বিজয়নগর(ব্রাহ্মনবাড়িয়া)থেকে ফিরে: ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবগঠিত বিজয়নগর উপজেলার বুধন্তি ইউনিয়নের শশই-মাইজপাড়া গ্রামের কৃষক জনু মিয়া(৬৭)। বলা যায় শৈশব থেকে নিয়ে জীবনের পুরোটাই পার করেছেন কৃষিকাজ করে।
এক সময় মাঠভর্তি ফসল ঘরে তুলে মনের আনন্দে প্রাণভরে নি:শ্বাস নিতেন, পরিবারে ছিল না কোন অনটন। এখন নির্মল সেই প্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। জমিতে ফসলের উৎপাদন নেমে গেছে অর্ধেকে।
জনু মিয়া বার্ধক্যে পৌঁছে এখন দেখছেন- অনেকটাই বদলে গেছে চিরচেনা তার গ্রামের চিত্র। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা একাধিক ইটভাটা লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে তিতাস নদীর অববাহিকার এসব নৈসর্গিক গ্রামগুলোকে।
এ্যাহন ফুল আইয়াই পইড়া যায়
আক্ষেপের সুরে জনু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘আগে এই গেরামে বিঘায় ২৫/২৬ মণ ধান অইতো। এ্যাহন ১২/১৪ মণও অয় না। গত কয়েক বছর ধইরা গাছে আম ধরেই না। লুইপ্পা(বরবটি), রামাইশ (ঢেঁড়শ), চৈ(শিম), লাউ- এইসব আগে পর্চুর ধইরা থাকতো। এ্যাহন দেহাই যায় না। এক সময় চৈ গোডা (শিম বিচি) ৫ পোড়া (৬০ কেজির মতো) তুলতাম, আর এ্যাহন ফুল আইয়াই পইড়া যায়। ’
অপরিকল্পিত ইটভাটার আগ্রাসনে জনু মিয়ার মতোই আক্ষেপের সুর বিজয়নগরের শশই, বুধন্তি, ইসলামপুর, শাহবাজপুর, চান্দরা, রামপুরের হাজারো কৃষকের। সরেজমিন বিজয়নগরের ইটভাটায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে চোখে পড়ে এই বিপর্যয়ের চিত্র।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বুধন্তির বেশিরভাগ ইটভাটাই গড়ে উঠেছে ফসলি জমির মাঝখানে। ভাটায় ইট ও ইট তৈরির কাঁচামাল আনা-নেয়ার জন্য ট্রাক চলাচলের কারণে প্রচণ্ড ধুলায় নষ্ট হচ্ছে জমির ফসলসহ আশপাশের বাড়িঘর। প্রায় সবক`টি ইটভাটা থেকেই বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নির্গত হতে দেখা গেছে। কালো ধোঁয়ার ক্ষতিকারক প্রভাবে ধান গাছের উপরের পাতা মরে যাচ্ছে। পাতা পড়ছে অন্যান্য গাছেরও।
আগে প্রচুর গাছপালা-ঝোপঝাড় থাকলেও এখন অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গেছে এ গ্রাম। উঁচু জমির মাটি ইটভাটার জন্য কেটে নেয়ায় গোচারণ ভূমিও কমেছে। যার ফলে তীব্র হয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট।
এলাকার জীবন-জীবিকার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করলেও এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই বাসিন্দাদের। প্রতিবাদী কেউ কেউ এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার চেষ্টা করলেও ক্ষমতাধর ভাটামালিকদের অর্থ আর পেশীশক্তির সঙ্গে পেরে উঠছেন না তারা।
অন্যদিকে, আইনি দুর্বলতা থাকায় ছোট-খাট জরিমানা আদায় ছাড়া বড় কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন থেকেই এ অপতৎপরতা বন্ধ করা না গেলে নিকট অতীতেই এই এলাকায় কোনো কৃষি আবাদ সম্ভব হবে না।
আইনে নিষিদ্ধ, তারপরও...
