ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিনোদন

হুমায়ূন ভাই আমাকে কখনো বকা দেননি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৮
হুমায়ূন ভাই আমাকে কখনো বকা দেননি হুমায়ূন আহমেদ ও ফারুক আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ, কথাসাহিত্যিক হিসেবে যেমন তুমুল জনপ্রিয়, তেমনি মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছেন জনপ্রিয় নাটক ও সিনেমা উপহার দিয়ে। তার নির্মিত বহু নাটক ও সিনেমা কালের বিচারে উতরে যাবে বলে বিশ্বাস করেন ভক্তরা। এই নন্দিত সাহিত্যিক ও নির্মাতা ২০১২ সালের ১৯ জুলাই লাখো ভক্তকে কাঁদিয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। প্রয়াণ দিবসে হুমায়ূনকে স্মরণ করা হচ্ছে নানা আয়োজনে।

হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন হাস্যরসাত্মক নাটকের পথিকৃৎ। এই গুণী নির্মাতার নাটক দেখার জন্য সবাই উন্মুখ থাকতেন।

হুমায়ূন আহমেদের নাটকে সবচেয়ে বেশি যার উপস্থিতি চোখে পড়ে, তিনি হলেন ফারুক আহমেদ। ‘কথার যাদুকর’র প্রায় দেড় শতাধিক নাটকে তিনি কাজ করার সুযোগ পান। হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে টানা ষোল বছর এই অভিনেতা কাজ করেন। নন্দিত নির্মাতার চলে যাওয়ায় ফারুক আহমেদ নিজের মধ্যে শূন্যতা অনুভব করেন।

হুমায়ূনের প্রয়াণ দিবসে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপ হচ্ছিল ফারুক আহমেদের। জনপ্রিয় এই অভিনেতা বলেন, ‘হুমায়ূন ভাই চলে যাওয়ায় বাংলা নাটক ও বাংলা সাহিত্যে বিশাল শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আমার মধ্যেও অনেক বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে। কারণ ওনার সঙ্গে আমি একটানা ১৬ বছর কাজ করেছি। সংখ্যার দিক থেকে তার সবচেয়ে বেশি নাটকে আমিই অভিনয় করেছি। ওনার কথা এখন খুব মনে পড়ে। আমার ভেতরের তাকে হারিয়ে অনেক বেশি শূন্যতা তৈরি হয়েছে। ’

হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলা হাসির নাটকে এক বিশাল পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন ফারুক। টিভি নাটকের দর্শক কমে যাওয়ার এটি অন্যতম একটি কারণ বলেও তার ধারণা।

ফারুকের ভাষ্যে, ‘হুমায়ূন আহমেদ দর্শকদের জন্য সত্যিকারের হাসির নাটকই নির্মাণ করতেন। হাসির নামে দর্শকের ঠকাতেন না। মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত কিছুর আশ্রয় নিতেন না। তিনি স্বাভাবিক গল্পে দর্শকদের হাসাতেন। ’

হুমায়ূন আহমেদের পরিচালনায় অভিনয়ের মুহূর্তগুলো ফারুককে খুব নাড়া দেয়। সে দৃশ্যগুলো এখনো তার চোখে ভেসে ওঠে। ফারুক বলন, ‘ওনার মত নির্মাতা খুব কম জন্মে। তার ভেতর অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। তিনি সুন্দরভাবে খুব সহজে প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করতেন। অভিনয়শিল্পীরা অনেক সময় ক্যামেরার সামনে ডায়লগ দিতে গেলে কিছু শব্দ পরিবর্তন করে থাকেন। কিন্তু আমি হুমায়ূন ভাইয়ের লেখা একটি শব্দও বাদ দিতে পারতাম না। সংলাপে ব্যবহৃত ওনার প্রতিটি শব্দ ছিল অসাধারণ এবং অর্থবহ। খুব কঠিন জিনিসকে তিনি সহজভাবে সার্বজনীন করে লিখতেন। ’

হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই আহসান হাবীবের স্কুল জীবনের বন্ধু ফারুক। তাই হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে ফারুক আহমেদের সম্পর্কটাও ছিল বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মতো। স্নেহের পাত্র ছিলেন তিনি, ‘শুটিং সেটে হুমায়ূন ভাইয়ের বকা খায়নি এমন কেউ নেই। কিন্তু হুমায়ূন ভাই একমাত্র আমাকে কখনও বকা দেননি। এ নিয়ে অন্যরাও আমাকে জিজ্ঞেস করতেন, সবাই বকা খায় কিন্তু তোমাকে বকা দেয় না কেন? আসলে এই কারণটা আমার জানা ছিল না। ’

মৃত্যুর আগে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে ফারুকের শেষ দেখা হয় নুহাশ পল্লীতে। তখন ক্যান্সারের চিকিৎসা নেওয়ার ফাঁকে একবার আমেরিকা থেকে দেশে আসেন হুমায়ূন। তার সঙ্গে শেষ দেখার বর্ণনা নিজেই শোনালেন ফারুক, ‘সেদিন সন্ধ্যার দিকে হুমায়ূন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে আমি নুহাশ পল্লী গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে বসতে বললেন। তখন সেখানে দেশের অনেক নামীদামী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এরপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে হুমায়ূন ভাই বলেছিলেন, ফারুক সম্পর্কে তোমাদের আজকে কিছু কথা বলি। আমার ছেলে নিশাদের জন্মদিনে একবার ফারুককে দাওয়াত দিতে আমি ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন সে ঠিকই খবর পেয়ে চলে আসে। আমাকে এসে বলেছে, ভাই দাওয়াত দেননি, তবু চলে এলাম। আসলে এটাই প্রকৃত ভালোবাসা। ও আমাকে অনেক ভালোবাসে বলেই দাওয়াত না পেয়েও অধিকার নিয়ে চলে এসেছে। ’

কথাগুলো বলে হুমায়ূন ভাই চোখে পানি ঝরালেন। এরপর আমাকে বললেন, ‘ফারুক আজকে চলে যাও অনেক রাত হয়েছে। গুড বাই। ’ এটাই ছিল ওনার সঙ্গে আমার শেষ কথা।

হুমায়ূন আহমদের পরিচালনায় ‘আজ রবিবার’ নাটকে ফারুক প্রথম কাজ করেছিলেন। এই নির্মাতার সঙ্গে তার শেষ কাজ ছিল ‘পিঁপড়া’ নাটকে। তিনি হুমায়ূন আহমদের এতোই পছন্দের একজন মানুষ ছিলেন যে, ‘লিলুয়া বাতাস’ বইটি ফারুককে উৎসর্গও করেছিলেন ‘কথার জাদুকর’।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৮
জেআইএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।