ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ক্যান্সারের নিরাময়ে তরুণ বিজ্ঞানী

সাজিদুল হক সাজু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:০০, এপ্রিল ২৩, ২০১২
ক্যান্সারের নিরাময়ে তরুণ বিজ্ঞানী

চবি থেকে: পেশা শিক্ষকতা। নেশা অর্কিড গবেষণা।

বয়সে তরুণ এ শিক্ষক বিলুপ্ত প্রায় চার প্রজাতির অর্কিড খুঁজে পেয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অর্কিডের খোঁজ করতে গিয়ে তিনি দেখলেন ওখানকার পাহাড়ি মানুষজন কিছু অর্কিডকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করছে। নতুন সম্ভাবনা দেখলেন তিনি। এসময় যুক্তরাজ্যের এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ডাক আসে।

আট প্রজাতির অর্কিড নিয়ে পাড়ি জমালেন যুক্তরাজ্যে। এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন বায়ো-ডিসকভারি সেন্টারের প্রধান মার্শেল জ্যাসপারস এর অধীনে উচ্চতর গবেষণা করতে গিয়ে ওষধি অর্কিড নিয়ে তার ধারণার কথা বললেন ওই শিক্ষককে। মার্শেল তাকে বললেন অর্কিডগুলোর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করতে। সে মোতাবেক অনুসন্ধানে লেগে গেলেন- অর্কিডগুলোর মধ্যে ক্যান্সার প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যায়, এমন কোনো উপাদান রয়েছে কিনা। শুরু হলো ল্যাবরেটরিতে নিরন্তর গবেষণা। অবশেষে আশার আলো ফুটতে শুরু করলো।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সিন্ডিকেট সদস্য উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তরুণ অধ্যাপক কামরুল হুদা। নিরস্তর ছুটে চলছেন ক্যান্সার প্রতিষেধকের খোঁজে। করছেন জটিল থেকে জটিলতর গবেষণা। শুধু তাই নয়, ২১ প্রজাতির অর্কিডের পার্শিয়াল জেনম সিকোয়েন্স (আংশিক জন্ম রহস্য) বের করেছেন ড. কামরুল হুদা। এগুলো পূর্ণাঙ্গ হলে জিন ব্যাংকে নতুন ১৬টি তথ্য যোগ করতে পারবেন হুদা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নামও লেখা থাকবে উজ্জ্বল অক্ষরে।

সম্প্রতি এসব বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন কামরুল হুদা। একান্ত আলাপচারিতায় তুলে ধরেছেন গবেষণার কথা। তার স্বপ্নের কথা।

গবেষণার শুরু কিভাবে?

‘ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় ২০১০ সালের মার্চ থেকে ২০১১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কর্মের সুযোগ পাই। মোট আট প্রজাতির অর্কিড নিয়ে ওখানে গবেষণা শুরু করি। মার্শেল জ্যাসপারসকে অর্কিডের ভেষজ গুণের কথা জানাই। তাকে বলি, বাংলাদেশের পাহাড়ি জনপদের মানুষ এসব অর্কিড ব্যাথানাশক ও পুরুষত্ব বাড়ানোর কাছে ব্যবহার করে। তখন তিনি আমাকে এসব অর্কিডের রাসায়নিক উপাদান খুঁজে বের করতে বলেন। একই সঙ্গে ওই অর্কিডগুলোতে ক্যান্সার প্রতিষেধক কোনো উপাদান পাওয়া যায় কিনা তাও খুঁজে দেখতে বলেন। ’

শুরু হলো গবেষণা...

‘আমি মূলত এবারডিনে গিয়েছিলাম পোস্ট ডক ফেলোশিপ করতে। ওখানে গিয়ে আমাকে সম্পূর্ণ রসায়ন বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এজন্য কিছু ক্লাসও করতে হয়েছে। যেকোন প্লান্ট থেকে নির্দিষ্ট একটি উপাদান আলাদা করা বেশ কঠিন কাজ। সকাল বেলা কাজ শুরু করলে তার ফল আসতে রাত হয়ে যেতো। হয়তো কাজ শুরু করার সময় ২ কেজি পরিমাণ কেমিক্যাল দিয়ে কাজ শুরু করেছি শেষে ওখান থেকে পেলাম মাত্র ১০ মিলিগ্রাম কম্পাউন্ড। প্রতি ৫মিনিট অন্তর রাসায়নিক পরিবর্তন লক্ষ্য করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে এটাও দেখতে হচ্ছে যে, আমি যে উপাদান খুঁজছি সেখানে অন্যকিছু মিশে যাচ্ছে কিনা। ’

অধরা ধরা দিলো, তবে...

‘এক পর্যায়ে পেয়ে গেলাম যা খুঁজছিলাম। তবে এখানে একটি সমস্যা দেখা দিলো। আমি যেটা খুঁজছিলাম তার ভেতরে আরো একটি রাসায়নিক উপাদান ঢুকে পড়লো। ওটাকে আর আলাদা করতে পারছিলাম না। এটাও দেখতে হবে আলদাভাবে মিশে থাকা ওই উপাদান আর কোনো কাজে লাগে কিনা। ওর গুণাগুণও বিচার করে দেখতে হবে। ’

‘এ বছরই এ বিষয়ে গবেষণার জন্য এবারডিন বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। অরগানাইজেশন ফর দ্যা প্রহিবিশন অব কেমিক্যাল উইপন (ওপিসিডব্লিউ) এবার আমাকে আর্থিক সহায়তা করছে। সকল দেশের সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেছে। গত বছরই ওরা আমাকে ফান্ড দিতে চেয়েছিলো, তবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কিছু কাজের ব্যস্ততার কারণে যেতে পারিনি। তবে এবছর যেতে পারবো বলে আশা করছি। কাজটি শেষ করতে পারলে দেশের জন্য অনেক সম্মান বয়ে আনতে পারবো। ’

জন্ম রহস্য উদঘাটনের পেছনে কামরুল

‘২১ প্রজাতির অর্কিডের পার্সিয়াল জেনম সিকোয়েন্স (আংশিক জন্ম রহস্য) করা হয়েছে। আশা রয়েছে খুব শিগগিরই এগুলোর বিষয়ে একটি প্রবন্ধ লিখবো। জেনম সিকোয়েন্সের কাজটি পূর্ণতা পেলে জিন ব্যাংকে ১৬টি নতুন তথ্য অন্তর্ভূক্ত হবে। একই সঙ্গে ওই তথ্যের সঙ্গে আমার ও বাংলাদেশের নাম থাকবে। ’

চবির অর্কিড গবেষণায় নিরন্তর...

অর্কিড নিয়ে নিরন্তর গবেষণায় রয়েছেন কামরুল হুদা। বিভাগের আরো কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন অর্কিডেরিয়াম। ৫০ প্রজাতির ৩২৯টি অর্কিড নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এটি। যন্ত্রপাতি, অর্থসহ অনেক কিছুর স্বল্পতার মধ্যেও ছুটে চলেছেন নিজের পথে। গবেষকদের উৎসাহ দেওয়ার কথা তুলে ধরে কামরুল হুদা বলেন, ‘গবেষণা করতে চায় এমন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়া উচিত। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা খাতেও বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১২
এসএইচ/
সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।