ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

‘মাথাব্যথা বলে কি মাথা কেটে ফেলতে হবে?’

সাজিদুল হক সাজু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪:২৮, এপ্রিল ২৯, ২০১২
‘মাথাব্যথা বলে কি মাথা কেটে ফেলতে হবে?’

চবি থেকে ফিরে : ‘মাথাব্যথা বলে কি মাথা কেটে ফেলতে হবে?’-চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ঝরণায় বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে যেতে না পারার আক্ষেপ এভাবেই ব্যক্ত করলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা। শুধু সানজিদাই নয়, এ প্রসঙ্গে একই ধরনের ক্ষোভ রয়েছে চবির অনেক শিক্ষার্থীর।

 

কলা অনুষদের পেছন দিয়ে সরু রাস্তা ধরে কিছু দূর হেঁটে গেলেই কানে আসে একটানা পানি পড়ার তরলিত কল কল ছন্দধ্বনি। বেশ দূর থেকেই কানের ভেতর দিয়ে মনের দরজায় মধূবর্ষণকারী এই শব্দমালা আসলে চবি ক্যাম্পাসের মনোমুগ্ধকর ঝরনাটির হাসি।

কলা অনুষদ পেরিয়ে ক্যাম্পাসের পশ্চিম দিকে পাহাড়ের একটু ভেতরে গেলেই দেখা মিলবে গাছপালা আর পাহাড়ের ভেতর লুকিয়ে থাকা এই প্রাকৃতিক ঝরনা-রানীর। অবিরাম জলধারার এই অপরূপ সৌন্দর্য তার অমোঘ আকর্ষণে মানুষকে চিরকালই কাছে টেনেছে!

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ডের পাহাড়শ্রেণী থেকে বয়ে আসা পানি ছড়ার (সরু খাল) মাধ্যমে চবির ওই নির্দিষ্ট এলাকায় একটু উঁচু থেকে পড়তে থাকে সারা বছর ধরে- রূপ ধরেছে অপরূপ ঝরণার। বর্ষায় এর পানির প্রবাহ থাকে বেশি।  

ঝরণার সামনে সুবিস্তৃত পাহাড় শ্রেণী। ঝরনা বেয়ে পড়া পানি জমে নিচে তৈরি হয়েছে ছোট্ট একটি লেক। নয়নাভিরাম এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে যে কেউই আত্মহারা হয়ে যাবেন।

অথচ এই ঝরণায় যাওয়ার আগেই চোখে পড়বে কলা ভবনের দেয়ালে লিখে রাখা একটি অপ্রত্যাশিত বিজ্ঞপ্তি। এ যেন নন্দন কাননে অসুরের উপস্থিতি। বিজ্ঞপ্তিটিতে ঝরনার দিকে না যাওয়ার ব্যাপারে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে ‘ঝরণা এলাকা বিপদজনক’।

যে স্পন্দিত ঝরণার মোহনীয় সুরছন্দে এগিয়ে যাচ্ছিলাম তাকে চাক্ষুষ করার জন্য- ঠিক তার আগেই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার নিগড় দেখে মনে হলো চোখের ওপর যেন মাইক টাইসনের বেমক্কা এক ঘুষি খেলাম। যেখানে নিষ্প্রাণ শহরের সড়কের মোড়ে, ইট-পাথরের দঙ্গল সরকারি-বেসরকারি ইমারতের সৌন্দর্য বাড়াতে আঙ্গিনায় লাখ-কোটি টাকা খর্চায় বানানো হয় কৃত্রিম ঝরণা, সেখানে অসাধারণ অনিন্দ্য ক্যাম্পাসের এই প্রাকৃতিক ঝরনাকে করে রাখা হয়েছে ‘বিপদজনক এলাকা’!  

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দীর্ঘদিন ধরেই স্থানীয় কিছু সন্ত্রাসী ওই এলাকায় ভ্রমণকারীদের কাছ থেকে মালামাল ছিনতাই করে আসছে। গত ২৯ অক্টোবর ওই এলাকায় ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন চবির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সভাপতি ড. হানিফ সিদ্দিকী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীম আহমেদ। ছিনতাইকারীরা এসময় দুজনের মোবাইল ফোনসেট, ১০ হাজার টাকাসহ মানিব্যাগ ও ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যায়।

ছিনতাই হয় বলে ওই এলাকায় যাওয়া নিষিদ্ধ করেছে চবি প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা বলছে- বাংলাদেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন ঝরণা নেই। অথচ এখানে ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না প্রশাসন। সামান্য ছিনতাইকারীদের জন্য এ নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী স্মরণিকা ধর বলেন, ‘প্রশাসন ছিনতাইকারীদের ধরতে পারে না। অথচ শিক্ষার্থীদের বলছে ওখানে যাওয়া যাবে না। গুটিকয়েক সন্ত্রাসীর জন্য এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে না দেওয়াটা দুঃখজনক। ’

এ বিষয়ে চবির সহকারী প্রক্টর মইনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘কলা ভবনের পেছন দিয়ে প্রায় সোয়া কিলোমিটার রাস্তাটি সেনসিটিভ। আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে ওই এলাকার নিরাপত্তা দেওয়া যায়। নিরাপত্তা দফতরের লোকবল কম থাকাও একটি সমস্যা। ’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় ঝরণা এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে কথা উঠলেও অন্য কাজের চাপে এ বিষয়টির অগ্রগতি হয়না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৪১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০১২
এসএইচ/
সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।