সাংবাদিক, সেনাবাহিনীর সদস্য থেকে শুরু করে ছোটবেলায় অনেক কিছুই হতে চেয়েছিলেন জান্নাতুল সুমাইয়া হিমি। কিন্তু তিনি হয়ে গেছেন মডেল-অভিনেত্রী!
দুই বছর আগে আরটিভি ও ফ্যাশন হাউস রঙ আয়োজিত ‘মডেল হান্ট’ প্রতিযোগিতায় মায়ের ইচ্ছায় অংশ নিয়েছিলেন হিমি।
এর মধ্যে হিমির জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগটা আসে এবারের রোজায়। ঈদ উপলক্ষে নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘চৌধুরী খালেকুজ্জামানের গুণের কোনো সীমা নাই’ (চ্যানেল আই) নাটকে অভিনয় করেন তিনি। এতে তাকে দেখা গেছে মীনা চরিত্রে। তার অভিনয় প্রশংসিতও হয়েছে।
মীনা গ্রা মেয়ে। তার স্বামী খালেকুজ্জামান (প্রাণ রায়) হাস্যকর চরিত্রের মানুষ। নানারকম ইচ্ছা জাগে তার। একসময় তিনি স্বপ্ন দেখেন মীনাকে নিয়ে পর্দায় অভিনয় করবেন! এ নাটকে কাজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে হিমি বাংলানিউজকে বললেন, ‘অল্প সময়েই হুমায়ূন স্যারের গল্পের নায়িকা হতে পেরেছি। তিনি বেঁচে থাকলে নিজেকে আরও ভাগ্যবতী মনে করতাম। মেহের আফরোজ শাওনের পরিচালনা আর রিয়াজ ভাইয়ের মতো অভিনেতার সঙ্গে কাজ করে অভিনয়ের অনেক কিছু শিখতে পেরেছি। আগামীতে এগুলো আমার কাজে লাগবে। ’
ঈদের আরও কিছু নাটক এবং নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন হিমি। অন্য নাটকের মধ্যে আছে জিয়া রায়হান পরিচালিত ‘স্টুপিড’ (এনটিভি), শাহাজাদা মামুন পরিচালিত ‘ধরিস না মা মরে যাবো’ (বৈশাখী টিভি), খালিদ হোসেন সম্রাটের ‘চেয়ারম্যানের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র’ ও সতীর্থ রহমানের ‘গল্পবাজ’ (চ্যানেল আই)।
ঈদ উপলক্ষে হিমির সৌভাগ্য হয়েছে নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে কাজ করার। ‘চেয়ারম্যানের চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র’র নায়িকা কমলার চরিত্রে দেখা গেছে তাকে। তার বিপরীতে ছিলেন সম্রাট। তিনিই গ্রামের চেয়ারম্যান। তার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক।
এ নাটকে কাজ করা প্রসঙ্গে হিমি বলেন, ‘আমার সামনে রাজ্জাক স্যার! প্রথমে স্বপ্নের মতো লেগেছে। প্রথমে যখন স্যারের সঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছি হাত-পা কাঁপছিলো। জানা কাজ ভুল করছিলাম। পরে স্যার ডেকে নিয়ে পাশে বসিয়ে অনেক গল্প করেছেন, কাজের ব্যপারে বুঝিয়েছেন। স্যারের সঙ্গে কাজের অনুভূতি প্রকাশ করা যাবে না ভাষায়। ’
‘মডেল হান্ট’ প্রতিযোগিতা বিজয়ের পর অরুণ চৌধুরীর পরিচালনায় ধারাবাহিক নাটক ‘মোহর আলী’তে (চ্যানেল আই) অভিনয় করেন হিমি। সামনে শুরু হবে রাজিবুল ইসলাম রাজিবের ‘বারো ঘরের এক উঠান’ (এটিএন বাংলা), পার্থিব মামুনের ‘অন্তর বিভ্রাট’ (চ্যানেল আই)।
হিমির টেলিফিল্মের তালিকায় আছে জিয়া রায়হান ‘মুখোমুখি’, চন্দন চৌধুরীর ‘স্বপ্ন ঘুড়ি’, শাহজাদা মামুনের ‘আকাশ কুসুম’, নাহিদ আহমেদ পিয়ালের ‘চোরাই ধন’, জার্জিস আহমেদের ‘বোকা বেচারা’, রাজিবুল ইসলাম রাজিবের ‘মধ্যরাতের ঐরাবত'’, মুজিবুল হক খোকনের ‘অন্ধকারের আকাশ’, সাইফুল ইসলাম মান্নুর ‘এতিম দারোগা’।
নাটকের গন্ডি পেরিয়ে চলচ্চিত্রেও নাম লিখিয়েছেন হিমি। এরই মধ্যে তিনি মানসী চরিত্রে অভিনয় করেছেন যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘হঠাৎ দেখা’য়। রেশমি মিত্রের পরিচালনায় এতে তার বিপরীতে দেখা যাবে কলকাতার দ্বীপ ভট্টাচার্যকে। বাংলাদেশের ইলিয়াস কাঞ্চন আর ওপার বাংলার দেবশ্রী রায়ও আছেন ছবিটিতে। এর দৃশ্যায়ন হয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে ও কলকাতার বোলপুরে। এটি মুক্তি পাবে আগামী মাসের মাঝামাঝি।
হিমির কাছে আরও দুই-তিনটি ছবির প্রস্তাব এসেছে। তবে নাচ-গান-অ্যাকশনে ভরপুর মসলাদার ছবিতে কাজ করার ইচ্ছা নেই তার। তবে ভালো গল্প-চরিত্র ও গুণী পরিচালকদে কাছ থেকে প্রস্তাব এলে ভেবে দেখতে চান তিনি।
হিমিকে দেখা গেছে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও। এর মধ্যে আছে ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে ‘সেন্টার ফ্রেশ’, মোবাইল ফোন কোম্পানি সিম্ফনি এবং শিক্ষার ওপর সরকারি বিজ্ঞাপন। হিমির প্রতিশ্রুতি, ‘মডেলিং চালিয়ে যাবো। ’
পড়াশোনার পাশাপাশি কচিকাঁচায় নাচ-গান শিখেছেন। বেড়ে ওঠার পর নজরুলসংগীতে তালিম নেন শিল্পী ফেরদৌস আরার কাছে। ছোটবেলায় বিটিভিতে কয়েকটি নাটকের শিশুশিল্পী হিসেবে দেখা গেছে হিমিকে। তবে এখন তিনি পরিচিত মডেল ও অভিনয়শিল্পী হিসেবে।
হিমির নাচ, অভিনয় ও পড়াশোনা সবকিছু চলছে সমানতালে। মাঝে মধ্যে তাকে নাচের অনুষ্ঠানে দেখা গেলেও গানের কী খবর? উত্তরে হিমি বলেন, ‘সামনের বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে গানের দিকে নজর দেবো। সব কাজ একবারে করলে কোনোটাই সঠিকভাবে করা যায় না। ’
বাংলাদেশ সময় : ১৬৪১ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০১৬
টিএস/জেএইচ