ঢাকা, রবিবার, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২০ জুলাই ২০২৫, ২৪ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

ওরা রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে

ফিরোজ আমিন সরকার, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৩৮, এপ্রিল ২৬, ২০১২
ওরা রোদে পোড়ে, বৃষ্টিতে ভেজে

ঠাকুরগাঁও: ফাকা মাঠের মধ্যে বাঁশের খুঁটির ওপর একটি খড়ের চালা। চারদিকে কোনো বেড়া নেই।

এক পাশ থেকে তাকালে অন্য পাশের দৃশ্যপট অনায়াসে দেখা যায়। ঘরের পাশে উড়ছে একটি পতাকা। স্কুলের চিহ্ন বলতে ওই পতাকাটি।

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সর্বমঙ্গলা রেজিস্টার্র্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সর্বমঙ্গলা গ্রামের কয়েকজন উদ্যোমী তরুণ সর্বমঙ্গলা রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। ২০১০ সালে বিদ্যালয়টি নিবন্ধন হয়। বর্তমানে পাঁচটি শ্রেণীতে দেড়শ’ শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করছে। শিক্ষক আছেন চারজন।

বাঁশের বেড়ার তৈরি ঘরটির দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট, আর উচ্চতা ৭ ফুট। চারপাশের অবস্থা জরাজীর্ণ। রোদের তীব্রতা থেকে রক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের মাথার ওপরে খড়ের তৈরি আচ্ছাদনটিও অর্ধেক খসে পড়েছে। সেই ঘরেই তিনটি  শ্রেণিকক্ষ। মাঝখানে নেই কোনো বিভাজন।

তিনটি শ্রেণিকক্ষের মাঝে ঝুলছে একটি মাত্র ব্লাকবোর্র্ড। স্কুলটিতে বেঞ্চ আছে ১৮ জোড়া। তারও অর্ধেক ভাঙা। মূল্যবান কাগজ ও খাতা সংরক্ষণের জন্য কোনো কোনো আলমারি নেই। ফলে জরুরি কাগজপত্র প্রধান শিক্ষক তার বাড়িতে নিয়ে যান।

স্কুলটিতে নেই কোনো শৌচাগার। প্রকৃতির ডাকে শিক্ষার্থীরা চলে যায় আশপাশের মাঠে। আর পিপাসা পেলে স্কুলের পাশের বাড়ির নলকূপই তাদের একমাত্র ভরসা।

পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী নাসিমা আক্তার বলে, সামান্য বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় ক্লাসরুম। প্রখর রোদেও হয় ভীষণ কষ্ট।

তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র আল আমিন জানায়, তৃষ্ণা পেলে বাড়িতে গিয়ে পানি খেয়ে আসতে হয়। ফলে পড়ালেখার সময় নষ্ট হয়। পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মোসাদ্দেক আলী জানায়, প্রচ- রোদের সময় ক্লাসরুমে বসে থাকা যায় না।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকেজ বলেন, ‘এ স্কুলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো স্কুল নেই। এই স্কুলটিই এলাকার একমাত্র ভরসা। সমস্যাগুলো অনেকবার কর্র্তৃপক্ষকে জানানো হলেও সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা এ স্কুলে পড়ালেখা করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘অবকাঠামো না থাকলেও গত বছরে এ স্কুল থেকে ২২ শিক্ষার্থী প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২১ জন কৃতকার্য হয়’।

বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাজেদুর রহমান জানান, প্রতি বছর নিজ উদ্যোগে স্কুলঘরের বেড়া মেরামত করা হয়। কিন্তু কিছু দিন পর সেগুলো আবারও নষ্ট হয়ে যায়। স্কুলের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রত্যুষ চ্যাটার্জী জানান, বিদ্যালয়টির অবকাঠামো নির্মাণের জন্য তালিকা পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১২

সম্পাদনা: রোকনুল ইসলাম কাফী, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।