গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) : ‘আমি একজন মা। অনেক ইচ্ছা করে আমার সন্তানকে আমার কাছেই রাখতে, কিন্তু পারি না।
কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর ২৫/২৬ বছরের এক যৌনকর্মী।
যৌনকর্মীদের সন্তানেরা তাদের মায়েদের সঙ্গেই থাকে কিনা জানতে চাইলে সৃষ্টি হয় এমনই মর্মস্পর্শী দৃশ্যের।
দেশের বৃহৎ যৌনপল্লী দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায়। এখানে কিশোরী থেকে বৃদ্ধা পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার যৌনকর্মী বাস করেন। এর মধ্যে হাজার খানেক যৌনকর্মীর পিতৃ পরিচয়হীন একাধিক সন্তান রয়েছে।
জন্মের পরপরই যৌনকর্মীদের অনেকে সামর্থ্য অনুযায়ী সন্তানদের পাঠিয়ে দেন স্থানীয় এনজিওর তত্ত্বাবধানে, আবার অনেকে ভালো কোনো প্রতিষ্ঠান বা আত্মীয়স্বজনের কাছে রেখে আসেন তাদের প্রিয় সন্তানকে।
একজন মায়ের পক্ষে তার নাড়িছেঁড়া আদরের ধনকে নিজের কাছ থেকে দূরে রাখা খুবই কঠিন। তারপরও পরিবেশের কারণে শত কষ্ট হলেও সন্তানদের বাইরে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হন এসব অসহায় মা।
মায়ের আদর যত্নবঞ্চিত এসব শিশু অন্যের কাছে এতিমের মতো বেড়ে উঠছে। চাইলেও পাচ্ছে না মায়ের স্নেহ।
শনিবার বিকেলে দৌলতদিয়া যৌনপল্লী ঘুরে দেখা যায়, কয়েক হাজার যৌনকর্মীর মধ্যে মাত্র হাতে গোনা দুÕএকজনের কাছে রয়েছে এক বছর থেকে ছয় মাস বয়সী সন্তান।
বাইরে সন্তান লালন-পালন করাচ্ছেন এমন মায়েদের সঙ্গে কথা বলার সময় তারা জানান, Ôআমরা খারাপ জায়গায় থাকি। আমাদের সন্তানরা এখানে থাকলে আমাদের মতো এ পেশায়ই আসবে। তাই শত কষ্ট হলেও ওদের বাইরে রেখেছি। Õ
যৌনকর্মীদের মানবাধিকার রক্ষা ও শিশুদের লালন-পালনে কাজ করছে উন্নয়ন সংস্থা পায়াক্ট বাংলাদেশ। তারা অসহায় যৌনকর্মীদের সন্তানের থাকা-খাওয়া ও পড়াশুনার ব্যবস্থা করেছেন।
এছাড়াও রয়েছে স্থানীয় এনজিও কর্মজীবী কল্যাণ সংস্থা। তাদের তত্ত্বাবধানে দাতা সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় লেখাপড়া শিখে বড় হচ্ছে অর্ধশত কিশোরী।
মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস। আর দশজন মায়ের মতো যৌনকর্মী মায়েদের জন্যও দিনটি বিশেষ। সন্তানের প্রতি তাদেরও রয়েছে অন্য মায়েদের মতোই স্নেহ-মমতা। আবার অন্য শিশুদের মতো যৌনকর্মীদের সন্তানের জন্যও দরকার মায়ের স্নেহ-ভালোবাসা। যা থেকে তারা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে বর্তমানে যৌনকর্মীদের কয়েকশ’ শিশু মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে বড় হচ্ছে। তারা জেনেও জানে না মা দিবস কি?
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১২
প্রতিবেদন: শাহেদ আলী ইরশাদ/সম্পাদনা: শিমুল সুলতানা, নিউজরুম এডিটর