ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

মাঠে আ’লীগের বাবেল, ‘হদিস’ নেই ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর 

এম আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮
মাঠে আ’লীগের বাবেল, ‘হদিস’ নেই ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর  নির্বাচনী প্রচারণায় ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল-ছবি-বাংলানিউজ

ময়মনসিংহ: একে তো ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্ভেদ্য ঘাঁটি। এই আসন থেকে মাত্র একবার নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। তারপর এবার প্রতিপক্ষ ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহমুদ মোর্শেদ নেহায়েত ‘দুর্বল’ এবং স্থানীয় রাজনীতিতে অপরিচিত মুখ। 

জোটের বা মূল দল বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার খুব একটা যোগাযোগও নেই। ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমনকি প্রতীক বরাদ্দের দিনেও এলাকামুখী হতে দেখা যায়নি তাকে।

 

নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত একক আধিপত্য বজায় রেখে আদাজল খেয়ে প্রচারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল।  

মাইক বাজিয়ে, পোস্টার সাঁটিয়ে কিংবা পথসভা করে এই আসনে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। উৎসাহের সঙ্গেই তার নির্বাচনী প্রচারণায় শামিল হয়েছেন দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। এতে করে পুরোমাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে ভোটের আমেজ।  

ধরপাকড় কিংবা কোনো রকম আতঙ্ক না থাকলেও নির্বাচনী লড়াইয়ে ফ্রন্ট প্রার্থী, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহমুদ মোর্শেদের কোনো ‘হদিস’ না থাকায় আগ বাড়িয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরাও মাঠে নামার আত্মবিশ্বাস পাচ্ছেন না। যদিও সব মিলিয়ে শান্ত রয়েছে গফরগাঁওয়ের নির্বাচনী পরিবেশ।  

জানা গেছে, গফরগাঁওয়ে কোনো সময়েই কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি বিএনপি। আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজের বাবা প্রয়াত আলতাফ হোসেন গোলন্দাজ তিনবার সংসদ সদস্য ও একবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন।  

বাবার মতোই গোটা উপজেলাতেই ফাহমি গোলন্দাজ নিজের একক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন। ফলে জেলার অন্য সব উপজেলায় বিএনপি কম-বেশি সক্রিয় থাকলেও এই উপজেলাতে কখনই প্রকাশ্য কর্মসূচি দেখা যায়নি দলটির।  

এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় প্রার্থী হিসেবে ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের ওপর আস্থা রাখলেও বিএনপি আসনটিতে নিজেদের শরিক এলডিপিকে ছেড়ে দেয়।  

এতে করে স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী বিএনপির ‘রহমান’ পরিবার মনোনয়ন বঞ্চিত হন।  

সূত্রমতে, নানা হিসাব-নিকাশ কষে আওয়ামী লীগের এই নিশ্চিত আসনে এলডিপি’র সৈয়দ মাহমুদকে ২০ দলের প্রার্থী হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ১৯৮৫ সালের দিকে তিনি একবার স্বতন্ত্র উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। তার বাড়ি দক্ষিণ গফরগাঁওয়ে।  

বিএনপির মনোনয়ন বঞ্চিত একাধিক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, এবার এমন একজনকে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে যিনি এলাকায় নিয়মিত নন। সব সময় থাকেন ঢাকাতেই। এলাকায় এলডিপি’র সাংগঠনিক ভিত্তি যেমন নেই তেমনি জোটের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার হৃদতা-সখ্যতা নেই।  

এমনকি নতুন প্রজন্মও তাকে চেনে না, নামও শোনেনি কোনদিন। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর তুলনায় তাকে নিতান্তই ‘দুর্বল’ প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ভোটে তিনি কতদূর সুবিধা করতে পারবেন সেটাই দেখার বিষয়।

ছবি: অনিক খান

তবে গফরগাঁও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন বাদল বাংলানিউজকে বলেন, গফরগাঁও এমনিতেই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে শুরু করে ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে জিতেয়ে এনেছেন সংসদ সদস্য ফাহমি গোলন্দাজ বাবেল। জেলা পরিষদ নির্বাচনেও এখানে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীই পেয়েছেন সব ক’টি ভোট। তার জনপ্রিয়তার সামনে কোনো প্রার্থীরই দাঁড়ানোর যোগ্যতা নেই।  

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, গত মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) থেকে উপজেলার শিলাসি মুরশিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ থেকে পথসভার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফাহমি গোলন্দাজ।  

পরদিন বুধবার (১২ ডিসেম্বর) স্থানীয় রাওনা ইউনিয়নের রাবেলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠেও একইভাবে পথসভা করেন তিনি। প্রতিটি দিনই নানা কৌশলে ভোটের প্রচারণায় থাকবেন তিনি, এমন দাবি দলীয় সূত্রের।  

এসব বিষয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহমুদ মোর্শেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কথা বাড়াতে চাননি তিনি।  

তবে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি এখনও ঢাকায় আছি। ঢাকা থেকে ফিরেই নির্বাচনী কাজ শুরু করবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮ 
এমএএএম/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।