স্থানীয়রা জানান, পুরোপুরি কৃষি আবাদি বিজয়নগর উপজেলায় সীমিত পরিসরে ইটভাটার আগ্রাসন শুরু হয় এক যুগ আগে। শিল্পায়ন ও নগরায়নের কারণে ইটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক বছরের ব্যবধানে এই অঞ্চলে ব্যাপকহারে কৃষিজমিতে ইটভাটা গড়ে উঠতে শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় কেবল বুধন্তি ইউনিয়নেই গড়ে ওঠে ১৪টি ইটভাটা, আর সব মিলিয়ে বিজয়নগর উপজেলাতে ইটভাটার সংখ্যা এখন কমপক্ষে ৩০টি।
প্রচলিত আইনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও অনায়াসেই পাওয়া যাচ্ছে কৃষিজমি বিনষ্ট করে ইটভাটা তৈরির লাইসেন্স। আইনকে বুড়ে[ আঙুল এসব আত্মঘাতী অনুমোদন কেবল কৃষি ব্যবস্থাকেই বিপর্যস্ত করছে না, ইটভাটার প্রভাবে এখানকার জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, নদী, গৃহপালিত পশুপাখি-অন্যান্য প্রাণিবৈচিত্রসহ পুরো ইকো সিস্টেমকে হুমকির মুখে এনে দাঁড় করিয়েছে।
দরিদ্র কৃষকদের অসহায়ত্বের সুযোগে...
দরিদ্র কৃষকদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে প্রভাবশালী ভাটামালিকরা উপজেলা জুড়ে আবাদি জমি লিজ নিয়ে গড়ে তুলছে ইটভাটা। সাধারণতঃ ১০ বছরের চুক্তিতে জমি লিজ নিলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষের আগেই আবার পুনরায় চুক্তি করে নেয় ভাটামালিকরা। প্রতিবছর বিঘাপ্রতি ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা পায় জমিদাতা। ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকার বেশি ফসল ফলাতে পারে না কৃষকরা। অভাবের তাড়নায় অসহায় কৃষকরা ভবিষ্যতের সমূহ ক্ষতির কথা বিবেচনা না করেই ভাটামালিকদের জমি দেয়।
প্রথমে স্বল্প জমি নিয়ে শুরু করলেও ধীর ধীরে পাশের জমি দখলে আনার জন্য নানামুখি অপকৌশলের আশ্রয় নেয় ভাটামালিকরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক কৃষক অভিযোগ করেন, জমিতে ইটের ভাঙ্গা টুকরা ফেলে, কেউবা টয়লেট বানিয়ে ও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে বাধ্য করে কৃষকদের জমি দিতে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধন্তি গ্রামের পশ্চিম অংশে প্রবাহিত (বর্তমানে মৃতপ্রায়) তিতাস নদীর জেগে ওঠা পাড় ভরাট করে গড়ে ওঠে কয়েকটি ইটভাটা। ভাটামালিকদের কেউ কেউ দখল করেছে সরকারি খাসজমিও। এরই মধ্যে অভিযুক্ত ভাটামালিকদের কাছ থেকে জরিমানাও আদায় করা হয়েছে এ বাবদে। এ চক্র তিতাস নদীর বুকের ওপর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে ট্রাকযোগে ইট ও ইট তৈরির কাঁচামাল ‘টপসয়েল’ আনা নেয়া করছে অবাধে।
নদী খননে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভাটামালিকরা
এলাকাবাসী জানান, একসময় তিতাস নদীর ওপর এখানকার কৃষি ও জীবনযাত্রা নির্ভরশীল হলেও কালের বিবর্তনে এ নদীর নাব্যতা হ্রাস পেয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়। তাই জনস্বার্থে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তেতে তিতাস খননের উদ্যোগ নেয়া হলেও ইট আনা-নেয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে- এ আশঙ্কায় নদী খননের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভাটামালিকরা।
আগ্রাসী ভাটা মালিকরা ইটের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল) কিনে নিচ্ছে। ফলে স্থায়ী ভাবে উর্বরতা হারাচ্ছে এখানকার জমি। ইটভাটাগুলোর আগ্রাসনে রক্ষা পাচ্ছে না খেলার মাঠও।
বিজয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ইটভাটায় কৃষিজমির ক্ষতির প্রসঙ্গে বলেন, ‘ক্ষতি হচ্ছে এটা সত্য। আমরা সবাইকে বলছি এসব প্রতিরোধ করতে। ইটভাটার জন্য টপসয়েল নিয়ে যাওয়া কৃষি জমির জন্য সবচে ক্ষতিকর। ’
তিনি জানান, সারা উপজেলায় ১৪ হাজার হেক্টর আবাদি জমি আছে। এর মধ্যে কেবল বুধন্তি ইউনিয়নেই রয়েছে ৪০০ হেক্টর জমি। ইটভাটার কারণে সার্বিকভাবে কৃষির মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা।
