মুম্বাইয়ের আর্থার রোড জেলখানায় বন্দি মৃত্যুণ্ডপ্রাপ্ত পাকিস্তানি সন্ত্রাসী আজমল কাসাবের সেবায় ব্যবহার হচ্ছে কারাগারের পুলিশ ও কমান্ডোদের খাবার তৈরির জন্য নির্ধারিত রন্ধনশালা। এ নিয়ে হিন্দি দৈনিক নবভারত টাইম্স সংবাদ শিরোনাম করেছে, ‘কমান্ডো ভুখে, কুক খিলা রাহে থে কাসাব কো বিরিয়ানি’ অর্থাৎ কমান্ডোরা থাকছে না থেয়ে আর কাসাবকে বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছে বাবুর্চি।
গত সোমবার পুলিশের লোকবলের অবস্থান নিয়ে খোঁজ-খবরকালে জানা যায়, মুম্বাইয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হমলায় জড়িত একমাত্র জীবীত পাকিস্তানি নাগরিক আজমল কাসাবের জন্য কর্তৃপক্ষের অজ্ঞাতে পুলিশের জন্য নির্ধারিত পাকঘরে গত তিন বছর যাবত তৈরি হচ্ছে বিরিয়ানিসহ মনপসন্দ নানা খাবার। আর এ কাজে শুধু একজন নয়, ছয় ছয়জন কুককে নিযুক্ত করা হয়।
জানা গেছে, রাঁধুনী সংকটের কারণে মুম্বাই পুলিশের সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবত খাবারের কষ্ট ভোগ করছেন। এছাড়া মুম্বাইর নাগপাড়া পুলিশ হাসপাতাল ও পুলিশের বিশেষ দল কিউআরটিএস (কুইক রেসপন্স টিম) এর কমান্ডোরা দীর্ঘদিন যাবৎ পাচকবিহীন অবস্থায় চরম কষ্টে দিন পার করছিলেন। আর সেই পুলিশের বাবুর্চিরা কিনা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আজমলের জন্য মোগলাই খানা পাকিয়ে যাচ্ছিল!
ধারণা করা হচ্ছে, পুলিশের ঊর্দ্ধতন মহল নিম্ন পদস্থদের পর্যায়ে খোঁজ-খবর না রাখার কারণে এ চমকপ্রদ অবিশ্বাস্য কাণ্ডটি ঘটে আসছিল।
গত সোমবার মুম্বাই পুলিশ কমিশনার অরূপ পাটনায়ক যখন জানতে পারেন যে, একজন হেডকুকসহ পুলিশ বাহিনীর ৬ জন কুককে কোনো পুলিশের নির্দেশনা ছাড়াই আর্থার রোডের জেলে পাঠানো হয়েছে আজমল সেবায়, তখন দ্রুত তাদেরকে যার যার সাবেক কর্মস্থলে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।
মুম্বাইতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ১৬৬ ব্যক্তিকে হত্যাকারীদের অন্যতম চিরশত্রু পাকিস্তানি নাগরিক কাসাবকে ভালোমন্দ খাওয়ানোর দায়িত্বে থাকা ওই ৬ কুক হচ্ছেন- জ্যোতিরাম সুতার, কৃষ্ণ তুরাস্কার, জগদীশ শেটটি, পান্ডুরাম গাবরে, অম্বরে ও হাজারে। এদের সবাইর চাকরি ২০০৮ সালে ওই জেলখানায় স্থানান্তর করা হয়।
জেলসূত্র জানায়, এসব কুক ১৫ দিন অন্তর শিফটে কাজ করছিল। ওই সময়টায় তারা কার্যত জেলবন্দি হয়েই থাকতো। অর্থাৎ তারা বাইরে বের হতে পারতো না। তারা আজমল এবং তার জেলে প্রেষণে দায়িত্ব পালনরত ৭ জন জেলারের জন্য খাবার তৈরি করতো।
তদন্তে জানা গেছে, ওই ৬ন পাচককে বেআইনিভাবে একাজে নিয়োগ করেন আর্থার রোড জেলের সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট সতি সাথী। এ বিষয়টি মুম্বাইর একজন অ্যাডিশনাল কমিশনার অবগত ছিলেন।
এ ব্যাপারে সতির কোনও বক্তব্য জানা যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কারাগার আর পুলিশ দু’টি আলাদা বিভাগ। সে সূত্রে কোনও কারা কর্মকর্তার অধিকার নেই যে তিনি পুলিশের পাচকদের বদলি করতে পারেন। একাজ শুধু মুম্বাই পুলিশ কমিশনারের অনুমোদনক্রমেই হওয়ার কথা।
তবে আইজি (প্রিজন) সুরেন্দর কুমার এ ব্যাপারে বলেন, কাসাবের নিরাপত্তার কথা ভেবে ওই কুকদের নেওয়া হয়েছিল। আমরা বাইরের যে কাউকে তার খাবার তৈরির দায়িত্ব দিতে পারি না। আর কুকদের সেখানে অবৈধভাবে আটকে রাখাও হতো না। জেলখানায় অল্প সময়ের ব্যবধানে কোনো ব্যক্তির বারবার প্রবেশ ও নির্গমণ নিয়ন্ত্রণে নিরাপত্তাজনিত বিধি-নিষেধ রয়েছে।
এ কারণে ওই কুকদের টানা কয়েকদিন জেলের ভেতরে থাকতো হতো।
তবে আশা করা যায়, তদন্ত শেষেই জানা যাবে এই ঘটনার আসল কারণ কী ছিল।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর অপর ৯ জন পাকিস্তানি সন্ত্রাসীসহ আজমল কাসাব মুম্বাইর তাজ হোটেল ও আশপাশের এলাকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালায়। নির্মম ওই হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ১৬৬ ব্যক্তি নিহত হন। ওই ঘটনায় ভারতীয় পুলিশ ও কমান্ডোদের পাল্টা আঘাতে আজমলের সঙ্গীদের সবাই নিহত হয়। আজমল মারাত্মক আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয়।
২০১০ সালের ৬ মে ভারতের একটি আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, বিষ্ফোরক বহন, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাসহ মোট ৮০টি অভিযোগ আনা হয়।
পাকিস্তান প্রথমে কাসাব তাদের নাগরিক নয় বলে দাবি করলেও পরে স্বীকার করে- কাসাব একজন পাকিস্তানি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ১০ এপ্রিল, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুটএডিটর