ঢাকা: প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্ট দেশে বসেই ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা নির্ধারণে আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে দু’দিন বা তিনদিনের সংলাপের আয়োজনের কথা ভাবছে সংস্থাটি।
ইসির সূত্রগুলো বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ২৮, ২৯ ও ৩০ এপ্রিল দুই দিন বা তিনদিনের সংলাপ আয়োজনের কথা ভাবা হচ্ছে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কমিশন। ইসি সচিবালয় এরই মধ্যে অংশীজনদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। গণমাধ্যমের সম্পাদক, সুশীল সমাজ ও নিবন্ধিত দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানাবে সংস্থাটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, মতামত নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। এক্ষেত্রে চলতি মাসের একেবারে শেষের দিকে অংশীজনদের সঙ্গে বসে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে মতামত বা পরামর্শ নেওয়া হবে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে গত ৮ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, এমআইএসটি, সমাজক্যাণ মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কর্মশালার আয়োজন করে ইসি। সেখানে তিনটি পদ্ধতি নিয়ে আগতরা উপস্থাপনা দেন। এক্ষেত্রে অনলাইন ভোট, প্রক্সি ভোট ও পোস্টাল ব্যালট-এই তিন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর এমআইএসটি, ঢাবি ও বুয়েটের প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে তিনটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিগুলোও এরই মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী নেওয়াজ এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের গঠিত তিনটি কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এগুলোর ওপর এখন অংশীজনের মতামত নেওয়া হবে। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
নির্বাচন কমিশন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রটিং এজেন্সি-বায়রাসহ বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে, ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। এসব দেশকেই মাথায় রেখে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশগুলো হলো- সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এসব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছেন। এদের মধ্যে সবচেয়ে রয়েছে বেশি প্রবাসী রয়েছেন সৌদি আরবে ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন।
তবে সব দেশের প্রবাসীদের এখনই ভোট দেওয়ার ব্যবস্থায় আনতে চায় না কমিশন। তাদের যুক্তি, পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি দেশে তিনটি পদ্ধতিতে বা মিশ্র পদ্ধতি ভোট নেওয়া হবে। এরপর বড় আকারে ভোটের ব্যবস্থা করবে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, আমরা যে পদ্ধতিই অনুসরণ করি না কেন, তা বাংলাদেশের প্রবাসীদের বিস্তৃতসহ অন্যান্য বিষয় বিবেচনা সাপেক্ষে করতে হবে। যে পদ্ধতিতেই করি না কেন, প্রবাসীকে প্রথমে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য কোনো একটা পদ্ধতি নয়, বরং মিশ্র পদ্ধতি করতে হবে। কেননা, একেক এদেশের পরিস্থিতি একেক রকম। সব পদ্ধতির সফলতা ও দুর্বলতা আছে। সব পদ্ধতির জন্য মক টেস্টিং প্রয়োজন হবে। সম্ভবত সব পদ্ধতির জন্যই পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে করতে হবে। এটা অনেক দেশ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
ইইউডি/এইচএ/