পাশের শশই গ্রামে তিতাসের তীরে বিশাল গর্ত করে খেলার মাঠের মাটি তুলে নেয়া হয়েছে ইটভাটার জন্য। ফলে সংকুচিত হয়ে গেছে শিশু-কিশোরদের খেলার মাঠ।
স্থানীয় ইসলামপুর কাজী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেনীর ছাত্র এরশাদুল ইসলাম জানায়, আগে এ মাঠে টুর্নামেন্ট খেলতে ঢাকা থেকে খেলোয়াড় ভাড়া করে আনা হতো। এখন মাঠ গর্ত করে ফেলায় আমরা নিজেরাই খেলাধুলা করতে পারি না। কোনো কোনো সময় ইটভাটার ধোঁয়া এত বেশি হয় যে আমরা ঠিকমত দমও নিতে পারি না।
বেশিরভাগ ইট ভারতে যায়
স্থানীয় সূত্র মতে, এলাকার চাহিদা মিটিয়ে এখানকার তৈরি বেশিরভাগ ইট ভারতে যায়। ভারতে তুলনামুলকভাবে অধিক দাম পাওয়ায় গত কয়েক বছর ধরে বিজয়নগরের বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটা তৈরির হিড়িক পড়ে গেছে। তবে জানা গেছে, এবছর আকস্মিকভাবে ভারতে ইট বিক্রি বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।
এক সময় প্রচুর ধান উৎপাদন হওয়ার পাশাপাশি সবজি আবাদের জন্যও বিজয়নগর উপজেলা ছিল প্রসিদ্ধ। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার প্রভাবে বর্তমানে এলাকার বসতবাড়ির সবজিচাষ এক রকম বন্ধ হয়ে গেছে। বুধন্তির শশই মধ্যপাড়ার ধৈর্যরাণী দাস বলেন, আমারার গেরামে প্রচুর সবজি অইতো। আগে সবজি বেইচা চলতাম। এ্যাহন খাওনেরডাও বাজারত কিইনা আনতে অয়। ’
একই গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় নাজির মিয়া কিন্ডার গার্টেনের অধ্যক্ষ এসতেহারুল ইসলাম শামীম বলেন, ‘ইটভাটা বন্ধের জন্য জোরালোভাবে প্রতিবাদ করা হয় নাই। ওরা সরকার থেকে অনুমোদন নিয়ে আসে। গরীব মানুষদের প্রতিবাদ করার শক্তি কই?’
স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ সবাই ইটভাটার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থানের কথা জানালেও ভাটামালিকদের চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ার কারণে প্রতিবাদ করেও কিছু করা যাচ্ছে না। বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কাজী হারিছুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ভাটামালিকরা অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় এদের বিরুদ্ধে কোনো সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিলেও খুব সাড়া পাওয়া যায় না। এদের এই তৎপরতা এখনি বন্ধ করা না গেলে আগামী ১০ বছর পরে এখানে কোনো কৃষিজমি থাকবে কিনা সন্দেহ। ’
তিনি জানান, কৃষি আবাদের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রীর নির্দেশে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মৃতপ্রায় তিতাস নদী খননের উদ্যোগ নেয়া হলেও ভাটামালিকদের চক্রান্তে তা নস্যাৎ হয়ে যায়। প্রশাসন মাঝেমধ্যে উদ্যোগ নেয়, কিন্তু পরে তা নির্জীব হয়ে যায়।
ভাটামালিকদের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন জনপ্রতিনিধিরাও। ইটভাটার আগ্রাসন প্রসঙ্গে বুধন্তি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বললে বা না বললে কী যায় আসে? যারা ভাটা করেছে তারা রাঘব বোয়াল। অনেক ভাটামালিক আমাদেরকে ট্যাক্সও দিতে চায় না। আমাদের ইউএনও সাহেব নিজে চেষ্টা করেও কিছু করতে পারতেছে না। ’
`নিয়ম মেনেই সব চলছে!`
অপরিকল্পিত এসব ইটভাটা কৃষি, জনস্বাস্থ্য তথা জনজীবনে মারাত্মক ক্ষতি সাধন করলেও ভাটামালিকরা মনে করেন তারা কোনো অন্যায় করছেন না। তাদের মতে, সব নিয়ম মেনেই চলছেন তারা। এসব বিষয়ে বুধন্তির শশই গ্রামে ২০০৯ সালে গড়ে ওঠা শিহাব ব্রিকস-এর মালিক জুয়েল মিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর, ইউনিয়ন পরিষদ, ডিসি ও ইউএনও অফিসের অনুমতি নিয়ে, সব নিয়ম মেনে চলছি। কোনো ক্ষতি হচ্ছে বলে আমাদের জানা নেই। ’
