ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

সুইচোরা পাখিটির লেজে...

মীম নোশিন নাওয়াল খান, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৩
সুইচোরা পাখিটির লেজে...

ঢাকা: ছোট্ট একটা পাখি। মায়াবী আর সুন্দর দেখতে।

সবুজাভ শরীরটাকে দিব্যি বাতাসে ভাসিয়ে দিয়ে পোকা শিকার করে বেড়াচ্ছে।

পুঁচকে পাখিটার নাম সুইচোরা। নামটা শুনে অবাক লাগছে? নামের সাথে কিন্তু পাখিটার মিল আছে যথেষ্টই। লেজের আগায় সুইয়ের মতো সরু পালক থাকাতেই তার এমন নাম।
stock-footage-
সুইচোরা পাখির ইংরেজি নাম Bee Eater. নামটা মজার না? মৌমাছিখেকো। হ্যাঁ, পাখিটা মৌমাছিখেকোই বটে। মৌমাছি তার যথেষ্ট পছন্দের খাবার। শুধু কী তাই, তাদের মোট খাদ্যের ১৫ ভাগই হচ্ছে মৌমাছি। তবে অন্যান্য পোকামাকড় খেতেও সুইচোরার মোটেও অরুচি নেই। বরং সেটাও তারা পছন্দই করে। আর ওদের পোকা শিকারের ধরনটাকেও শিল্প বলতে হয়। উড়তে উড়তে ডাইভ দিয়ে পোকামাকড় ধরে ওরা। খেজুরের রসও ভালোবাসে তারা।

ভারী মিষ্টি একটা পাখি সুইচোরা। উজ্জ্বল চোখ। বাঁকানো লম্বা ঠোঁট। ডানা হয় লম্বাটে, পা দুটো তুলনামূলক খাটো, লম্বা লেজ। পৃথিবীতে সব মিলিয়ে ২৪ প্রজাতির সুইচোরা আছে। প্রজাতিভেদে তাদের শরীরের মাপ ৬ থেকে ১৪ ইঞ্চি। পুরুষ ও মেয়ে পাখির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আর সব প্রজাতির সুইচোরারই আচার-ব্যবহার, খাদ্যাভ্যাস, বসবাসের ধরন, ওড়ার ধরন প্রায় একই রকম। প্রজাতিভেদে রঙে ভিন্নতা থাকলেও সবার শরীরেই সবুজ রঙের আধিক্য লক্ষণীয়।
BlueTailed
সুইচোরা পাখি বাসা বানায় মাটিতে গর্ত করে। বছরে দুবার বাসা করে। বাসা বাঁধার সময় বর্ষা ও হেমন্ত ছাড়া অন্য সব ঋতু। ২ থেকে ৬ দিন লাগিয়ে তারা বাসা করার জায়গা নির্ধারণ করে। ঠোঁট ও পা দিয়ে গর্ত করে। গর্তের মুখ ছোট হয় এবং ভেতরের দিকে যেতে যেতে ক্রমশ তা বড় হতে থাকে। ডিম পাড়ার জায়গাটাকে গোলাকার রাখে সুইচোরা। গর্ত খোঁড়ার এই কাজ শেষ করতে তাদের লাগে ৫-৭দিন। তারা এমনভাবে বাসা করে যে বৃষ্টি বা বন্যা হলেও তাদের গর্তের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

মজার বিষয় হলো সুইচোরাকে পুরোপুরি সামাজিক পাখি বলা যায়। মানুষের মতো ওরা একসঙ্গে থাকতে ভালোবাসে। যখন বাসা বানায় সবাই একসসেঙ্গই কাছাকাছি বাসা বানিয়ে থাকতে তারা পছন্দ করে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একসাথে ৬টা করে ডিম পাড়ে সুইচোরা। তবে কখনো কখনো এর কমবেশিও হয়। পুরুষ ও মেয়ে পাখি দুজনে মিলেই ডিম তা দেয় পালা করে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ২১-২৭ দিন।  
বাংলাদেশে সুইচোরার চারটি প্রজাতি রয়েছে।
bbeat-22
পিঙ্গল মাথা সুইচোরা
ইংরেজি নাম Chestnut headed bee Eater.  বৈজ্ঞানিক নাম  Merops leschenaulli।
এদের সারা শরীর পিঙ্গল রং। গলা হলুদ। গলায় একটা বলয় আছে কালচে পিঙ্গল রঙের। পেট সবুজাভ রঙের। লেজের উপর দিক নীল রং। ডানার রং সবুজ। ডিম পাড়ে ৪টি থেকে ৬টি।

নীললেজা সুইচোরা
ইংরেজি নাম Bluetarited Bee Eater। বৈজ্ঞানিক নাম Merops Philipplinus।
পিঙ্গল মাথা সুইচোরার মতো এদেরও মাথা-বুক-ঘাড়-গলা পিঙ্গল রঙের। পিঠের শেষ দিক থেকে লেজের উপরদিক পর্যন্ত নীলচে রং। এরা লম্বায় প্রায় ২২ সেন্টিমিটারের মতো হয়। ডিম পাড়ে ৬টি থেকে ৭টি।
bbet-1201
পাহাড়ি বড় সুইচোরা
ইংরেজি নাম Blue Bearheaded Bee Eater। বৈজ্ঞানিক নাম Nyctyornis athertoni
মূলত সবুজ রঙের পাখি। গলা থেকে বুকের খানিকটা নীলচে রং। পেটে হলুদের সাথে সবুজ রঙের হালকা টান। এদের লেজে সুঁইয়ের মতো সরু লম্বা পালক নেই। এরা লম্বায় ৩৫ সেন্টিমিটার। সুইচোরার সব প্রজাতির মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়।

সবুজ সুইচোরা   
ইংরেজি নাম Green Bee Eater. বৈজ্ঞানিক নাম Merops Orientalis.
এরাও সবুজ রঙের পাখি। গলায় কালো রঙের বলয়। মাথা আর ঘাড় লালচে বাদামি। লম্বায় ২১ সেন্টিমিটার। ডিম পাড়ে ৭টা।

সুইচোরা চালাক কিন্তু নিরীহ পাখি। সারা বাংলাদেশের প্রায় সব প্রান্তেই সুইচোরা পাখি দেখা যায়। গায়ক পাখি না হলেও সুইচোরার গানের গলাও বেশ মিষ্টি। তাই তো তাকে নিয়েও মানুষ গাইতে ভালোবাসে ‘হাওয়া এসে দুলে দুলে যায় রে... তোমার চোখের ওপারে....সুইচোরা পাখিটির লেজে...

বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।