ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

পরীক্ষা আগ্রহ কমায়: আইনস্টাইন

বাবু আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৯, এপ্রিল ৯, ২০১২
পরীক্ষা আগ্রহ কমায়: আইনস্টাইন

জার্মানিতে ১৮৭৯ সালে আলবার্ট আইনস্টাইনের জন্ম । খুব অল্প বয়সেই তার প্রতিভার বিকাশ ঘটে।

মাত্র ১২ বছর বয়সে, যখন তার সহপাঠীরা তাদের প্রাত্যহিক স্কুলের কাজ নিয়ে ব্যস্ত তখনই আইনস্টাইন শিক্ষকের কাছ থেকে ধার করে আনা উচ্চতর গণিতের বই সমাধান করতেন। মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি তার সূত্রের পরিলেখ ধারণা করেন এবং দশ বছর পর তা বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপনের উপযোগী করে তোলেন।

আইনস্টাইনকে একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ছাড়াও দার্শনিক এবং রাষ্ট্রনায়ক হিসেবেও দেখা হতো। তার মেধা এবং গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখা এবং সমাজের নানা দিকে ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। একুশ শতকেও তিনি সর্বকালের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং সর্বশ্রেষ্ট চিন্তাবিদ হিসেবে অভিহিত হন।

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি প্রেসের সিনিয়র এডিটর অ্যালিস ক্যালাপ্রাইস আইনস্টাইনের কাগজপত্র নিয়ে প্রায় ত্রিশ বছর কাজ করেছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আইনস্টাইনের উদ্ধৃতিগুলো নিয়ে একটি বই বের করেন।

আইনস্টাইনের প্রায় ১৬০০ উদ্ধৃতি নিয়ে ৬০০ পাতার বই প্রকাশ হয় ২০১১ সালে। অ্যালিসের যত্নে বইটিতে আবারো প্রকাশিত হয় আইনস্টাইনের নানান দিক।

সেই বইটি থেকে আইনস্টাইনের সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ নিয়ে অনলাইন ব্লগে একজন ব্লগার পোষ্ট আকারে দিয়ে রেখেছেন। সেই পোষ্টটিই অনুবাদ করে দেওয়া হলো।  

প্রশ্নঃ পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে সুদীর্ঘ কর্মজীবনের পর আপনি কিভাবে বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িত করবেন?

আইনস্টাইনঃ বিজ্ঞান হচ্ছে আমাদের বিচিত্র ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতার সঙ্গে চিন্তা ভাবনার মিলন। এ মিলনের একক অভিজ্ঞতাকে অবশ্যই তাত্ত্বিক কাঠামোর সাথে এমনভাবে মেলাতে হবে যার ফল অবশ্যই অদ্বিতীয় এবং বিশ্ব্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।  

ইন্দ্রিয় অভিজ্ঞতা হচ্ছে সেই জিনিস যা আমরা অনুভব করি। কিন্তু তত্ব বা থিওরি অনুবাদ করা হয় বিজ্ঞানের ভাষায়। এটি অবশ্যই কাল্পনিক। এগুলো সবসময়ই প্রশ্নের এবং সন্দেহের তৈরি করে।

প্রশ্নঃ যেসব তরুণরা বিজ্ঞানকে নিজেদের ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চায়; তাদের প্রতি আপনার কোনো উপদেশ আছে?
 
আইনস্টাইনঃ খুব প্রতিভাধরদের জন্যেও বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করে কিছু অর্জন করা কষ্টকর। কিছু অর্জন থাকলেও তার মূল্য খুবই সামান্য। কিছু অর্জন করতে হলে মাত্র একটা উপায়ই আছে। সেটি হচ্ছে ব্যবহারিক প্রয়োগের উপরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া।  

এর ফলাফল অবশ্যই বাস্তবসম্মত হবে। এছাড়া পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে হবে।

প্রশ্নঃ বৈজ্ঞানিক ক্যারিয়ারের অর্থনৈতিক বাধা কেমন?

আইনস্টাইনঃ যদি কাউকে একদমই আয়-রোজগারের কথা চিন্তা করতে না হয় তাহলে তার জন্য বিজ্ঞান অবশ্যই আশীর্বাদস্বরুপ।

আমি মনে করি, আপনি যে বিষয়ে পারদর্শী সে বিষয়েই কাজ করা উচিত। যখনই কোন দায়বদ্ধতা থাকবে তখন কেউই আর বিজ্ঞান চর্চার আসল মজা পাবে না।

প্রশ্নঃ একজন বিজ্ঞানী সারাজীবনের সাধনায় কি পেলে অথবা আবিষ্কার করলে নিজের পেশাটি তার কাছে উপযুক্ত মনে হবে?

