ের সেসব শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার একটু বেশি। একই সঙ্গে কোচিং-এ বা প্রাইভেট টিউশনে যাওয়ার প্রবণতা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মাঝেই বেশি (৬১%) বিশেষত যারা দরিদ্র নয়, তাদের মাঝে এই হার বেশি (৭৪%)। আবার শহরের বস্তি এলাকায় খরচ বেশি হওয়ার কারণে কোচিংয়ে যুক্ত হওয়ার হার কম। পড়াশোনায় যুক্ত থাকার আরেকটি পদ্ধতি হলো পিতামাতা বা ভাইবোনের সহায়তায় পড়া। যদিও প্রাথমিক পর্যায়ের চেয়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে এই সহায়তাপ্রাপ্তির হার কম। মাদরাসায় বদলি হওয়ার প্রবণতা বেড়ে আগের চেয়ে চার গুণ হয়েছে এবং মাধ্যমিকের চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের জন্য মাদরাসায় ভর্তি হওয়ার খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ।

যদিও ৯৫% অভিভাবক তাদের সন্তানকে স্কুলে পুনরায় পাঠাতে আগ্রহী তবুও অর্থনৈতিক অবস্থাটি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের মার্চ অবদি শিক্ষাখরচ বেড়েছে ১২ গুণ। ফলে শিক্ষার সুযোগপ্রাপ্তিতে সংকট তৈরি হয়েছে। স্কুলগামী ছেলেশিশুদের ৮% এবং মেয়েশিশুদের ৩% কোনো না কোনো উপার্জন প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে শহরের তুলনায় মানুষের আয় পুনরুদ্ধারের ও কাজের ভালো সুযোগ রয়েছে সেখানেও এই হার বেশি।
 
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, মহামারিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা কেমন। শহরে বসবাসরত ১০ থেকে ২০ বছর বয়সীরা (১৫.৭%) গ্রামের  (৮.৪%) তুলনায় দ্বিগুণ মানসিক চাপে রয়েছে।  

অভিভাবকদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এই মানসিক চাপের লক্ষণগুলো হলো অধৈর্য্য ভাব প্রকাশ, রাগ বা উগ্রভাব এবং বাইরে যেতে ভয় পাওয়া। ঘরের বাইরে যেতে ভয় পাওয়ার ব্যাপারটা আবার গ্রামের চেয়ে শহরের তরুণদের মাঝে বেশি।
 
এই জরিপে পিতামাতার ব্যবহার ও সম্পৃক্ততাও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। অধিকাংশ অভিভাবক শিক্ষার ঘাটতি (৪৮%) এবং অনুৎসাহ (৫৯%) নিয়ে চিন্তিত। তারা (৪৬%) শিক্ষার ব্যয়ভার নিয়েও শঙ্কিত। করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বরং তারা (১৪%) কম চিন্তিত। যদিও অর্ধেক অভিভাবক বিলম্বিত/ স্নাতক পাস সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন, প্রায় ৪৪% স্থগিত পরীক্ষা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন ছিলেন এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাস হলে ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন ৩১% অভিভাবক।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৬ ঘণ্টা, মে ১০, ২০২১
এসই/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।