ইরানের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তামি আর নেই। সোমবার (৪ জুলাই) ফ্রান্সের প্যারিসের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
গত মার্চে আব্বাস কিয়ারোস্তামির দেহে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যানসার ধরা পড়ে। সারিয়ে তুলতে তার দেহে বেশ কয়েকটি অস্ত্রোপচার করা হয়। গত মাসে প্যারিসে হয়েছে শেষটা। কিন্তু দুরারোগ্য ব্যাধির কাছে হার মেনে মৃত্যুবরণ করতে হলো তাকে। তার মৃত্যুর খবরে বিশ্ব চলচ্চিত্রে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি দুই পুত্র আহমাদ ও বাহমানকে রেখে গেছেন।
জীবদ্দশায় ৪০টিরও বেশি ছবি তৈরি করেন আব্বাস কিয়ারোস্তামি। এর মধ্যে আছে প্রামাণ্যচিত্র। ইরানি চলচ্চিত্রে নতুন ঢেউ তুলেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রাঙ্গনে তার পথচলা শুরু হয় ১৯৬০ সালে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন নিয়ে বাস্তববাদী গল্প বলতেন তিনি। তার হাত ধরেই বিশ্বজুড়ে আলাদা স্বীকৃতি পেয়েছে ইরানি ছবি। এগুলো আবেগপ্রবণ করেছে সব বয়সী দর্শকদের। ইরানি বিষয়বস্তু নিয়ে ছবি বানালেও বিশ্বজুড়ে দর্শকদের মনকে নাড়া দিয়েছে।
১৯৯৭ সালে ‘টেস্ট অব চেরি’র জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বর্ণপাম জেতেন আব্বাস কিয়ারোস্তামি। তিনিই এখন পর্যন্ত একমাত্র ইরানি যার ঝুলিতে আছে এই অর্জন। ছবিটির গল্প আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া এক ব্যক্তিকে ঘিরে। আত্মহত্যার পর তাকে সমাহিত করে দেবে এমন একজনকে খুঁজতে থাকেন তিনি। তখনকার সময়ে ইরানি নাগরিক ও ধর্মীয় মনোভাবের চিত্র তুলে ধরা হয় এতে।
মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আমূল বদলে যাওয়ায় ইরানে কাজ করা দুঃসাধ্য মনে হচ্ছিলো আব্বাসের কাছে। তাই নিজের শেষ দু্ই ছবি ‘সার্টিফায়েড কপি’ (২০১০) ও ‘লাইক সামওয়ান লাভ’ (২০১২)-এর কাজ ইরানের বাইরে করেছেন তিনি। দুটোই স্থান পায় কান উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে। তার ‘টেন’ (২০০২) ছবিটিও স্বর্ণপামের জন্য মনোনীত হয়েছিলো। একটি গাড়ির সঙ্গে দুটি ডিজিটাল ক্যামেরা সংযুক্ত করে বানানো হয় এটি। এর গল্পে দেখা যায়, এক নারী তেহরানের চতুর্দিকে গাড়ি চালান। তার যাত্রী হন বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। সামাজিক ইস্যুতে নারীর ভূমিকা তুলে ধরাই ছিলো ছবিটির মূল বক্তব্য। ২০০৫ সালে তিন পর্বের ছবি ‘টিকেটস’ নির্মাণের জন্য ব্রিটিশ পরিচালক কেন লোচ ও ইতালিয়ান চলচ্চিত্রকার এরমানো ওলমোর সঙ্গে হাত মেলান আব্বাস।
১৯৪০ সালে তেহরানে জন্মেছিলেন আব্বাস কিয়ারোস্তামি। তেহরান ইউনিভার্সিটিতে চারুকলায় পড়াশোনা করেন তিনি। ইরানি টিভির জন্য বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে শুরুটা হয় তার। ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লবের পর রাজতন্ত্রের আওতায় সরকারের ইসলামী ব্যবস্থার সূচনা হলে অনেক শিল্পী ও লেখক দেশ ছেড়ে চলে যান, কিন্তু আব্বাস থেকেছেন। গ্রামীণ সমাজের দরিদ্র অথবা শিশুদের ঘিরেই তার বেশিরভাগ ছবির গল্প।
গত সপ্তাহে অস্কারের সদস্য হিসেবে অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস আমন্ত্রিত ৬৮৩ জন শিল্পীদের মধ্যে ছিলো আব্বাসের নাম। কিন্তু আরও আগেই তিনি এ আমন্ত্রণ পেতে পারতেন বলে মন্তব্য এসেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ২০০৩ সালে দ্য গার্ডিয়ানের সেরা সক্রিয় পরিচালকের তালিকায় ষষ্ঠ হন তিনি।
আব্বাস কিয়ারোস্তামি বিয়ে করেন ১৯৬৯ সালে। তবে স্ত্রী পারভিন আমির-গোলির সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় ১৯৮২ সালে। মাল্টিমিডিয়া প্রকাশক আহমাদ ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা বাহমান তাদেরই সন্তান।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০১৬
এটি/জেএইচ