ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

বেকারদের ভিড় কামলারহাটে

আশরাফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৪৭, এপ্রিল ১, ২০১২
বেকারদের ভিড় কামলারহাটে

ঢাকা: তৈরি পোশাক কারখানায় কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় বেকার শ্রমিকরা ভিড় করছেন ‘কামলারহাটে’। কামলা বা শ্রমিক থেকেই হাটের এরকম নাম।

এর মধ্যে কৃষিশ্রমিকদের বাড়তি চাপ রয়েছে ভাসমান শ্রমবিক্রির হাটে। এতে করে কাজ পাচ্ছেন না বহু শ্রমিক।

প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে কাজের সন্ধানে কামলারহাটে ভিড় করছেন। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি কাজ না পেয়ে হতাশা নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন গ্রামে।

শনিবার সকালে রাজধানীর অদূরে গাজীপুর চৌরাস্তার কামলারহাট ঘুরে প্রান্তিক শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র দেখা গেছে।

কাজের সন্ধানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, শেরপুর, জামালপুর ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরাই মূলত গাজীপুরের শ্রমবিক্রির হাটে ভিড় জমান। তবে গত কয়েক বছর ধরে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল থেকে বিভিন্ন দুর্যোগকবলিত মানুষ এ হাটে আসছেন।

বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়ে উপকূলীয় কৃষি জমি চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ায় সেখানকার বিশাল জনগোষ্ঠী কাজ হারিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন রাজধানী ও এর আশপাশের শিল্পাঞ্চলে। এসব কারণে আগের চেয়ে এধরনের বিভিন্ন কামলারহাটে শ্রমিকদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কয়েকগুণ।

গাজীপুর চৌরাস্তার কামলারহাটে প্রতিদিন গড়ে তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিক জড়ো হয়।

সিরাজগঞ্জ জেলা সদরের বাসিন্দা তৈরি পোশাকশ্রমিক আনোয়ার হোসেন (২৬)। গাজীপুরের বাসন এলাকার রোজ সোয়েটার কারখানায় নিটিং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। আনোয়ার বাংলানিউজকে জানান, একদিন কাজ থাকলে দু’দিন বসে থাকতে হয়। যে পরিমাণ মজুরি পাওয়া যায় তাতে খাওয়া-বাসা ভাড়াই হয় না। তাই কয়েক মাস আগে সোয়েটার কারখানার কাজ ছেড়ে কামলারহাটে কাজের জন্য আসি। কিন্তু এখানেও কাজ নাই।

একই অভিযোগ ময়মনসিংহ জেলার গৌরিপুর থানার দরুয়া গ্রামের সুরুজ মিয়ার (৩৭)। তিনি বলেন, ‘আগে কাজের এতো কমতি ছিল না। গত দেড় বছর ধইরা খুব কষ্টে আছি। দুই মাইয়া, এক পোলা ঠিকমত খাওনও দিতাম পারি না। সপ্তাহে চারদিন কাম করলে তিন দিন বইয়া থাহি। যা কামাই তা নিজেই বইয়া খাইতে অয়, বাড়িত কিছু পাডাইতে পারি না। ’

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার মধ্যমদনপুর গ্রামের টাইলস মিস্ত্রি বশির আহমেদ (৩১)। কৈশোর বয়স থেকেই কাজ করতেন মোটর গ্যারেজে। বিগত ১০ বছর ধরে কাজ করছেন নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে।

তিনি জানালেন, বর্তমানে প্রচুর ভবন নির্মাণ হওয়ার কারণে অন্য কাজের চেয়ে এ কাজের মজুরি একটু বেশি। টাইলস মিস্ত্রি হিসেবে ৬০০ টাকা রোজ মজুরি পান। আর তার হেলপার পায় ৩০০ টাকা। তবে শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় কাজ কম পাওয়া যায়।

শ্রমিকরা জানায়, সাধারণত বোরো ধান লাগানোর পর ও কাটার আগের মধ্যবর্তী সময়ে গ্রামে প্রান্তিক শ্রমিকদের কাজের তীব্র সঙ্কট থাকে। তাই শহরে আশায় বুক বেঁধে আসেন যদি খোঁজ মেলে কোনো কাজের। কিন্তু এ সময়টায় প্রচুর চাপ থাকায় শ্রমবিক্রির হাটের তিন ভাগের এক ভাগ শ্রমিক কাজ পাচ্ছেন।

বাকিদের চরম দুর্দশাকে সঙ্গি করে ফিরতে হয় গ্রামেই। কেউ কেউ খেয়ে না খেয়ে দিনের পর দিন কাজের অপেক্ষায় বসে থাকেন বিভিন্ন স্থানে। হতভাগ্য এসব মানুষেরা রাত কাটান রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড কিংবা বড় বড় ভবনের দেয়াল ঘেঁষে।

সরকারের প্রতি আকুতি জানিয়ে তারা বলেন, ‘আমরা এ দেশের নাগরিক। বেঁচে থাকার অধিকার আমাদেরও রয়েছে। দয়া নয়, কাজ দিয়ে আমাদের বেঁচে থাকার সুযোগ দিন। ’

বাংলাদেশ সময় : ১০১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১২
এআই
সম্পাদনা: ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর/রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।