ঢাকা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনার লক্ষ্যে এবার দেশসেরা প্রযুক্তিবিদদের পরামর্শ নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে একেক দেশে একেক পদ্ধতি চালু হতে পারে।
বুধবার (০৯ এপ্রিল) নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রথম তার বক্তব্যে প্রবাসীদের ভোটের অধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। এজন্য নির্বাচন কমিশনও এই প্রত্যাশা ধারণ করে। আমরা ১৭৮টি দেশে স্টাডি করে দেখেছি ১১৫ টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। সবচেয়ে অনুশ্রিত পদ্ধতি হচ্ছে দূতাবাসে, এরপর হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট, এরপর হচ্ছে অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিং। বাংলাদেশের প্রবাসীদের যে বিস্তৃতি তাতে দূতাবাসে সেটা সীমিত। এজন্য তিনটিকে শর্ট লিস্ট করেছি। পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ও প্রক্সি ভোটিং। তিনটিরই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু সুবিধাও আছে। কমিশনের কাছে বিষয়টি উত্থাপনের পর নির্বাচন, আইন, কারিগরি ও নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বুধবার (০৮ এপ্রিল) কর্মশালা করি। যেখানে ১০টি টিম তাদের প্রোজেক্ট উপস্থাপন করেছে।
এ সময় ঢাবি, বুয়েট, এমআইএসটি, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিল।
তিনি বলেন, ১০টি উপস্থাপনার মধ্যে তিনটি পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা দেখেছি। আমরা যে পদ্ধতিই অনুসরণ করি, তা বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিস্তৃতসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে করতে হবে।
এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, অনলাইন ভোট এখনো জনপ্রিয় হতে পারেনি। অনেক দেশ চার পাঁচ বছর ধরে করছে। কর্মশালার আলোচনায় উঠে আসা পদ্ধতিগুলো ফাইন টিউন করতে হবে। আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম হচ্ছে, একটা অ্যাডভাইজরি টিম গঠন করবো, গতকাল যারা বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তাদের নিয়ে। তিনটি পদ্ধতির সফলতা, দুর্বলতা পর্যালোচনা করে কী করে দুর্বলতা কাটানো যায়, সে ব্যবস্থা তারা করবেন। এরপর আমরা অংশীজনদের সঙ্গে বসবো। আমরা যাই করি না কেন, যে সময়টা আমরা পাবো তার মধ্যেই কাস্টমাইজ করতে হবে। তাই সময় না পেলে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, প্রক্সি ভোটকে আমরা বলেছি যদি সর্বোচ্চ ভোটারকে আনতে চাই তাহলে প্রক্সি একমাত্র অপশন। এখনো কমিশনের অবস্থান একই আছে। কর্মশালায় প্রক্সি ভোটের দুর্বলতা অনেকে তুলে ধরেছেন। সফলতাও তুলে ধরেছেন। অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও তাই।
এক প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল বলেন, নিবন্ধন অনলাইনে হবে। যে ধরনের ভোটই হোক না কেন অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। এখন প্রবাসী যে দেশ থেকে ভোট দিতে চান, সেই দেশে ওই পদ্ধতি কার্যকর কিনা সেটা দেখতে হবে। অনলাইন ভোটিংয়ে যেতে হলে সময় আরও বেশি লাগবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার আওতায় আনতে চাই, তাহলে কোনো না কোনো পদ্ধতি আনতে হবে, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও। পৃথিবীতে ২৫টির মতো দেশ প্রক্সি ভোট করছে। ডিজেবল, বা হসপিটালে আছে, গর্ভবতী, শিক্ষার্থী, কারাগারে যারা আছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিতরা, বিদেশে অবস্থান করছে এমন জনগণ প্রক্সি ভোট দিয়ে থাকেন। তবে কিছু কিছু দেশ সবার জন্য প্রক্সি ভোটের ব্যবস্থা করছে। ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, ইউকে সবার জন্য এই সুযোগ উন্মুক্ত রেখেছে। আর অন্যরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে রেখেছে। প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে চাইলে সব পদ্ধতিতেই সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমাদের সেই সীমাবদ্ধতা কমিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, গতকাল কমিশনের পক্ষ থেকে কর্মশালায় আমরা কোনো প্রভাবিত করিনি। আমরা চেয়েছি সবাই খোলামেলা মতামত দিই। এজন্য আমরা কর্মশালা করেছি।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, সিস্টেম ডেভেলপ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না, কতদিন সময় লাগবে। সংস্কার কমিশন পোস্টাল ও অনলাইন পদ্ধতির পরামর্শ দিয়েছে। তারা ট্রায়াল পর্যন্ত আটটা ধাপের কথা বলেছে। এখন ট্রায়াল কতদিন চলবে সেটা নাই। কাজেই এটা কারিগরি বিশেষজ্ঞরাই এটা বলতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ, অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ উপস্থিতি ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৫
ইইউডি/এসআইএস