ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

মুক্তাগাছার জমিদারদের অনন্য স্থাপত্যকীর্তি

এম. আবদুল্লাহ আল মামুন খান, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:২৫, এপ্রিল ২৪, ২০১২
মুক্তাগাছার জমিদারদের অনন্য স্থাপত্যকীর্তি

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার জমিদারদের স্থাপত্যসমৃদ্ধ স্থাপনা এখনো পর্যটকদের দারুণ কৌতূহল জাগায়। মুক্তাগাছার জমিদাররা শুধু খাজনা আদায় আর ভোগ-বিলাসেই মত্ত থাকেননি তারা অনন্য সুন্দর স্থাপনা নির্মাণ করে তাদের রুচির পরিচয় রেখে গিয়েছেন।

কর্মের মাধ্যমেই ত‍ারা অমর হয়ে রয়েছেন।     

তাদের স্থাপত্যকীর্তির মধ্যে অন্যতম হলোÑ শশী লজ (বর্তমানে মহিলা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল (বর্তমানে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ), সূর্যকান্ত হাসপাতাল (বর্তমানে এসকে হাসপাতাল), রাজ রাজেশ্বরী ওয়াটার ট্যাঙ্ক, শিব মন্দির, মহাকালী স্কুল, বিদ্যাময়ী স্কুল, ময়মনসিংহ টাউন হল, পণ্ডিতপাড়া ক্লাব অন্যতম।

এরমধ্যে আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল লোহার কুঠি বলে পরিচিত। বাড়িটি তৈরি করতে লোহার পরিমাণ বেশি লেগেছিল বলেই এর এ নামকরণ হয়েছে। বহু বিখ্যাত ব্যক্তি এ বাড়িতে রাত কাটিয়েছেন। অন্যতম হলেন- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।   রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজড়িত এ ক্যাসেলের দামি শ্বেত পাথর একে একে খোয়া গেছে।

স্মৃতির সঙ্গে এ উদাসীনতা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে রীতিমতো ব্যথিত করে। এ ব্যথা পেরিয়ে সামনে কিছু দূর এগুলেই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সামনের বিরাট প্রাচীর ঘেরা ফটক। ফটক পেরুলেই ফোয়ারা। ফোয়ারার মাঝে নার্সিসাস ভঙ্গিতে নারী মূর্তি। এটিই শশী লজ।

আজ এ লজে নেই বিস্ময়কর সেই মিউজিক্যাল সিঁড়ি। যা বেয়ে উঠতে গেলেই বেজে উঠতো মোহনীয় সঙ্গীত। ১৮৯৭ সালে ভূমিকম্পে এ বাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয় মিউজিক্যাল সিঁড়ি। এটি যথাস্থানে ফিরিয়ে আনতে শশীকান্ত ব্যয় করেছিলেন ওই সময়ে ৩ লাখ টাকা।

মুক্তাগাছার জমিদারদের বিভিন্ন স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় যা পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। পূর্ব বাংলার প্রথম ঘূর্ণায়মান নাট্য মঞ্চটি ভূপেন্দ্র কিশোর মুক্তাগাছার আটানী বাড়িতে স্থাপন করেন। আজো তার গোলাকৃতি চিহ্ন সেই বাড়ির পরিত্যক্ত স্থানে স্পষ্ট হয়ে আছে।

মুক্তাগাছায় রাজ রাজেশ্বরী মন্দির, শিব মন্দির, বিষ্ণু সাগর (বিশাল আকারের দীঘি), বিভিন্ন পরিখা পর্যটকদের ইতিহাসের ঢঙ্কা বাজায়।

বীরেন্দ্র কিশোর শশীকান্ত নামে পরিচিত ছিলেন। তার নির্মিত শশী লজ এখনো অনেকের মনে বিস্ময় জাগায়। তিনি রাজা থেকে মহারাজা পর্যন্ত উপাধি পেয়েছিলেন।

১৯২০ সালে বাংলার গভর্নর রোনাল্ড তাকে মহারাজা উপাধি দেন। তিনি ছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। এ বংশের জমিদারদের জন্যই ময়মনসিংহ শহর ‘জমিদারদের শহর’ বলে পরিচিত। দৃষ্টিনন্দন শশী লজ, আলেকজান্দ্রা ক্যাসেল, এঁদেরই কীর্তি।

ময়মনসিংহে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এসেছিলেন মহারাজ শশী কান্তের আমন্ত্রণে। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কবি ময়মনসিংহে আসেন । বেশ কয়েকদিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবস্থান করেছিলেন।

কবিগুরু অবস্থান করেছিলেন সূর্যকান্তের বাগানবাড়ি আলেকজান্দ্রা ক্যাসেলে । কবিগুরুর ময়মনসিংহে আগমন ময়মনসিংহবাসীর জন্য পরম গৌরবের।

বাংলাদেশ সময় : ১৯০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১২
মামুন,
সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।