ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) র্যাংকিং নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। পত্র-পত্রিকায় থেকে শুরু করে সভা-সেমিনার, সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্র র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকার কারণ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে।
সর্বশেষ ঘোষিত বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ের (কিউএস) তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল ৮০০-১০০০ এর মধ্য। প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংখ্যার অনুপাত, ফ্যাকাল্টি মেম্বারদের সাইটেশন, নিয়োগ কর্তার খ্যাতি, আন্তর্জাতিক অনুষদের অনুপাত ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনুপাতসহ ছয়টি দিক বিবেচনায় নিয়ে এ র্যাংকিং প্রস্তুত করা হয়।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো এ ছয়টি তথ্যই তাদের ওয়েবসাইটগুলোতে দারুণভাবে সন্নিবেশিত করেছে। সে তুলনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল পিছিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক একাডেমিক কাজ হলেও সেটি র্যাংকিং প্রণয়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরবরাহ করতে না পারায় র্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অধিবেশনে উপাচার্যের অভিভাষণেও র্যাংকিং নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বলেছেন, র্যাংকিং নির্ধারণের সূচকসমূহের বিশেষ করে মৌলিক গবেষণা এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাতের উন্নয়ন না ঘটলে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে আমাদের অবস্থান এগুনো তো দূরের কথা, পেছানো অস্বাভাবিক নয়। আপনাদের ভাবনার জন্য একটি তথ্য উপস্থাপন করি। কিউএস ওয়ার্ল্ড ব্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮০০-১০০০ এ। কিন্তু বিষয়ভিত্তিক Business and Management Studies ক্যাটাগরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ৩৫১-৪০০।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা বাস্তবতা বিবেচনায় যৌক্তিকভাবে নির্ধারিত এটা বলা কঠিন। শিক্ষার সামগ্রিক পরিবেশ ও গুণগতমানের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। তাই বিভাগ/ইনস্টিটিউটসমূহের সক্ষমতা এবং দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের চাহিদা সর্বোপরি Institutional Quality Assurance Cell (IQAC)-এর সূচক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি সংখ্যা পুনর্নির্ধারণের জন্য ইতোমধ্যে একাডেমিক কাউন্সিল সম্মানিত ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও ইনস্টিটিউটের পরিচালকদের নির্দেশনা দিয়েছে। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তবে চ্যালেঞ্জিং।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ র্যাংকিংয়ে অগ্রগতির জন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অফিস অব দি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স’ নামে একটি নতুন অফিস খোলা হয়েছে। এর প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদকে। এছাড়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংক্রান্ত ডেস্ককেও গতিশীল করা হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের তালিকা তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোকে আগামী ৮ আগস্টের মধ্যে তালিকা জমা দিতে বলা হয়।
এতে বলা হয়, ইংরেজি ভাষায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের তাদের নিজেদের নাম (Name with Title (if any), কর্মস্থলে তাদের স্তর বা পদবি (Designation), কোন বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউটে কর্মরত রয়েছেন সেটির নাম-ঠিকানা (Name and Address of University/Institution working) এবং ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ই-মেইল বা ফোন নম্বর (Email & phone Number of the person) সংযুক্ত করে এক্সেল ফরম্যাটে registrar@du.ac.bd ই-মেইল ঠিকানায় পাঠাতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে নেওয়া মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে দ্রুতই উন্নতি ঘটবে বলে মনে করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যানে সার্বিক বিষয় লক্ষ্য রেখে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। গবেষণা ও উদ্ভাবনে অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০২১
এসকেবি/আরবি