ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

শান্তি চাই: জন লেনন

অনুবাদ: বাবু আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৬, মে ৭, ২০১২
শান্তি চাই: জন লেনন

রক মিউজিকের ইতিহাস ‘দ্য বিটলস’ ছাড়া লেখা হবে না। তরুণ প্রজন্মের হৃদয়ে একসময় রাজত্ব করে গেছে বিশ্বখ্যাত এই ব্যান্ডদলটি।

বিটলসের অন্যতম সদস্য ছিলেন জন লেনন। তার জন্ম ‌১৯৪০ সালে। ছোটবেলা থেকে সংগীত নিয়ে আগ্রহের শেষ ছিল না লেননের। এই আগ্রহ ও একাগ্রতা জন লেননকে নিয়ে গেছে সংগীত জগতের অন্য মাত্রায়।

স্বপ্নযাত্রার পাঠকদের জন্য জন লেননের বিখ্যাত একটি বক্তৃতা অনুবাদ করে দেওয়া হলো।
 
সব মানুষই মনে করে শান্তি ও ভালোবাসা পাওয়া খুব সহজ একটি বিষয়। কিন্তু এটি মোটেও সহজ নয়। আমার অধিকাংশ ভক্তরা মনে করেন বিখ্যাত হওয়াটা খুব সহজ। আমি জন লেনন খুব সহজেই বিখ্যাত হয়ে গেছি। কিন্তু সত্যি কথা হলো, আমাকে বাস্তবে অনেক সমস্যা এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। মানুষের মনে স্থান পাওয়া খুব সহজ কাজ নয়।
 
আমার জীবনে ভালো সময় অনেক। তবে বেশিরভাগ সময় জুড়ে রয়েছে ব্যর্থতা এবং হতাশার গল্প। শীর্ষে ওঠার পথটা অনেক কঠিন। তারপরও পৃথিবীর ‍বিখ্যাত সংগীতশিল্পীদের তালিকায় আমি এবং বিটলস কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে স্থান করে নিতে পেরেছি। এই পরিশ্রম কিন্তু দারিদ্র্যতার মধ্য দিয়েই করতে হয়েছে।

শৈশবের সময়টা আমার খুবই কষ্টে গেছে। অর্থের অভাব যত না ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল পিতার অভাব। শখ ছিল গান গাওয়া। গানের জন্য বাদ্যযন্ত্র কেনার টাকা জোগাড় করতেই অবস্থা খারাপ হয়ে যেত। আমরা যদিও অতোটা গরীব ছিলাম না কিন্তু অর্থের সমস্যা ছিল। শুরুর দিকে ব্যান্ডের কোন ট্রিপের জন্য আমাদের দীর্ঘদিন টাকা জমাতে হয়েছে। এটা ছিলো প্রথমদিকের কথা। পরে অবশ্য আমাদের সমস্যার সমধান হয়ে যায়। কারণ আমরা আস্তে আস্তে বিখ্যাত হতে শুরু করেছিলাম।

ছোটবেলায় বাবা-মার সঙ্গে আমার অনেক সমস্যা ছিল। আমার বাবা ছিলেন নাবিক। তিনি প্রায় সময়ই পরিবারের বাইরে থাকতেন। বাবা মায়ের দেখা হতো দীর্ঘ বিরতীর পর। মায়ের নিঃসঙ্গ সময়গুলো কাটানোর জন্য আরেকজন সঙ্গী বেছে নেন। মা ভাবতেন আমার বাবা তাকে ভালোবাসেন না। তাই তিনি একসময় বাবাকে ছেড়ে দেন। আমি সারাজীবনের জন্য থেকে যাই আমার খালার কাছে। তিনি খারাপ ছিলেন না। আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। কিন্তু বাবা-মায়ের আদর কী অন্য কেউ দিতে পারে? এভাবেই আমার শৈশব পার হয়েছে। অনেক কঠিন বাস্তবতার মধ্যে দিয়ে পার হয়েছে।

আমরা যখন বিটলস সমন্বয় করছি তখন ভাবছিলাম আমরা স্মরণীয় হয়ে যাবো। বাস্তবে সেটাই হলো। তখন হামবুর্গে আমরা ঘুমানোরও সময় পেতাম না। সারা রাত দর্শকদের সামনে আমরা গান গাইতে থাকি। আমাদের যে চুক্তি ছিলো তা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত অনেক মাস আমাদের সারা রাত জেগে জেগে কাটাতে হয়েছে। মাঝে মাঝে আমরা স্টেইজেই ঘুমিয়ে পড়তাম। পরে অডিটরিয়ামের তত্ত্বাবধানে যিনি থাকতেন তিনি আমাদের জাগিয়ে দিতেন। মাঝে মাঝে আবার জেগে থাকার জন্য নেশা করতাম। এজন্যই আমরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়ি। সে সময়টা ছিল চ্যালেঞ্জের। কষ্ট করেছি। পরিশ্রম করেছি। তাই হয়তো আজ সফলতার উচ্চতায় বসে থাকতে পারছি।

আমি একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলাম, আমরা যীশুর চেয়েও বিখ্যাত। সঙ্গে সঙ্গে খৃষ্টান ধর্মের মানুষজন আমাদের উপর খেপে যায়। তারা আমাদের ঘৃণা করতে শুরু করে। আমাদের বিরুদ্ধে নানা রকমের গ্রুপ তৈরি হতে থাকে। একদিন এক সন্ধ্যায় দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে বলা এই একটি কথা সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলবে তা আমি কোনোদিনই কল্পনা করিনি।

পৃথিবী জুড়ে আমাদের ভক্তরা তাদের কেনা আমাদের সিডিগুলো পুড়িয়ে ফেলে। আমরা যখন বিখ্যাত ঠিক সেই সময় এমন একটি মন্তব্য আমাদের খ্যাতি কমিয়ে দেয়। আমাদের ভক্ত কমিয়ে দেয়। কথাটি খৃষ্টানদের মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে। আমি চাইনা খৃষ্টানরা আমার বিরুদ্ধে অথবা অন্য কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলুক। আমি চাই পৃথিবীজুড়ে মানুষের শান্তি।

আমি যদি আবার এ সুন্দর পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করি তখনও হয়তো এই মর্মান্তিক বিষয়টি আমি ভুলবো না। আমি আর কখনও বলবো না আমরা যীশুর চেয়েও বিখ্যাত। কারণ, মানুষের মনে আমরা আঘাত দিতে চাই না।

আমার জীবনটা শুধু খ্যাতির গল্পেই ভরা নয়। সেখানে আছে হতাশার গল্পও। খ্যাতির আড়ালে যে বেদনা আছে তা অত্যন্ত মর্মান্তিক। তবে বেদনা ও হতাশার ভেতরও আমি স্বপ্ন দেখতে ভুলিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১২

সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।