এ বিষয়ে কথা বললে বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড. আশরাফুল আলম বলেন, ‘যারা এগুলো করছে, তারা প্রভাবশালী তাতে সন্দেহ নেই। যারা লাইসেন্স নিয়ে পরিচালনা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ নেই, যারা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, জমির দাতা-গ্রহীতারা এক থাকলে আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে আমরা নিয়মিত মনিটর করছি। ’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছি। প্রতিদিন ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। কৃষিজমির ব্যবহার সংক্রান্ত কৃষিমন্ত্রণালয়ের একটি সার্কুলার হওয়ার কথা। আমরা এখনো এটি হাতে পাইনি। সার্কুলার পেলে তখন আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারবো। ’
ইটভাটার অনুমোদন প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘বিষয়টি পরিবেশের সাথে বেশি সম্পৃক্ত। পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিয়ে দিলে আমাদের না দিয়ে কিছু করার থাকে না। ’ এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য গণমাধ্যমে বেশি করে প্রচার করা উচিত বলেও মনে করেন জেলা প্রশাসক।
ঝুঁকিতে শিশু ও গর্ভবতী মায়েরা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিজয়নগরের বুধন্তি এলাকার বাসিন্দা ড. তোফাজ্জল ইসলাম। ইটভাটার অব্যাহত আগ্রাসনে ওই অঞ্চলের কৃষি, জনস্বাস্থ্যসহ সার্বিক জনজীবনের বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ হুমকি প্রসঙ্গে ড. ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘অপরিকল্পিত এসব ইটভাটা নানামুখী সংকট তৈরি করছে। এখানকার ইটভাটাগুলো প্রচুর পরিমাণে ক্ষতিকারক কার্বনকণা, কার্বন মনোক্সাইড ও সালফার অক্সাইড নির্গত করছে। পরিবেশে প্রচুর তাপ বিকিরণ করছে। যার ফলে এই এলাকার শিশুদের মধ্যে প্রতিবন্ধী হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে। ঝুঁকির মধ্যে থাকবে গর্ভবতী মায়েরাও। উদ্ভিদ ও জীবজগতের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে এই জনপদে। ’
তিনি বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে লক্ষ্য করছি এলাকাতে মৌমাছি, প্রজাপতি, ভোমরা ইত্যাদি উপকারি পতঙ্গ, যারা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে ফল ধরতে সহায়তা করতে-তারা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। ফলে ফলন অনেক কমে গেছে। ইট বানানোর জন্য টপসয়েল কেটে নেয়ায় খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় স্থায়ী প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে। ধীরে ধীরে হয়তো পুরো অঞ্চলই কৃষি আবাদের জন্য অনুপয়োগী হয়ে পড়বে। ’
তোফাজ্জল ইসলাম জানান, বিশ্বের শতকরা ৪ ভাগ ইট বাংলাদেশে তৈরি হয়। দেশে প্রতি বছর শতকরা ৫.৬ ভাগ হারে ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। এমনিতে প্রতি বছর দেশের মোট ভূমির ১ ভাগ আবাসন ও অন্যান্য প্রয়োজনে কমছে। তারপর ইটভাটা যদি নয়া উপসর্গ হয়ে দাঁড়ায় তবে তা হবে খুবই বিপজ্জনক। দেশে বিরাজমান খাদ্য সংকটের মাঝে এটা নতুন ঝুঁকি তৈরি করবে।
তিনি মনে করেন, শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য ইটের প্রয়োজন রয়েছে। তবে তা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে পরিবেশ সম্মত উপায়ে করা যেতে পারে। কাঁচামাল হিসেবে বর্জ্য পদার্থ ব্যবহার এবং অনাবাদি ও পতিত জমি ভাটা তৈরির ক্ষেত্রে বেছে নেয়া যেতে পারে। সর্বোপরি কৃষিজমি রক্ষায় ভূমি ব্যবহারে কঠোর আইন জরুরি, যাতে জমির মালিক চাইলেও কৃষি জমি অন্য কাজে ব্যবহার করতে না পারেন।
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৪৩৯ ঘন্টা, এপ্রিল ৪, ২০১২
এআই
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর;
জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।