ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

৪ বছর ধরে গাছ তলায় পাঠদান!

নান্দাইল প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:৩৪, মে ৯, ২০১২
৪ বছর ধরে গাছ তলায় পাঠদান!

নান্দাইল (ময়মনসিংহ): বিদ্যালয়ের নাম কুলধুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রায় চার বছর ধরে এ বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম চলছে গাছ তলায়।



১৯৯৫ সালে নির্মিত হয়েছিল এই বিদ্যালয়ের একটি ভবন। কিন্তু এর মাত্র ১৩ বছর পর ২০০৮ সালেই ওই ভবনটি ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়ে। নির্মাণের ১৭ বছর পর ২০১২ সালে ভবনটি এখন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত। ছাদের বিভিন্ন অংশ থেকে খসে পড়ছে পলেস্তরা। বারান্দার থামগুলোর গোড়ার দিকের ঢালাই খুলে গিয়ে ভেতরের লোহার রডগুলো বেরিয়ে পড়েছে। কখন কার মাথায় ছাদ ভেঙ্গে পড়ে তা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ সবাই আতঙ্কিত।

তাই প্রায় চার বছর ধরে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ঠাঁই হয়েছে বিদ্যালয়ের আঙিনার গাছ তলায়। সেখানেই চলছে তাদের পাঠদান কার্যক্রম।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের কুলধুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র এটি।

সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, গাছ তলায় চলছে দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম। সূর্যের তাপ গাছের পাতার ফাঁক গলে শরীরে পড়ছে শিশুদের।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শাহজাদী সিদ্দিকা বাংলানিউজকে জানান, ঝুঁকিপুর্ণ ওই ভবনটি বাদে বিদ্যালয়ে মাত্র একটি পাকা ভবন রয়েছে। সেই ভবনে শিক্ষার্থীদের স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। তাই একটি শ্রেণির ক্লাস গাছ তলায় বেঞ্চ বসিয়ে চালাতে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ভাল ভবনটির একটি অংশে শিক্ষকদের বসার কক্ষ। ভবনের বাকি জায়গাটুকু বিভক্ত করা হয়েছে শ্রেণি কক্ষে। প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান কার্যক্রম এখন একটি ভবনেই চালানো হচ্ছে।

নান্দাইল সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউএপিইও) রাহেনা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়টি পরিদর্শনকালে কাছ থেকে ছাদের পলেস্তরা খসে পড়তে দেখেছেন। তিনি শিক্ষকদের সেই ভবনে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে নিষেধ করেছেন।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় এলজিইডি কার্যালয়ের একজন সহকারী প্রকৌশলীও ভবনটি পরিদর্শন করে ঝুঁকিপুর্ণ বলেছেন।

উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী শেখ শামসুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ভবনটির বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ।

সেখানে বাচ্চাদের পাঠদান কার্যক্রম চালানো নিরাপদ বলে মনে করেন না তিনি।

মাত্র ১৭ বছরেই একটি পাকা ভবন কিভাবে পরিত্যক্ত হয়ে গেল-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, Ôএ ব্যাপারে আমি বলার ক্ষমতা রাখি না। কিছু বললে উল্টো আমার বিপদ হবে। Õ

উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, সে সময়ের নকশা অনুযায়ী ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণ কাজে হয়তো বরাদ্দ কম ছিল। তবে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ভবনটি নির্মাণ করেছিল কিনা তা তিনি নিশ্চিত নন।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইমদাদুল হক বিদ্যালয়ের ওই ভবনটি ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে পড়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কুলধুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই পাকা ভবনটি ঝুঁকিপুর্ণ ভবনের তালিকায় রয়েছে।

এছাড়া ওই বিদ্যালয়ে একটি ভবনের প্রয়োজন রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৪ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১২

প্রতিবেদন: শাহ্ আলম ভূঁইয়া/সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।