শিরোনামে ধাক্কা খেলেন? ধাক্কা খেয়ে অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই। এমনটা তো হতেই পারে।
এ প্রসঙ্গটি আসলো বাংলানিউজে প্রকাশিত খবর দেখে। যেখান থেকে জানতে পারি সোমবারের হরতাল শেষে মঙ্গল, বুধ এমনকি বৃহস্পতিবার টানা হরতাল কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। হরতালে মূখর রাজনীতি। হরতালে মত্ত দেশ। সবার ভাবনা একটাই, কোথায় ইলিয়াস?
তবে একটা কথা সত্যি, রাজনীতিবিদদের জীবনে আঁধার না আসলে, নেতা হওয়া যায় না। যদিও ইলিয়াস নেতা ছিলেন বহু আগে থেকেই। ছাত্র রাজনীতি করেছেন। তার ভয়ে নাকি কাঁপতো গোটা ক্যাম্পাস।
সেই ইলিয়াসই সিলেট রাজনীতিতে হয়ে উঠেছেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আর এখন পুরো দেশের রাজনীতিতেই গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে দু-লাইনে ছড়া হয়।
গুম হয়ে ইলিয়াস
হয়ে গেল জিনিয়াস!
যদিও রাষ্ট্রের কাছে ইলিয়াসের নিরপত্তার অধিকার আছে। আমরাও চাই ইলিয়াস সুস্থভাবে জনতার কাতারে ফিরে আসুন। গুমের আসল ঘটনা উদঘাটন হোক। ইলিয়াস সন্ত্রাসী, দাপুটে, বেপরোয়া- যেমনই হোন, তিনিও তো মানুষ এবং এদেশেরই নাগরিক। রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা দিতে বাধ্য।
কিন্তু এখানে আমার একটি ‘তবে’ আছে। ধরুন আজকে যার বয়স ১৬ কিংবা ২০। সে দেখছে ইলিয়াস কত বড় নেতা। দেশে তার জন্য হরতালের পর হরতাল হয়। একদিন পার হয়ে দ্বিতীয় দিন। দ্বিতীয় দিন পার হয়ে তৃতীয় এমনকি গোটা সপ্তাহজুড়ে হরতালের কথা হয়। তখন তার কাছে তো ইলিয়াস একজন নায়কে পরিণত হয়। যার জন্য দেশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হরতাল হয়। সেই প্রভাবে সরল শিশু-কিশোর মন বড় হয়ে নিজেকে ইলিয়াস হিসেবে গড়ে তুলতে চাইতেই পারে!
তার আগে একটা কথা বলি, সপ্তাহজুড়ে হরতাল আমি দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। যদি এর আগে না হয়ে থাকে, তবে তো হরতালে রেকর্ড করবে বাংলাদেশ (টানা এক সপ্তাহ হরতাল)। গিনেজ বুকেও নাম লেখাতে পারে। স্বাভাবিকভাবে গৌরবের সঙ্গে হরতাল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। যদি এমনটাই হয়ে যায়, তবে বিএনপি অবশ্যই বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্মান বয়ে আনার কৃতিত্ব পাবে।
এসবের পেছনে নাম থাকবে কার? ইলিয়াসের। জিনিয়াস ইলিয়াস হয়ে যাবে হিরো। তারপর প্রকৃত হিরোরা হবে জিরো।
দুঃখ হচ্ছে বেচারা সাগর-রুনির জন্য। তাদের কথা কেউ ভাবে না। তাদের একমাত্র সন্তান মেঘের কথা কেউ চিন্তাও করে না। বেডরুমে ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত দেহ লুটিয়ে পড়ার দৃশ্য আমাদের রাজনীতিবিদদের মনে একটুও রেখাটানে না। কারণ, সেখানে ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ নেই। সেই সাগর-রুনির বিচার চেয়ে সংগ্রাম করলে তো ক্ষমতা হাতে আসবে না। অথবা বলা যায়, সাগর-রুনির কোনো দল ছিল না। তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী নয়।
সুতরাং তাদের কথা কেন রাজনীতিতে আলোচনা হবে? কোনো কারণ নেই আলোচনায় আসার। অবশ্য আমরাও চাই না সাগর-রুনি রাজনীতির আলোচনায় আসুক। আমরাও চাই না, তাদের রাজনীতিতে ব্যবহার করা হোক। আমরা শুধু চাই তাদের খুনীদের বিচার। খুনীদের প্রকাশ্যে আনা হোক। পেছনের ঘটনাটি সামনে আসুক। এর চেয়ে খুব বেশি চাওয়া আমাদের নেই।
গত রোববার জাতীয় সংসদের এমপি হোস্টেলে গলিত লাশ পাওয়া গেছে। দেশের মর্যাদা আর নিরাপত্তার মানদণ্ডে সর্বোচ্চ স্থানগুলোর একটি সংসদ। সেখানেই লাশ! তাও দু-তিনদিন আগেই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে এবং ঘটনার শিকার একজন নারী। আহারে সংসদ! সেখানেই আমরা এভাবেই গলে যাচ্ছি, পচে যাচ্ছি। তা হয়ত রাজনীতিবিদরা বোঝেন না।
যাই হোক, এখনকার বাস্তবতায় শিশুরা কেউ আর বড় হয়ে সাগর-রুনির মত হতে চাইবে না। সবাই বড় হয়ে ইলিয়াস হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। কেন হবে সাগর-রুনি? বেডরুমে খুন হয়ে পড়ে থাকার জন্যে?। দিনের পর দিন যাবে, মাসের পর মাস যাবে কিন্তু কোনো কিছুই আসবে যাবে না রাষ্ট্রের। তাই কী লাভ সাগর-রুনি হয়ে? তাদের জন্য তো হরতালও হবে না।
সুতরাং অনুসরণীয় নেতা-হিরোর খরার এই দেশে পরবর্তী প্রজন্মের সেরা একজন আদর্শ হবেন ইলিয়াস। আশা করা যায় মুক্ত হয়ে আসার পর কোনো এক সময়ে তিনি হবেন দেশের একজন দাপুটে মন্ত্রী।
সুতরাং, অভিভাবকরা এখন কোরস তুলতেই পারেন-
ঘরে ঘরে ইলিয়াস
জাতি হবে জিনিয়াস!
বাংলাদেশ সময় : ১৩৪১ ঘণ্টা, ২৩ এপ্রিল, ২০১২