দিনাজপুর থেকে: দিনাজপুর সদরে এখন একটাই সিনেমা হল। তাই বড় পর্দায় যারা ছবি উপভোগ করতে চান তাদের কাছে সবেধন নীলমনি এই মডার্ন সিনেমা হল।
সচরাচর প্রদর্শনী শুরুর আগে পর্দায় লেখা থাকে, ‘জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের সময় দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করুন’। অনেক ক্ষেত্রে আবার সরাসরি পতপত করে পতাকা ওড়ার দৃশ্য দেখানো হয় জাতীয় সংগীতের সুরের সঙ্গে। মডার্ন সিনেমা হলে আলাদাভাবে এটা উল্লেখ করার কারণ কী- জানতে চাইলে টিকিট চেকার ও গেটম্যানরা জানালেন, ‘জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের সময় কিছু লোক দাঁড়ায় না। এটা যেন না হয়, সবাই যেন পতাকা উড়লেই দাঁড়ায়, তাই এতোবার করে মনে করিয়ে দেওয়া। ’
যে পতাকার জন্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে যে পতাকা অর্জন, তার সম্মান রাখা সব নাগরিকেরই দায়িত্ব। মডার্নের এই উদ্যোগ সত্যি প্রশংসনীয়। সিনেমা হলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৫৭ সালে। এক সময় এই প্রেক্ষাগৃহে রীতিমতো ভিড় জমে থাকত দর্শনার্থীদের।
![](files/December2015/December26/Film_Poster_01_133454965.jpg)
এক দশক আগেও রমরমা ছিলো এ সিনেমা হলটি। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানুষ ছুটে আসতো ছবি দেখতে। টিকিট পাওয়া থেকে শুরু করে আসনে বসা নিয়ে পর্যন্ত ঘাম ঝরতো তাদের। এখন এক নিঃশ্বাসে গুনে ফেলা যায় দর্শক সংখ্যা!
হতাশাজনক হারে এক সময়ের জনপ্রিয় সিনেমা হলটিতে ক্রমশ দর্শক কমছে। দিনাজপুরে আরও তিনটি সিনেমা হল ছিলো। কিন্তু দর্শক খরায় বন্ধ হয়ে গেছে সব কটাই। স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেটের মতো উন্নত প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে সিনেমা হল। হারিয়ে যাচ্ছে এর জনপ্রিয়তা, দেখা মিলছে না দর্শনার্থীদের।
![](files/December2015/December26/Film_Poster_02_941029244.jpg)
দর্শক কমে যাওয়া কিংবা হল বন্ধের পেছনে এটাকেই মূল কারণ উল্লেখ করে মডার্নের ম্যানেজার মোহাম্মদ রেজা বাংলানিউজকে বললেন, ‘এখন স্যাটেলাইট চ্যানেলই মানুষ বেশি দেখে। তাছাড়া মোবাইলেই ছবি দেখছে। আরও কারণ আছে। ’ কী সেটা জানতে চাইলে রেজা যোগ করলেন, ‘ছবির মানও আগের মতো হয় না। ’
মডার্নের মতো দেশের অন্য অনেক সিনেমা হলের অবস্থা এখন নাজুক। তাই হিন্দি ছবি আমদানি করাকে বিকল্প হিসেবে দেখছেন পরিবেশকরা। এতে কি আসলেই সমাধান হবে? মডার্ন সিনেমা হলের অভিজ্ঞতা কী বলে?
এসব প্রশ্নে ১৯৯৫ সাল থেকে মর্ডান সিনেমা হলে কর্মরত রেজার উত্তর, ‘আমরা সালমান খানের ‘ওয়ান্টেড’ সিনেমাটা চালিয়েছি এ বছর। কিন্তু দর্শক হয়নি। ভারতের সঙ্গে যদি একই দিনে কিংবা এক-দুই সপ্তাহ পরে ছবি মুক্তি দেওয়া যায়, তাহলে সুফল পাওয়া যাবে। এ ছাড়া কোনো লাভ নেই’।
![](files/December2015/December26/Film_Poster_03_844587491.jpg)
মডার্নে টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা (ডিসি) ও ৪০ টাকা (রিয়ার স্টল)। দিনে শো চলে চারটি- দুপুর ১২টা, বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা ও রাত সাড়ে ৯টা। গত সপ্তাহে এখানে চলেছে ‘ধর শয়তান’। এখন চলছে ‘নগর মাস্তান’। সামনে আসবে ‘লাল চর’ কিংবা ‘মাটির পরী’। দর্শক আকৃষ্ট করার জন্য নায়িকাদের স্বল্পবসনা ছবি দিয়ে সিনেমাগুলোর পোস্টার সাজানো হয়েছে। ব্যাপারটা বোঝা গেলো। তবে সব ছাপিয়ে বারবার দেখছিলাম, ‘জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের সময় দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করুন’।
বাংলাদেশ সময় : ০৭০৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৫
জেএইচ/আরএম
** আবাদি জমিতেও পোস্টার, ছেয়ে গেছে প্ল্যাটফর্মও