ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চৈনিক চমক: প্রস্রাবে সেদ্ধ ডিম স্বাস্থ্যকর!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৫২, মার্চ ৩১, ২০১২
চৈনিক চমক: প্রস্রাবে সেদ্ধ ডিম স্বাস্থ্যকর!

চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর ডংইয়াং –এর এক বিকেল। স্থানীয় স্কুলগুলোর সামনে বাচ্চাদের নিতে আসা অভিভাবকদের মাঝে শুরু হয়ে গেছে নিজের শিশুটিকে নিয়ে ঘরে ফেরার ব্যগ্রতা।

তবে এই সময়টা ডংইয়াং শহরটা যে প্রদেশে অবস্থিত, সেই উপকূলবর্তী ঝেজিয়াং প্রদেশে শত শত সেদ্ধডিম বিক্রেতার ব্যস্ততা শুরুর লগ্নও বটে।

প্রস্রাবে সেদ্ধ করা এই ডিম বসন্তকালে দক্ষিণ চীনে বেশ জনপ্রিয় ‘স্বাস্থ্যকর’ খাবার হিসেবে পরিচিত। এসব ডিম শুধুমাত্র বালকদের, আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে ১০ বছরের কম বয়েসি বালকদের প্রস্রাব দিয়ে সেদ্ধ করতে হয়। তবে গপাগপ খায় ছেলে-বুড়ো সবাই।

শতাব্দী ধরে চলে আসা এই রীতির পেছনে কি কারণ আছে তা জানা যায়নি। এমনকি শুধু বালকদের এবং ১০ বছরের নিচের বালকদের প্রস্রাবই কেন এতে দরকারি- এরও কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি।

তবে এই ডিম হটকেকের মত বিক্রি হয়। বালকদের প্রস্রাবে ডিম জাল দেওয়ার জন্য লিটার লিটার প্রস্রাব সংগ্রহের জন্য স্থানীয় স্কুলগুলোর সামনে ছুটির সময়ে বড় বড় গামলা আর বালতি হাতে ভিড় লেগে যায় ডিমওয়ালাদের। তারা স্কুলগুলোর টয়লেট থেকে মূত্র সংগ্রহ করে।

ডংইয়াংয়ের রাস্তা-ঘাট আর মোড়গুলোতে ফেরিওয়ালারা যখন প্রস্রাবভর্তি পাত্রে ডিম সেদ্ধ করতে থাকেন তখন পথচারীদের নাকে এর যে গন্ধটা লাগে তা নিশ্চয়ই ভোলার নয়। তবে এ ব্যাপারে রয়েছে ভিন্নমত।

‘এই ডিম সুগন্ধিযুক্ত। এটা খেলে আপনি হিট-স্ট্রোকে আক্রান্ত হবেন না। ’ বলেন গি ইয়াওহুয়া নামের ৫১ বছর বয়সী ফেরিওয়ালা। তিনি ডংইয়াং শহরে ‘ভর্জিন বয় এগস’ নামে পরিচিত বেশ জনপ্রিয় ‘মূত্র-সেদ্ধ’ ডিম বিক্রির অসংখ্য স্টলের একটির মালিক।

তিনি আরও বলেন, ‘এই ডিম স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। আমার পরিবার প্রতিবেলা খাবারের সঙ্গে এগুলো খায়। ডংইয়াংয়ের প্রতিটি পরিবার এ জিনিস পছন্দ করে। ’

এই বিশেষ রেসিপিতে ডিম সেদ্ধ করতে পুরো একটি দিন লেগে যায়। প্রথমে ডিমগুলো প্রস্রাবে ভিজিয়ে রাখতে হয়। এরপর পানির বদলে প্রসাবভর্তি পাত্রে সেই ডিম হার্ড-বয়েল করা হয়। পরে চুলা থেকে নামিয়ে ডিমগুলোর খোসা ছাড়ানো হয়। এরপর খোসা ছাড়ানো ডিমগুলো ফের প্রস্রাব ভর্তি পাত্রে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেদ্ধ করা হয়। এসময় ফুটতে থাকো পাত্রে ডিমগুলো যাতে পুড়ে বা ভেঙ্গে না যায় সেজন্য একটু পরপর নতুন করে প্রস্রাব ঢালা হয় এব আগুনের আঁচও নিয়ন্ত্রণ করা হয় যত্নের সঙ্গে।

গি আরও জানান, তাজা ও নোনতা স্বাদের জন্য স্ন্যাক্স হিসেবে জনপ্রিয় এই ডিম বিক্রি করছেন তিনি ২০ বছরেরও অধিক সময় ধরে। প্র্রতিটি ডিম বিক্রি হয় দেড় ইউয়ানে (০.২৪ ডলার)। এই দর একটি সাধারণ ডিমের দুই গুনেরও কিছুটা বেশি।
ডংইয়াংয়ের অনেক বাসিন্দাই জানালেন, পুরুষানুক্রমে তারা বিশ্বাস করে এসেছেন- বালকদের মূত্রসিদ্ধ ডিম শরীরের বাড়তি তাপ নিয়ন্ত্রণ করে, রক্ত সঞ্চালন নির্বিঘ্ন করে এবং শরীরের বলবর্ধক হিসেবে কাজ করে। গি’র কাছ থেকে ২০টি মূত্রসেদ্ধ ডিম ক্রয়কারী লি ইংঝেনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, ‘এই ডিম খেলে কোমড়, পা আর হাড়ের জোড়ার কোনও ব্যথা থাকেনা। এছাড়া কাজের সময়ে বাড়তি শক্তি পাবেন। ’

জনপ্রিয় এই ডিম শুধু রাস্তার দোকানেই বিক্রি হয় না- প্রতিটি পরিবারে প্রস্রাবে সেদ্ধ করে ‘স্বাস্থ্যকর’ ডিম খাওয়া হয়। এজন্য বালকদের মূত্র সংগ্রহে পেশাদার ডিম বিক্রেতাদের সঙ্গে স্কুলগুলোতে লাইন দেন গেরস্থরাও।

এই অদ্ভূত কায়দায় প্রক্রিয়াজাত ডিমের বিষয়ে ঝেজিয়াং প্রদেশের প্রশাসনও ভালোই অবগত। তারা জনগণের এই ‘ভার্জিন বয় এগস’ খাওয়ার বিষয়টিকে তাদের এক ‘দুরধিগম্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তবে চীনাদের সবাই যে মূত্রসেদ্ধ ডিমের অন্ধ ভক্ত তা নয়। চীনা স্বাস্থ্যবিদরা এর স্বাস্থ্যগত সুবিধার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা প্রস্রাবে ডিম সেদ্ধ কালে জীবাণু সংক্রমণ বিষয়ে কিছু সাবধানতার কথা বলেছেন। এছাড়া ডংইয়াংয়ের কিছু বাসিন্দা জানিয়েছেন- তারা এভাবে ডিম খাওয়াটাকে ঘৃণা করেন।

‘ডংইয়াংয়ের একটি ঐতিহ্য এটি। বিশ্বাস করা হয়- এই ডিম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। মনে করা হয়, এটি ঠাণ্ডা লাগাসহ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা প্রতিরোধ করে। তবে আমি এসবে বিশ্বাস করি না। আর তাই আমি এটা খাইও না। ’ বললেন ডংইয়াংয়ের বাসিন্দা ৩৮ বছর বয়সী ওয়াং জুংঝিং।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৬ ঘণ্টা, ৩১ মার্চ, ২০১২

সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।