ঢাকা, রবিবার, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ১০ আগস্ট ২০২৫, ১৫ সফর ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

বরিশাল-৬ আসনে বিতর্কহীন সব নির্বাচনে জিতেছিল বিএনপিই

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৫৫, আগস্ট ৯, ২০২৫
বরিশাল-৬ আসনে বিতর্কহীন সব নির্বাচনে জিতেছিল বিএনপিই (ওপরে) আবুল হোসেন খান, নজরুল ইসলাম রাজন, (নিচে) কামরুজ্জামান নান্নু, সোলায়মান সেরনিয়াবাত ও মাওলানা মাহমুদুন্নবী তালুকদার

বরিশাল: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতেই হচ্ছে এমন ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তার আগে থেকেই নির্বাচনী আবহ সৃষ্টি হয়েছে বরিশাল-৬ আসন অর্থাৎ বাকেরগঞ্জজুড়ে।

বিশেষ করে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় অনেকেরই নাম সামনে এসেছে এরই মধ্যে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরিশাল জেলার অন্য পাঁচটি আসনের মতো এ আসনেও তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।  

কোনো জোটে না গেলে এ আসনে দলের সিনিয়র নায়েবে আমির ও চরমোনাই পীরের ভাই মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমের নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। তেমনি নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো বাধা না থাকলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীও থাকবে ভোটের মাঠে।

বর্তমানে জাতীয় সংসদের ১২৪নং আসন হিসেবে পরিচিত বাকেরগঞ্জ উপজেলা, যা বরিশাল-৬ আসন হিসেবেও পরিচিত। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ আসনে একটি উপনির্বাচনসহ ১২টি নির্বাচনের মধ্যে বিএনপি ৫ বার, জাতীয় পার্টি ৪ বার ও কার্যক্রম স্থগিত হওয়া আওয়ামী লীগ ৩ বার বিজয়ী হয়েছে। যদিও ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত তিনটি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে, আর সেই হিসেব কষলে বিএনপির সাথে অন্য দুইদলের জয়ের হিসেবের ব্যবধান অনেকটাই বেশি।

প্রায় তিন লাখ ভোটারের এ আসনে সাবেক সাংসদ ও জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান এবারেও ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তার সঙ্গে মনোনয়ন যুদ্ধে থাকবেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজন। উভয় নেতাই বহু আগে থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নিজ এলাকায় জনসম্পৃক্ততামূলক নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছেন। যদিও প্রভাবশালী নেতা নজরুল ইসলাম রাজন এর আগে কখনও দলীয় মনোনয়ন চাননি, তবে দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে এবারে তার মনোনয়ন চাওয়ার প্রত্যাশার খবরের পর থেকেই স্থানীয় বিএনপিতে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বিগত ১৫-১৬ বছরে নিজ এলাকায় থেকে একাধিকবার হামলা ও একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন আবুল হোসেন খান, বহুদিন জেল খাটার পাশাপাশি বাড়ি ছাড়াও হয়েছেন একাধিকবার।

উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছেন, যিনি চূড়ান্তভাবে দলীয় মনোনয়ন পাবেন, তাকে জয়ী করতেই তারা কাজ করবেন।  

আবুল হোসেন খান ও নজরুল ইসলাম রাজন ছাড়া এ আসনে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন, তারমধ্যে অন্যতম বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শহীদ হাসান, কেন্দ্রীয় যুবদলের সদস্য ও থানা বিএনপির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান নান্নু, উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ সিকদার এবং সাবেক ছাত্রনেতা ও আমেরিকার নিউ জার্সি এস্টেট বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সোলায়মান সেরনিয়াবাত।  

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী তাদের প্রার্থী হিসেবে বরিশাল-৬ আসনে অধ্যাপক মাওলানা মাহমুদুন্নবী তালুকদারের নাম ঘোষণা করেছে, যিনি বিগত সরকারের সময় ৬টি মামলার আসামি হয়ে একাধিকবার কারাগারে গেছেন। আর ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর নাম এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

অপরদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে কোনো বাধা না থাকলে জাতীয় পার্টির থেকে রুহুল আমিন হাওলাদার ও নাসরিন জাহান রত্না আমিন দম্পতির যে কেউ এ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানা গেছে। আর বাকী দলগুলোর ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সরব ভূমিকা এখনও দেখা যায়নি সংসদীয় এলাকাটিতে।

এ আসনের তরুণ ভোটার জাহিদ হাসান বলেন, মানুষ দীর্ঘদিন ভোট নিয়ে নানান যাতনার মধ্যে ছিল। বিগত দিনের মতো দিনের ভোট রাতে কিংবা রাতের ভোট না হলে জেলার সব থেকে বড় উপজেলা বাকেরগঞ্জে এবারে ভোটের উৎসব দেখা যাবে। সেক্ষেত্রে প্রার্থীদের ভোটারদের মন জয় করতে হবে। আর বড় উপজেলা হিসেবে এখন থেকেই যারা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তাদের মধ্যে যে কারও ঘরে লাভের ফসল উঠতে পারে।  

সাবেক সাংসদ ও জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান বলেন, বিএনপি মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন করেছে। বিএনপি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার আন্দোলন করেছে। যার ধারবাহিকতায় ২০২৪ সালে জনগণ ও ছাত্রসমাজ মিলে ফ্যাসিস্টের পতন ঘটিয়েছে, এখন দেশে একটি সুন্দর নির্বাচন সবাই প্রত্যাশা করে। আর আমি মনে করি, এটি একটি সুন্দর সময়, আমাদের এ দলের মতো বড় দল তো আর মাঠে নেই। শুধু বাকেরগঞ্জ নয়, গোটা বাংলাদেশের সব আসন থেকেই বিএনপি জয়লাভ করবে।

তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে নানা অন্যায় অত্যাচার উপেক্ষা করেও মানুষের সঙ্গে ছিলাম, এখনও আছি। মানুষ আমাকে তাদের সেবা করা সুযোগ আবারও দেবে ইনশাআল্লাহ।

এদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীও এ আসনে বিজয়ী হতে শতভাগ আশাবাদী। দলটির প্রার্থী অধ্যাপক মাওলানা মাহমুদুন্নবী তালুকদার বলেন, এবারে ফ্রি-ফেয়ার নির্বাচন যে হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে সেই প্রত্যাশাই আমাদের।  

বিভিন্ন সংস্থার হয়ে দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল অঞ্চলের নির্বাচন পর্যবেক্ষককারী সাংবাদিক আনিসুর রহমান স্বপন বলেন, জেলার সবচেয়ে বড় এ উপজেলায় নির্বাচন প্রতিযোগীতামূলক করতে হলে বিএনপির মতো অন্য বড় দলগুলোকেও জননন্দিত প্রার্থী দিতে হবে। তবে বিএনপি থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলে সেক্ষেত্রে অন্য প্রার্থীদের সুবিধা বেশি হবে।  

উল্লেখ্য, একাধিকবার সীমানা পরিবর্তন ঘটলেও বরিশাল-৬ আসনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখান থেকে ১৯৭৩ সালে মোকিম হোসাইন হাওলাদার (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), ১৯৭৯ সালে সিরাজুল হক মন্টু (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ১৯৮৬ সালে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (জাতীয় পার্টি), ১৯৯১ সালে ইউনুস খান (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ১৯৯৫ সালের উপ-নির্বাচনে আব্দুর রশিদ খান (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ তে আনোয়ার হোসেন চৌধুরী (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), জুন ১৯৯৬ তে  সৈয়দ মাসুদ রেজা (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ), ২০০১ সালে আবুল হোসেন খান (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল), ২০০৮ সালে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার (জাতীয় পার্টি-এরশাদ), ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্না (জাতীয় পার্টি-এরশাদ) এবং সর্বোশেষ ২০২৪ সালে মেজর জেনারেল (অব:) আব্দুল হাফিজ মল্লিক (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) নির্বাচিত হন।

এমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।