আইনস্টাইনঃ বিজ্ঞান কখনোই একজন মানুষকে উন্নত শ্রেণীতে পরিণত করে না। কিংবা ধনীও করে না। কিন্তু সৃষ্টিশীল কাজ করার সংগ্রাম কিছু সফলতা এনে দেয়।

আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষের ভেতরে বিজ্ঞানের জন্য প্রত্যাশী মন রয়েছে। যে মন সবসময় সন্তুষ্ট হতে চায়।
 
প্রশ্নঃ কিন্তু আমার মনে হয় নতুন একটি জ্ঞান যেমন আলো আনে তেমনি একটি আবিষ্কারই পারে একজন বিজ্ঞানীর পেশা জীবনকে লাভবান বা উপভোগ্য করে তুলতে।

আইনস্টাইনঃ এই ‘আবিষ্কার’ নিজেই একটা শোচনীয় শব্দ। আবিষ্কার হচ্ছে সেই জিনিস যা ইতোমধ্যেই তৈরি হয়ে যাওয়া একটা বিষয়কে তুলে ধরা। যদিও এর সাথে প্রমাণ  দেওয়া থাকে কিন্তু তারপরেও তা আবিষ্কারের চরিত্রের সঙ্গে যায় না।

কিন্তু চুড়ান্ত ফলাফলের সময় যদিও তা শেষ পর্যন্ত আবিষ্কারের দিকেই এগোয়। যদিও আবিষ্কার বিষয়টি শেষ পর্যন্ত কোন সৃজনশীলতার পরিচয় দেয় না ।

প্রশ্নঃ বিজ্ঞান বিষয়ক প্রশিক্ষণের জন্য আপনি কোন ধরনের স্কুলের পড়ার উপদেশ দেবেন?

আইনস্টাইনঃ একটি স্কুল সবসময় একজন শিক্ষার্থীকে মিষ্টভাষী করে গড়ে তুলতে চায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কখনোই শিক্ষার্থীদের বিশেষজ্ঞ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে না।

এসব মিষ্টভাষীদের আমার প্রশিক্ষিত কুকুর মনে হয়। সবাই বিশেষজ্ঞ হতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেষ্টা জরুরী।  

প্রশ্নঃ একজন শিক্ষকের মধ্যে আপনি কি কি গুণাবলী দেখতে চান?

আইনস্টাইনঃ শিক্ষকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে জ্ঞান বিতরণ না করে তাদের মধ্যে জ্ঞান অন্বেষণের চাহিদা জোগানো। একজন ছাত্রের মধ্যে সৃজনশীল অথবা বৈজ্ঞানীক যে মেধাই থাকুক না কেন; তার প্রশংসা করতে হবে।

শিক্ষকদের জন্যেও এটা একটা শিল্প যার মাধ্যমে সে একজন ছাত্রের মধ্যে সৃষ্টিশীল ভাব বা জ্ঞান অর্জনের আনন্দ জাগিয়ে তুলতে পারে। বেশীরভাগ শিক্ষকই মুল্যবান সময় নষ্ট করে শিক্ষাথীরা কি জানে না সে বিষয়ে প্রশ্ন করে।

শিক্ষকের দায়িত্ব হচ্ছে, শিক্ষার্থীর মন কি জানতে চায়, সে বিষয়টি খুঁজে বের করা।

প্রশ্নঃ একজন ছাত্রের মধ্যে কি কি বৈশিষ্ট থাকা উচিত?

আইনস্টাইনঃ  কোন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করাই শিক্ষার উদ্দেশ্য নয়। জ্ঞান অর্জন খুব সহজ। বই পড়লেই জ্ঞান পাওয়া যায়।

শিক্ষার অর্থ হচ্ছে কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তার করার প্রশিক্ষণ। এই প্রশিক্ষণ কোনো বইয়ে পাওয়া যায় না। এটি অর্জন করে নিতে হয়।

প্রশ্নঃ শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

আইনস্টাইনঃ আমি সবসময়ই পরীক্ষার বিরোধীতা করি। পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের জানার আগ্রহকে মেরে ফেলে। শিক্ষার্থীর জীবনে কোনভাবেই দুইটির বেশি পরীক্ষা দেওয়া উচিত নয়।

আমি হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সেমিনার আয়োজন করতাম। শিক্ষার্থীরা যদি মনোযোগ দিয়ে শুনতো তাহলেই আমি তাদের ডিপ্লোমা দিয়ে দিতাম।

প্রশ্নঃ একজন বিজ্ঞানীকে গবেষণার জন্য আপনি কী উপদেশ দেবেন?

আইনস্টাইনঃ সহজেই যে গবেষণার ফলাফল অর্জন সম্ভব; এমন বিষয়ে গবেষণা করা উচিত নয়।

প্রশ্নঃ বিজ্ঞানকে কিভাবে শিল্পের সঙ্গে যুক্ত করবেন?

আইনস্টাইনঃ  দক্ষতার নির্দিষ্ট সীমা পার হয়ে গেলেই বিজ্ঞান ও শিল্প যুক্ত হবে। আমি বলতে চাই, প্রত্যেক বিজ্ঞানীই একজন বড় মাপের শিল্পী।
-----------------------------------------------
আইনস্টাইনের উদ্ধৃতি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অনলাইনে ব্লগার স্বাধীনতা নিয়েছিলেন।   উদ্ধৃতি বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাক্ষা‍ৎকার এমনভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছেন যাতে আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, বিশ্বাস-অবিশ্বাসগুলো মানুষ জানতে পারে।

পরিশেষে তিনি উল্লেখ করেন, আইনস্টাইন তার ৬২তম জন্মদিনের কিছুদিন পরেই তিনি তার বন্ধু জুলিয়াসবার্গকে একটি চিঠি লেখেন। যাতে লেখা ছিল ‘তুমি ও আমি, আমাদের মত মানুষরা যতদিনই বাঁচুক না কেন! আমরা কোনদিনই বুড়ো হবো না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১২

সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক, স্বপ্নযাত্রা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।