ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

‘প্লেটনিক প্রেম’ প্লেটোর মতবাদ নয়!

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:৫৪, এপ্রিল ৮, ২০১২
‘প্লেটনিক প্রেম’ প্লেটোর মতবাদ নয়!

‘প্লেটনিক লাভ’ বলে যে কথা বিশ্বময় প্রচলিত সেই নিষ্কাম প্রেমের সঙ্গে প্লেটোর কোনও সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ অমর গ্রিক দার্শনিক প্লেটো’র সঙ্গে প্লেটনিক প্রেমের কোনো সংযোগ নেই! ড. জে কেনেডি নামের এক পণ্ডিতের দাবি এমনই।



তিনি বলেন, প্লেটো কখনোই তথাকথিত প্লেটনিক প্রেমে বিশ্বাসী ছিলেন না। খৃস্টপূর্ব যুগের গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর পাণ্ডুলিপিতে থাকা সাংকেতিক ভাষার পাঠোদ্ধার করে ড. কেনেডি এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বলে জানান।

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বহুল আলোচিত যৌনতাবিহীন অপার্থিব প্রেমের সঙ্গে প্লেটোর নাম জড়িয়ে আছে। তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়- যৌনাকাঙ্ক্ষাহীন প্রেমই হচ্ছে প্রেমের সর্বোত্তম রূপ। ড. কেনেডির মতে- প্লেটো নিজে যৌন সম্ভোগে তৃপ্ত হতেন, তবে উচ্ছ্বৃংখলতা ও বৈরাগ্যবোধ- এ দু’য়ের মাঝামাঝি অবস্থানে থেকে।     

ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান-ইতিহাসবিদ ড. জে কেনেডি প্লেটোর লেখায় থাকা গোপন সংকেতের পাঠোদ্ধার করে জগৎশ্রেষ্ঠ গ্রিক দার্শনিকের লেখা ও মতবাদের নয়া এই ব্যাখা দাঁড় করিয়েছেন।

ড. জে’র মতে, ‘তরুণদের বিভ্রান্ত করা’র অভিযোগে কর্তৃপক্ষ প্লেটোর শিক্ষক সক্রেটিসের প্রানদণ্ড কার্যকরের পর প্লেটো নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এরই ফলশ্রুতিতে বিপদ এড়তে তিনি তার নিজের সত্যিকারের বিশ্বাস তথা মতবাদকে গোপন করার জন্য একধরনের দুর্বোধ্য সাঙ্গিতিক সঙ্গেত ব্যবহার করেন। ’  
 
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সাইন্স অনুষদের সেন্টার ফর দ্য হিস্টরি অফ সাইন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড মেডিসিন বিভাগে গবেষণারত শিক্ষক ড. জে কেনেডি ২০১০ সালে প্লেটোর দুর্বোধ্য ওইসব গুপ্ত সংকেতের পাঠোদ্ধার কৌশল আবষ্কার করেন। তার ওই কৌশলের ওপরে গত বছর যে বইটি প্রকাশ করেন তার নাম “দ্য মিউজিক্যাল স্ট্রাকচার অফ প্লেটো’স ডায়লগস”।

“গ্রিকদের স্বর্ণযুগের আইনস্টাইন হিসেবে বিবেচিত মহাপণ্ডিত প্লেটোকে সুদীর্ঘকাল যাবত ‘কামহীন প্রেম’ বা প্লেটনিক লাভের প্রবক্তা হিসেবে মেনে এসেছে মানুষ। কিন্তু এ গবেষণা প্রমাণ করেছে- প্লেটো ওই ধরনের মত পোষণকারীদের থেকে অনেক দূরের মানুষ ছিলেন,” বলেন ড. কেনেডি।  

“অর্থোদ্ধারকৃত সঙ্কেতগুলি বলছে- প্লেটো কোনওমতেই প্রচলিত ‘প্লেটনিক লাভ’ এর প্রবক্তা ছিলেন না। বস্তুত তিনি (প্রেমের ক্ষেত্রে) মধ্যপন্থা (চরম উচ্ছ্বৃঙ্খল আর বৈরাগ্য’র মাঝামাঝি) অনুসরণের পক্ষে গুরুত্বারোপ করে গেছেন। তিনি চেয়েছেন যৌনতার বিষয়ে মানুষ যাতে ‘উচ্ছ্বৃঙ্খলতা’ আর ‘নিষ্পৃহতা’ দুটোই বর্জন করে। ”

‘প্লেটোনিক প্রেম’ আর এর সঙ্গে প্লেটোর সম্পর্ক না থাকার বিষয়ে নিজের আবিষ্কৃত মতের বিষয় ব্যাখ্যা করে ড. জে কেনেডি আরও বলেন, “প্লেটোর আগে রতিক্রিয়ার বিষয়টিকে কাম-প্রশমন আর বংশধর উৎপাদনের একটি আটপৌরে বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হতো। প্লেটো পশ্চিমা যৌনতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী মোড় এনে দেন এবং কারও কারও মতে তিনি ‘প্রেম’কে আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে প্লেটোর কাছে প্রেমময় যৌনাবেগ বা কামোদ্রেকারী প্রেম ছিল এক আধ্যাত্মিক শক্তি, যা মনুষ্যত্বের গভীরতর স্তরে গিয়ে নিজের আত্ম-অনুসন্ধানে সচেষ্ট হতে আমাদেরকে প্রবৃত্ত করে। বাসনা বা প্রেম- এ হচ্ছে এক ধরনের সৃষ্টিশীল আবেগ (শক্তি) যা যুগে যুগে শিল্প, সাহিত্য, আর বিজ্ঞানের এগিয়ে যাওয়ার পথে যুগিয়েছে অনুপ্রেরণা। ”

বাংলাদেশ সময়: ২২৪১ ঘণ্টা, ০৮ এপ্রিল, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।