ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিক্ষা

শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে পাঠশালায় ফিরেছে প্রাণ

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
শিক্ষার্থীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসে পাঠশালায় ফিরেছে প্রাণ

ফেনী: আজকের সকালটা করোনাকালীন এ দীর্ঘ অন্য সময়ের সকালগুলোর মত নয়। যে দৃশ্যটি দীর্ঘদিন দেখা যায়নি, তা আজ আবার দেখা মিলেছে।

শরতের স্নিগ্ধ সকালে কাঁধে স্কুলব্যাগ নিয়ে শিশুদের ছোটাছুটির এমন দৃশ্য পথচারী কারোর দৃষ্টি এড়ায়নি। নিজের চেনা-পরিচিত প্রাণের পাঠশালায় দীর্ঘদিন পরে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। এ যেন পরম আনন্দের দিন তাদের কাছে। মুখের উচ্ছ্বাস দেখেই তা আঁচ করা যায়।

রোববার (১২ সেস্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও শিশু নিকেতন কালেক্টরেট স্কুল, মডেল স্কুল ও সেন্ট্রাল হাইস্কুল ঘুরে দেখা যায় আনন্দ আর উচ্ছ্বাসের সঙ্গে স্কুলে প্রবেশ করছে শিশুরা। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে হবে এবং শ্রেণি কক্ষে বসবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রসঙ্গে ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত নাথ জানান, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাসে ফেরাতে সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে শিক্ষার্থীদের আসনে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখা হয়েছে।

অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে এ প্রধান শিক্ষক বলেন, কোনো শিক্ষার্থীর ঘরে কারও করোনা উপসর্গ বা সংক্রমিত কেউ থাকলে শিক্ষার্থীকে স্কুলে না পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। এছাড়া সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অভিভাবকদের ঝুম মিটিংয়ে মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্লাহ জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হচ্ছে। শ্রেণি কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুরুতে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন ক্লাসে যাবে। দু’দিন যাবে পরবর্তী বছরে বসতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা। আর অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসবে একদিন করে।

ফেনী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, এখন শিক্ষা কার্যক্রম চালুর ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে করোনা সংক্রমণের নিম্নগতি ধরে রাখা। সেজন্য সরকারি নির্দেশনা যথাযথ মেনে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। আগের মতো স্কুল চালানো যাবে না।

স্কুলে ফেরার বিষয়ে কথা হয় ফেনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদিবা ইসলামের সঙ্গে। নিজের অনুভূতি জানিয়ে সে জানায়, দীর্ঘদিন পর বিদ্যালয়ে ফেরাটা অনেক আনন্দের। এর আগে টানা এতদিন কখনও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি। বন্ধুদের ফিরে পাব। শিক্ষদের ফিরে পাব এ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

এদিকে, জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দেওয়া তথ্যমতে, করোনাকালে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে গেছে। ঝোঁপঝাড়ে ছেয়ে গেছে শ্রেণিকক্ষ। আবার অনেক প্রতিষ্ঠানে সীমানা প্রাচীর না থাকায় পরিণত হয়েছে মাদকসহ বখাটেদের আড্ডার স্থানে। তবে সরকারি নির্দেশনা মেনে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের উপযোগী করা হয়েছে বলে জানান শিক্ষকরা।

এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্লাহ বলেন, জেলায় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের জন্য সরকারি বরাদ্দ করা আলাদা তহবিল রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামোগত কোনো ধরনের সংস্কারের প্রয়োজন হলে ওই খাত থেকে অর্থ নিয়ে কাজ করতে পারবে।

অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত প্রসঙ্গে ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সাহাব উদ্দিন বলেন, দীর্ঘসময় প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ভবনের নিচতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেকগুলো বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি অকেজো হয়ে গেছে। তারপরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করেছি। তারা স্কুলে ফিরছে। আশা করছি, আস্তে আস্তে সব ঠিক হবে।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের স্লিপ ফান্ড থেকে খরচ করতে স্ব-স্ব উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেন তিনি।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়। এরপর ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়। এ পর্যন্ত গত ১৭ মাসে দফায় দফায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি বাড়ানো হয়। করোনা সংক্রমণ অব্যাহত থাকায় সর্বশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান সাধারণ ছুটি ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
এসএইচডি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।