ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

সিরাজগঞ্জ: উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে নীতিমালা অনুযায়ী কোটা সংরক্ষণ ছাড়াই প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে ৬৬টি রিট আবেদন বিচারাধীন রয়েছে।

এর মধ্যে সিরাজগঞ্জের সাথী খাতুনসহ ১১ কোটা বঞ্চিত প্রার্থী বাদী হয়ে একটি রিট আবেদন করেছেন। এসব রিটের নিষ্পত্তি না হওয়া স্বত্বেও সারাদেশে একযোগে ১৮ হাজারেরও বেশি শিক্ষক নিয়োগ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।  

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালের নিয়োগ বিধিমালা মোতাবেক ২০১৮ সালে সারাদেশে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই বিধিমালার ৭ এর (ক) ধারায় বলা আছে মহিলা কোটা শতকরা ৬০ ভাগ, পোষ্য কোটা শতকরা ২০ ভাগ ও পুরুষ কোটা শতকরা ২০ ভাগ। এ অবস্থায় সারাদেশে প্রায় ২৪ লাখ প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এতে সারাদেশে প্রায় ৫৫ হাজার ২৯৫ জন এবং সিরাজগঞ্জে ১৯৯৮ জন পাস করেন। এদের মধ্যে সারাদেশে ১৮ হাজার ২৪৭ জন এবং সিরাজগঞ্জে ৬৯৫ জনকে চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়।

এদিকে চূড়ান্ত ফলাফলে বিধিমালা অনুযায়ী কোটা সংরক্ষণ না করায় নিয়োগ বঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের সাথী খাতুনসহ ১১ জন নিয়োগ প্রার্থী ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন (৯৯৮/২০২০) দায়ের করেন। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় আরও ৬৫টি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। এসব মামলায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারগণ বিবাদী করা হয়।  

রিটের শুনানি শেষে ২০২০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মাহমুদ হাসান তালুকদারের যৌথ বেঞ্চ নিয়োগ পরীক্ষার ঘোষিত ফলাফলকে কেন বেআইনী ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেন এবং ৬ মাসের স্থগিতের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) যুগ্ন সচিব খান মো. নুরুল আমিন স্বাক্ষরিত একটি পত্রে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের যোগদান, পদায়ন ও ওরিয়েন্টেশন স্থগিতের আদেশ দেওয়া হয়।  

রিট আবেদনকারী সাথী খাতুন ও সাহেদা খাতুন বাংলানিউজকে জানান, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকা স্বত্বেও ২০২০ সালের ৮ মার্চ চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত সকল প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিরাজগঞ্জ জেলায় ৬৯৫ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ৩৫৭ ও মহিলা প্রার্থী ৩৩৮ জন। বিধিমালা অনুযায়ী শতকরা ৬০ জন মহিলা ও শতকরা ২০ জন পুরুষ প্রার্থী নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও পুরুষ শতকরা ৫১.৩৬ ও মহিলা শতকরা ৪৮.৬৪ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ নীতিমালা বর্হিভূত। কামারখন্দ উপজেলার পোষ্য প্রার্থী ৩ জন উত্তীর্ণ হন। এর মধ্যে দুই জন মহিলা ও একজন পুরুষ। মহিলা দুজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মেয়ে। তাদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একজন পুরুষ প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখানে নিয়োগপ্রাপ্ত পুরুষ প্রার্থীও পোষ্য কোটার শর্ত পূরণ করে নাই।  

রুপা খাতুন, নাছিমা খাতুন, কানিজ সূবর্ণা খাতুন, সাবিনা ইয়াসমিন, তানজিনা খাতুন, মনিজা খাতুন, শায়লা নাহার ও জান্নাতুল ফেরদৌসী সুমীসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে দুই মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এতে করে কোটা বঞ্চিত প্রার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছে। অনেকেরই চাকরির বয়সসীমা শেষ হয়েছে। এসব প্রার্থীদের ভবিষ্যত ধংসের মুখে পড়েছে।  

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ উল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিক নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সন্তোষজনক না হওয়ায় তা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন ১১ জন প্রার্থী। শুনানি শেষে বিচারক রুল জারি করে ফলাফল ৬ মাসের জন্য স্থগিতের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় সরকার উচ্চ আদালতের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনে সিভিল মিস পিটিশন (সিএমপি, যার নম্বর ২৬৮/২০২০) দায়ের করেন। পিটিশনের শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ উচ্চ আদালতের আদেশের উপর ৮ সপ্তাহের উপর স্থগিতাদেশ দেন এবং ওই সময়ের মধ্যে রেগুলার আপিল দায়ের করতে বলা হয়। এরপর সরকার পক্ষ রেগুলার সিভিল পিটিশন (১০৭১/২০২০) দায়ের করেন যা এখনো বিচারাধীন রয়েছে।  

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আমিনুল ইসলাম মণ্ডল বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অধিদপ্তরের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দিয়েছি। নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা যথারীতি চাকরি করছেন। নীতিমালা মানা হয়েছে কি না সেটা অধিদপ্তর জানে।  

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়োগ শাখার সহকারী পরিচালক সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আতিক এস.বি সাত্তার বাংলানিউজকে বলেন, বিধিমালা মোতাবেকই শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিছু নিয়োগ প্রার্থীর রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ৬ মাসের স্থগিতাদেশ দিলে আমরা আপিল করি। অ্যাপিলেট ডিভিশন হাইকোর্টের আদেশের উপর ৮ সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দেন। আমরা ওই সময়ের মধ্যে ম্যাক্সিমাম কোটা মেইনটেইন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি এবং অপারেশন) মণীষ চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালে আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তাই এ বিষয়টি আমার ভাল জানা নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৮ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।