ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

সাবাস, হেলাল!

রনবীর ঘোষ কিংকর, চান্দিনা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:৫৯, মে ১৪, ২০১২
সাবাস, হেলাল!

চান্দিনা (কুমিল্লা): এটা কোনো আদুভাইয়ের গল্প নয়, নয় কোনো লেখকের চিন্তাপ্রসূত চরিত্র বিশ্লেষণ। একেবারেই রক্তমাংসে গড়া বিদ্যানুরাগী একজন মানুষের সাফল্যগাথা এটা।



কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার তিন সন্তানের জনক হেলালের এ সাফল্যকাহিনী দৃষ্টান্ত হতে পারে বিদ্যাবিমুখ যে কোনো বাঙালির জন্য। শিক্ষা অর্জনে বয়স যে কোনো বাধাই নয় তা প্রমাণ প্রমাণ করেছেন তিনি।

মুরাদনগরের কেয়ট গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে তৌফিক আহাম্মদ হেলাল (৩৬) তিন সন্তানের জনক। দারিদ্র্যের কারণে তিনি যথাসময়ে বিদ্যালয়ের পড়ালেখা সমাপ্ত করতে পারেননি। কিন্তু তাই বলে বিদ্যার প্রতি অনুরাগ থেমে থাকেনি তার।

তিন সন্তানের জনক হওয়া সত্ত্বেও নিয়মিত পড়ালেখা করে এবার তিনি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মুরাদনগর উপজেলার ‘পালাসুতা হাজী মফিজ উদ্দিন নেছারিয়া দাখিল মাদ্রাসা’ থেকে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।

কাক্সিক্ষত ফলও পেয়েছেন- জিপিএ ৫।

তার এ ফলাফল জেনে ওই মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে হই-চই পড়ে যায়। এ সময় হেলাল ছিলেন উপজেলার দারোরা বাজারের নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘নিউ সুফিয়া মেডিক্যাল হলে’।

মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই বাংলানিউজকে জানান, এ বছর এ মাদ্রাসায় শতভাগ ছাত্র-ছাত্রী উত্তীর্ণ হলেও একমাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে হেলাল। ফল প্রকাশের দিন মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীদের আনন্দ উল্লাসের কেন্দ্রবিন্দু ছিল সে।
 
পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে হেলাল তার অভাব জয়ের সিঁড়ি বেয়ে এ পর্যায়ে আসার কাহিনী বলতে গিয়ে জানান, তিনি ১৯৯২ সালে স্থানীয় দারোরা দীনেশ চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়মিত এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। কিন্তু ক্ষুদ্র কৃষক পিতার সাত সদস্যের অভাবের সংসারের হাল ধরতে পরীক্ষা না দিয়েই কর্মের উদ্দেশে বেদশের বাইরে (বাহরাইন) যেতে হয় তাকে।

একে একে তার আরও দু’ভাই সেখানে চলে যান। ১৯৯৯ সালে দেশে ফিরে হেলাল বিয়ে করে ওষুধ ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে হেলাল ২ কন্যা ও ১ ছেলে সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ে মারুফা আক্তার স্মৃতি দারোরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়ে।

কষ্টের বিনিময়ে সংসারের অভাব ঘুচলেও, তার জীবনে শিক্ষার অভাব ঘোচেনি- এটা সবসময় অনুভব করতেন হেলল। তাই ফের পড়ালেখার প্রস্তুতি নেন তিনি।

সংসারের কাজের ফাঁকেই পড়াশুনা করে এবার অংশ নেন দাখিল পরীক্ষায়।

তিনি জানান, মেয়েকে স্কুলে দিয়ে নিজে যখন মাদ্রাসায় যেতেন তখন বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকমের মন্তব্য করতেন তাকে নিয়ে। কিন্তু লোকদের সেসব মন্তব্যে কান না দিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যান হেলাল। আর তাতেই আসে আশানুরূপ সাফল্য।

আর এ সাফল্য ধরে রাখতে ভবিষ্যতেও লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিন সন্তানের জনক তৌফিক আহাম্মদ হেলাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১২

রনবীর ঘোষ কিংকর/ সম্পাদনা: সাইফুল ইসলাম, কান্ট্রি এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।