ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ক্লিনিকের শহর ময়মনসিংহ: মৃত্যু ঝুঁকিতে রোগীরা

ওবায়দুল্লাহ সনি, নিউজরুম এডিটর ও আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:০৩, এপ্রিল ২১, ২০১২
ক্লিনিকের শহর ময়মনসিংহ: মৃত্যু ঝুঁকিতে রোগীরা

ময়মনসিংহ: দেশের পুরনো ও ঐতিহ্যময় একটি শহর ময়মনসিংহ। সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ, হাট-বাজার, হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ নানা কারণে ময়মনসিংহ জনবহুল শহর।

দিন দিনই এ শহরের বিস্তৃতি বেড়েই চলেছে।

তবে চিকিৎসার জন্যই এ শহরে সবচেয়ে বেশি মানুষ আসে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের একমাত্র সর্ববৃহৎ চিকিৎসা কেন্দ্র ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। আর এ হাসপাতালকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে শত শত বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। যার বেশিরভাগই অবৈধ। তবে তা দেখার কেউ নেই।

আর এ সুযোগেই ময়মনসিংহ শহরে অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণার মহাৎসব। প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের রয়েছে আলাদা আলাদা দালালচক্র। এরা ময়মনসিংহ মেডিক্যল কলেজ হাসপাতাল এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে নিয়োজিত।
এছাড়া দালালচক্রের সদস্যরা গ্রাম থেকে নিরহ রোগীদের মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে এসব ক্লিনিকে নিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নেয় চিকিৎসার আগেই। কখনও আবার ভুল চিকিৎসায় লাশ হয়ে ফিরতে হয় রোগীদের।     

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে গজিয়ে উঠা এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও সরকারি নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। প্রতিনিয়তই চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয়ের নামে রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

সম্প্রতি ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে লাকি বেগম (২৮) এসেছিলেন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা নিয়ে মা হতে। কিন্তু শহরে পা রাখতেই দালালের খপ্পরে পড়েন তিনি। দালালের সহযোগিতায় শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়ে তিনি ভর্তি হন। কিন্তু তিনি আর মা হতে পারেননি। ভুল চিকিৎসায় অকালেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয় তাকে।

এদিকে ময়মনসিংহ শহরে প্রায় তিন শতাধিক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থাকলেও জেলা সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব মতে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৯০টির। বাকিগুলো চলছে পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স অথবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন এমন আবেদন দেখিয়ে।

অথচ দিনের আলোতে অবৈধভাবে কয়েকশ ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ব্যবসা চালিয়ে গেলেও জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. আতিয়ার রহমান বাংলানিউজকে জানান তিনি এসবের কিছুই জানেন না।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় ডাক্তার, নার্স, অপারেশন থিয়েটার ছাড়াই চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। অথচ সরকারি নীতিমালায় ১০ শয্যার একটি ক্লিনিকে ৩ জন এমবিবিএস ডাক্তার, ৬ জন ডিপ্লোমা নার্স, ৬ জন আয়া এবং ৩ জন সুইপার নিয়োগ বাধ্যতামূলক থাকলেও কয়েকটি ক্লিনিক ছাড়া এসবের ধার ধারছেনা অন্যগুলো।

অনেক ক্লিনিক মালিক নার্সদের ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নেয়।

ময়মনসিংহ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিক সমিতির সহ-সভাপতি হরি শংকর বাংলানিউজকে বলেন, ‘গুটিকয়েক ক্লিনিকের কারণে ভালগুলোর দুর্নাম হচ্ছে। ’

ময়মনসিংহ শহরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অনুসন্ধান চালিয়ে পাওয়া গেছে আরও ভয়াবহ তথ্য। শহরের ভাটিকাশর, বাগমারা, ব্রাহ্মপল্লী, চরপাড়া, মাসকান্দা, ধোপাখোলা মোড়সহ অনেক ক্লিনিক মালিকরা ছিলেন এক সময় নার্স কিংবা আয়া। আর এ নার্সরাই তাদের পছন্দের দালালদেরকে বিয়ে করে অথবা পার্টনার নিয়ে শুরু করেন ক্লিনিক ব্যবসা। তারই সুবাদে বনে গেছেন ক্লিনিক মালিক। এসব ক্লিনিকে পরিচিত কিছু ডাক্তাররের নাম ব্যবহার করে বড় বড় সাইনবোর্ড লাগিয়ে রোগীদের সঙ্গে করা হচ্ছে নানা প্রতারণা।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শাহজাহান বাংলানিউজকে বলেন, ‘এসব ক্লিনিকের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জনের প্রতি অনুরোধ জানাই।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১২

সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।