বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। নিজেদের উৎপাদন ছাড়াও বিভিন্ন খাদ্যশস্য বিদেশ থেকে আমদানির পরও দেশে খাদ্য সংকট থেকে যায়।
ধানক্ষেতে কীটনাশকসহ নানা ওষুধ প্রয়োগে এসব সমস্যা থেকে মুক্তির চেষ্টা সত্ত্বেও প্রতি বছর গড়ে ১৫% ফসল নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময়ে পোকা বা রোগ শনাক্তকরণে কৃষকের অজ্ঞতা বা বিলম্বে বুঝতে পারার ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতিটা ঠেকানো যায় না। ফসলের রোগ আগেভাগে চিহ্নিত করা গেলে ক্ষতি অতটা হয় না।
ঠিক এই চিন্তা থেকে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছে ‘প্রজেক্ট বিটল’ নামে একটি সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যার সমৃদ্ধ মোবাইল ফোন দিয়ে রোগাক্রান্ত ধান-পাট-সব্জিসহ ফসলের ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে সফটওয়ারটি সংশ্লিষ্ট রোগ বা পোকার পরিচিতি এবং তা থেকে মুক্তির উপায় বাতলে দেবে।
তবে এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে হবে উইন্ডোজ মোবাইল ফোনসেট দিয়ে।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্পের একজন সদস্য রাহাত ইয়াসির বাংলানিউজকে জানান, গবেষণায় দেখা গেছে, ধান গাছে ২২ ধরনের রোগ হয়। তবে প্রধান রোগ ১০ টি। আর পোকাজনিত কারণে ১২ ধরনের রোগ হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে পোকার জন্য শস্য বা ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। সেজন্যই আমরা এ প্রকল্পের নাম দিয়েছি ‘প্রজেক্ট বিটল’।
বিটলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক সম্পর্কে রাহাত বলেন, রোগ শনাক্ত করে ওষুধের নামও বলে দেবে সফটওয়্যারটি। শুধু তাই নয়; পাতার রঙয়ের ছবি তুললে সফটওয়্যার পাতার রঙটি বিশ্লেষণ করে বলে দেবে, এই ফসল চাষের জন্য কি পরিমাণ ও কী সার প্রয়োজন।
তবে একটি উইন্ডোজ মোবাইলের দাম নিম্নে ১৮ হাজার টাকা। একজন কৃষকের হাতে কীভাবে এ দামি মোবাইল সেট পৌঁছাবে? এ বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাহাত বলেন, প্রতিটি গ্রামে একটি মোবাইল গেলেই হবে। প্রতি কৃষকের হাতে এই মোবাইল সেট যাওয়ার প্রয়োজন নেই। সমবায়ভিত্তিতে সবাই চাঁদা দিয়ে একটি সেট কিনে নিলেই হবে।
বিটল সফটওয়্যারটি তৈরি করেছেন রাহাত ইয়াসিরসহ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির চার শিক্ষার্থী। অপর তিন জন হলেন- সাইফ তাইফুর, শুভ কুমার পাল ও জিল্লুর রহমান। এ প্রকল্পটি তৈরি করতে নির্দেশনা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী খান মেহেদী আল রিয়াজ। তিনি এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
প্রযুক্তিগত দিকটি সম্পর্কে তারা জানান, এটি উইন্ডোজ মোবাইল ফোনের জন্য একটি অ্যাপলিকেশন। যার নাম আমরা দিয়েছি ‘বিটল’। ফসলের সব ধরনের পোকা ও রোগ সংক্রান্ত ডাটাবেজ রাখা হয়েছে একটি ক্লাউড সার্ভারে। তবে দেশিয় রোগ ও পোকা সংক্রান্ত ডাটাবেজটি রাখার ব্যবস্থা হয়েছে মোবাইল ফোনের মেমোরিতে।
ক্লাউড সার্ভার ব্যবহার সম্পর্কে তারা বলেন, এই সফটওয়্যার পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে গিয়ে ব্যবহারযোগ্য। সে জন্যই ক্লাউড ব্যবহার করা হয়েছে।
মেধাবী এই ৪ তরুণ স্বপ্ন দেখছেন- বিটল সফটওয়্যার ব্যবহার করে পৃথিবীর খাদ্য সমস্যার অনেকটাই দূর করা সম্ভব হবে। তাদের এই প্রকল্পটি ‘মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপ’ প্রতিযোগিতার জন্য অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশে থেকে সর্বশেষ বাছাই করা ১৪ টি প্রকল্পে নির্বাচিত হয়েছে।
এখন তাদের শুধু অপেক্ষার পালা। এপ্রিলের শেষেই জানা যাবে মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছে কি না বিটল। তবে এর উদ্ভাবকরা যথেষ্ট আশাবাদী বলে জানান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১২
সম্পাদনা: আহসান কবীর, আউটপুট এডিটর