ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

চা বাগানে ফুটেছে ‘কনকচূড়া’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২১
চা বাগানে ফুটেছে ‘কনকচূড়া’ কনকচূড়া, ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: চা বাগানের আরেক সৌন্দর্য ফুল। চা সেকশনে যাবার পথে হঠাৎ নতুন কোনো ফুল দেখে ভালোলাগার অনুভূতি বর্ণনাতীত।

আর সেই ফুলটি যদি হয়ে ওঠে বিরল বা বিপন্ন প্রজাতির তাহলে তো ভ্রমণ আর বিষয়টি অধিক স্বার্থকতার।  

একটি বৃক্ষপ্রজাতি এক সময় আমাদের প্রতিবেশী ছিল। কালক্রমে সে হারিয়ে যাচ্ছে। মুছে যাচ্ছে তার অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে। ঠিক তেমনি এক ভাবনায় ভর করে সে ফুলটাকে হৃদয় দিয়ে দেখা ভীষণ রকমের তাৎপর্যবহ স্বার্থকতাটি এমনই।  

কনকচূড়া তেমনি একটি বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ ও গ্রীষ্মকালীন ফুল। এক সময় চা বাগানগুলোতে এ গাছটি ছায়াবৃক্ষ হিসেবে রোপণ করা হলেও এখন আর তা করা হচ্ছে না। এ গাছটি এখন চা বাগানে তার আপন গুরুত্ব হারিয়েছে। বরং ধীরে ধীরে এ বৃক্ষগুলোকে বৃহৎ ও প্রাচীনতার দোহাই দিয়ে জ্বালানি হিসেবে কেটে ফেলে হয়।  

এভাবেই চা বাগানগুলো থেকে মুছে যাচ্ছে অপূর্ব সৌন্দর্য ফুল কনকচূড়া। সম্প্রতি ফিনলে চা বাগানে ফুটেছে এ ফুল। কনকচূড়া ছাড়াও এ ফুলকে হলুদচূড়া, পিলা গুলমোহর, হলুদ গুলমোহর নামে ডাকা হয়ে থাকে। এ ফুলের ইংরেজি নাম Yellow Flamboyant ও বৈজ্ঞানিক নাম Peltophorum pterocarpum।  

মৌলভীবাজারের সিনিয়র টি-প্লান্টার ইবাদুল হক এ ব্যাপারে বাংলানিউজকে বলেন, কনকচূড়া চা বাগানের বিরল এক প্রকারের ফুল। খুবই কম চোখে পড়ে। কনকচূড়া গাছটি কৃষ্ণচূড়া গাছের মতো বড় আকারের উদ্ভিদ। কনকচূড়ার ফুলের রং গাঢ় হলুদ। ডালের আগায় কয়েকটি আলাদা আলাদা ফুলের মঞ্জুরি ঊর্ধ্বমুখী হয়ে বের হয়। ফুলের কলি গোলা আকৃতির। মঞ্জুরির নিচ থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়। অনেকে এ কনকচূড়া ফুলকে রাধাচূড়া ভেবে ভুল করে থাকেন।  

চা বাগানে এ গাছটির ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, কনকচূড়া গাছ বৃটিশ আমলে ও পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের চা বাগানগুলোতে রোপণ করা হতো। গাছটি দ্রুত বর্ধনশীল। এটিকে তখন শেডট্রি (ছায়াবৃক্ষ) হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এক সময় গাছটি খুবই জনপ্রিয় ছিল। এ গাছের ডাল কলম করে লাগালেই গাছ হয়ে যেতো। প্রয়োজনীয় পানি ও মাটির পুষ্টি পেয়ে সহজেই গাছটি বৃক্ষে পরিণত হতো।  

এছাড়াও বীজ থেকে সহজেই ফসলটা হয় ও সারা সেকশন ভরে যায়। কিন্তু এখন এ গাছটিকে চা বাগানগুলোতে শেডট্রি হিসেবে আর রোপণ করা হয় না। এ গাছের একটি ডাল কাটলে এর মধ্যে অনেকগুলো ডাল গজায়। বেশি ডালপালা বিস্তার করে নিচে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ছায়া চলে আসে। যা চা গাছের জন্য ক্ষতিকারক। তাই এখন এ গাছগুলোকে চা বাগানে লাগানো হয় না। শুধু সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য রাস্তার কিনারে লাগানো হয় বলে জানান ইবাদুল।  

তিনি আরও বলেন, কনকচূড়া গাছটিকে স্থানীয় ভাষায় জিউল গাছ (জীবিত) বলা হতো। মানে এর ডাল লাগালেই হয়ে যায়, মরে না। গাছটি দ্রুত বর্ধনশীল, মাত্র তিন বছরেই ফুল চলে আসে। গাছগুলো শুধুমাত্র পুরান চা বাগানে আছে। নতুন কোনো বাগানে পাওয়া যাবে না। যে বাগানগুলোর বয়স এক-একশ’ বছর সে বাগানগুলোর সেকশনে হঠাৎ পাবেন। গাছটি এখন একেবারেই বিলুপ্তির পথে।

এখন এ কনকচূড়া গাছটি অর্নামেন্ট-প্লন্ট (অলংকরণকৃত উদ্ভিদ) বা সৌন্দর্যবর্ধনশীল গাছ হিসেবে গণ্য। রাস্তার দু’পাশে শোভাবর্ধনের জন্য লাগানো হয় বলে জানান জ্যেষ্ঠ টি-প্লান্টার ইবাদুল।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২১
বিবিবি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।