ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘ইয়ুথ লিডারশিপ সামিট ২০১২’। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে তরুণরা জড়ো হয়েছে এ তারুণ্যের সম্মেলনে।
উদ্দেশ্য একটাই, তা হলো, তরুণরা এ সম্মেলন থেকে বিভিন্ন বিষয়ে বিশিষ্ট জনদের বক্তৃতা শুনে নিজেদের পারদর্শী করে তুলতে উৎসাহী হবে।
বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী পর্বে বিশেষ অতিথির আসনে ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ। তিনি মঞ্চে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার বক্তব্যে উৎসাহিত হতে থাকে সম্মেলনে উপস্থিত সবাই।
বাংলানিউজের স্বপ্নযাত্রা পাঠকদের জন্য আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তব্য সংক্ষেপে তুলে দেওয়া হলো।
এখানে আসার পর ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টারের সভাপতি এজাজ আমাকে বলল, স্যার বক্তব্য দেওয়ার জন্যে সময় পাবেন দশ মিনিট।
আমি এ বিষয়ে বলতে চাই, আমি এজাজের কথা মানি না। কারণ নেতারা কারো কথা মানে না। কারণ নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে, ‘আমি মানি না’ বলতে পারা। নেতা শুধু একজনের কথাই মানে। নেতা শুধু মানে নিজেকে।
আজ তোমরা অনেকে এখানে এসেছ। যে মানুষের সঙ্গে অনেক মানুষ আসে। সে হলো নেতা। তাই আজ তোমরাও নেতা। আমাকে অনেকে প্রশ্ন করে, স্যার, আপনার সাফল্যের পেছনের গল্প বলুন।
আমি তখন বলি, সাফল্য খুব ক্ষুদ্র কাজ। সাফল্য মানে হলো দক্ষতা। আর দক্ষতা যে কেউ অর্জন করতে পারে। কিন্তু কোনো নেতা সাফল্য অর্জন করার জন্য আগহী হয় না। নেতারা শুধু সার্থকতা অর্জন করতে চায়। সার্থক জীবনের স্বপ্ন দেখাই হয় নেতাদের জীবনের লক্ষ্য।
সে সঙ্গে আমি তাদের একটি গল্পও বলি। একজন মানুষের কাছে একটি টাকাও নেই। সে তখন পৃথিবীর সবেচেয়ে নিরাপদ মানুষ। সে রাস্তায় ল্যাম্প পোস্টের নিচে আরামে ঘুমাতে পারবে। যখন সেই মানুষটার কাছে ১০০ টাকা থাকবে; ঠিক তখনই তারা নিরাপদ জায়গার দরকার হবে। সে যাবে বেড়ার ঘরে। এভাবে যদি তার কাছে ১ কোটি টাকা থাকে তবে তার দূর্গের প্রয়োজন।
মানে হলো, তোমার যত অর্থ হবে তত তোমার নিরাপত্তার প্রয়োজন।
একটা কথা মনে রাখবে, সেই মানুষই নেতৃত্বে দাঁড়াতে পারে যে সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে। যেমন গৌতম বুদ্ধ জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। নেতারা কারো মতো হয় না। তারা আলাদা। অন্যের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।
নেতৃত্ব কোনো স্বাভাবিক মানুষের কাজ হতে পারে না। নেতৃত্ব মানেই হলো পাগলামী।
তোমাদের মধ্যে সব সময় কয়েকটি বিষয় কাজ করতে থাকে। যেমন কী হবো? কীভাবে হবো? কবে হবো? এ সব হিসেবের মধ্যেই জীবন চলে যায়। কিন্তু সত্যি কথা হলো, এসব হিসেবের মধ্যে নেতা হওয়া যায় না। নেতা হতে হলে হিসেবের বাইরে যেতে হয়।
তোমাদের একটি গল্প বলে বক্তব্য শেষ করবো।
বাংলাদেশের বার্ডেম হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. ইব্রাহিম। তিনি একদিন দেখলেন, ছোট্ট একটি শিশু ডায়বেটিসে মারা গেল। তার চোখে পানি চলে আসে। এতো ছোট একটি শিশু চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে!
ডা. ইব্রাহিম আমাকে এ প্রসঙ্গে বলেছিলেন, যেদিন আমি এ ঘটনা দেখি; সেদিনই সিদ্ধান্ত নেই। যদি আমি বেঁচে থাকি তাহলে ডায়বেটি রোগীদের জন্য এমন একটি হাসপাতাল তৈরি করবো, যেখানে হাজার হাজার মানুষ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবে। এ জন্য যদি আমাকে জীবন উৎসর্গ করতে হয় আমি করবো। এবং আমি জীবন উৎসর্গ করে দিলাম।
এ গল্প থেকে তোমরা কী বুঝলে? ঠিক যখনই তিনি জীবনকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিলেন তখনই তিনি নেতা হয়ে গেলেন। তার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সামান্য একজন ডাক্তার ছিলেন। আমাদের দেশে লাখ লাখ ছেলেমেয়ে ডাক্তার হয়েছে, হচ্ছে, হবে। কিন্তু কজন ডা. ইব্রাহিমের মতো নেতা হতে পেরেছে?
ডা. ইব্রাহিম সেদিন সেই শিশুটির মৃত্যুতে ব্যথিত হয়েছিলেন। কারণ তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন। তোমরাও মানুষকে ভালোবাসো। তখন তোমার হৃদয়ে বেদনা তৈরি হবে। বেদনা থাকলে নেতৃত্ব প্রতিভা নিজে থেকেই তৈরি হবে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
বাংলাদেশ সময় ২১২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০১২
সম্পাদনা: সাব্বিন হাসান