আব্দুল ওহাব। বয়স ৩৫।
চিত্রনাট্য শুরু এভাবেই। সাদা কাগজের ওপর কালো অক্ষরের লেখাগুলো যতটা সহজ, সাবলীল; দৃশ্যধারণ করা ততই জটিল। বিশেষ করে চিত্রনাট্যের আব্দুল ওহাব চরিত্রের প্রতিনিধি হয়ে যখন খোদ মোশাররফ করিম দাঁড়িয়েছেন ক্যামেরার সামনে।
নাটকের নাম ‘অলৌকিক মানুষ’। আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের পাশে যে ছোট আয়তনের পরিপাটি কলোনী রয়েছে, সেখানেই চলছিলো দৃশ্যধারণ। বছরজুড়ে এ কলোনী জুড়ে নিস্তব্ধতা লেগে থাকে।
কিন্তু ৯ জানুয়ারি দুপুরে দেখা গেলো ভিন্নচিত্র। মোশাররফ করিম এসেছেন! দুপুরের একটু আগে এ খবর চাউর হয়ে গেছে পুরো এলাকায়। এরপরই ছেলে, বুড়ো, স্কুল-কলেজগামী কিশোরী, লাজুক গৃহবধু জড়ো হয়েছেন সবাই। প্রত্যাশা একটাই- তারা মোশাররফের সঙ্গে একটা ছবি তুলতে চায়। আবেদন পূরণ করতে করতে ক্লান্ত মোশাররফ। বিরক্ত ইউনিটের অন্যান্যরাও।
ভীড়, বিরক্তকে পাশ কাটিয়ে মোশাররফ ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন। কাঁধে ব্যাগ। অফিস যাচ্ছেন তিনি। জানলা দিয়ে মৌটুসী ডাক দিলেন তাকে। মৌটুসী তার স্ত্রী। মোশাররফ ওরফে আব্দুল ওহাব থমকে দাঁড়ালেন জানালায়। বউয়ের ফরমায়েশি আবদার- ‘একটু খুশবু তেলের বোতল আইনো। ’ মোশাররফের সম্মতি শুনে বউ আবদার বাড়িয়ে দিলো আরও একধাপ- ‘ত্রিফলা না, হাস্নাহেনাটা আনবা। ’ শুনে মোশাররফ ভাবতে থাকেন। হাস্নাহেনা তার বউয়ের নামও। নিজের বউয়ের নামে বাজারে ওঠা কোনো জিনিস তার কী কেনা উচিত! এ মানসিক দ্বন্দ্ব নিয়ে দৃশ্য শেষ হয়।
তড়িঘড়ি করে ইউনিট গাড়িতে ওঠে। উঠে পড়েন মোশাররফও। দেশজুড়ে অবরোধ চলছে। নিজের গাড়ি নিয়ে বের হননি তিনি। শুটিংয়ের গাড়িই ভরসা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেলেন তারা। সেখানে মোশাররফ পার্কে বসে থাকবেন, একা একা কথা বলবেন, বসে বসে। পুলিশ তাকে সন্দেহ করবে। আবার স্ত্রী মৌটুসী আর সন্তানকে নিয়ে তিনি পার্কে ঘুরে বেড়াবেন, হাওয়াই মিঠাই কিনে দেবেন, নাগর দোলায় চড়বেন- এমন দৃশ্য ধারণ করা হবে।
বিপত্তি সেখানেও। ছুটির দিন। মোশাররফের আশেপাশে লোকজনের অভাব নেই। ‘অলৌকিক মানুষ’ লিখেছেন মাহমুদ দিদার। পরিচালনা করছেন দেব জ্যোতি ভক্ত।
বাংলাদেশ সময় : ২১৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৫