ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

রাজেশ, আমাদের ক্ষমা করো

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৩২, মে ১৪, ২০১২
রাজেশ, আমাদের ক্ষমা করো

সবাই আমাদের প্রশ্ন করছে, রাজেশের জন্য কি করেছ তোমরা? একইসঙ্গে বলছে, মিডিয়াতে তোমাদের পরিচিত বন্ধুরা আছে। তারা কি রাজেশের কথা কিছু লিখেছে?

পাঠক, আপনি হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন এই রাজেশটা আবার কে? যদি আপনি ১২ মে তারিখের পত্রিকা পড়ে থাকেন তাহলে রাজেশকে আপনি ঠিকই চেনেন।

পত্রিকার সূত্র মতে, রাজেশ ঢাকার উত্তর মুগদা পাড়ার অথবা দক্ষিণ শাহজাহানপুর কিংবা শাহজাহানপুরের রাজেশ্বর সিংহ (২৬) হিসেবে পরিচিত। কারণ পত্রিকায় এভাবেই খবর ছেপেছে।  

এছাড়া রাজেশকে চেনার কোনো উপায় নেই। সে তো রাজনীতিবীদ নয়, কিংবা বড় মাপের কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিও নয়।
রাজেশ রেড ক্রিসেন্টের সামান্য একজন স্বেচ্ছাসেবক। আসলে সামান্য বললে ভুল হবে; রাজেশ বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একজন যুব নেতা। জাতীয় সদর দপ্তর যূব রেড ক্রিসেন্টের দলনেতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন রাজেশ।
এই স্বেচ্ছাসেবক এখন আর বেঁচে নেই। সে চলে গেছে না ফেরার দেশে। ১১ মে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮ জনের মধ্যে সেও একজন।

এমনই অনেক দুর্ঘটনায় রেডক্রিসেন্টের সদস্য হিসেবে মানুষের পাশে গিয়ে দাড়িয়েছিল রাজেশ। শুধু তাই নয়; বন্যা, সাইক্লোনে যুব রেডক্রিসেন্ট দলকে নেতৃত্বও দিয়েছে এই স্বেচ্ছাসেবক।

কিন্তু এতদিন আর্ত মানবতার সেবায় যে মানুষটি আন্তরিকভাবে কাজ করে গেছেন তাকে বাঁচানোর জন্য তো আমরা কিছুই করতে পারলাম না। মরে যাওয়ার পরেও রাজেশের যুব রেডক্রিসেন্টের পরিচয়টি আমরা দেশের মানুষকে জানাতে পারিনি।

মিডিয়া, গণমাধ্যমগুলো সবসময় বলে তরুণরাই দেশের ভবিষ্যৎ, দেশের নেতৃত্ব তাদেরই হাতে, দেশ তাদেরকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, আরও কত কথা।

কিন্তু আমরা যখন বন্ধুদের ফোন করে, প্রেস রিলিজ পাঠিয়ে নানাভাবে চেষ্টা করছিলাম। তখন নিউজের স্ক্রলে, খবরের কাগজের পাতায়, অনলাইন সংবাদে রাজেশের মানবিক পরিচয়টি প্রকাশে কেউই সাঁড়া দেননি। তখন আমাদের প্রশ্ন জাগে তাহলে এই মিষ্টি কথাগুলো কি শুধু বিভ্রম সৃষ্টি করার জন্য? কারণ আজ রাজেশ যদি এত ভাল কাজ না করে সন্ত্রাসীও হত তাহলে মিডিয়াগুলো হয়ত বড় করেই লেখতো বা বলত। সেখানে রাজেশ্বর সিংহ তো সাধারণ একজন মানুষ। স্বেচ্ছাসেবক ছিল। এর চেয়ে বড় কোনো পরিচয় তার নেই।    

তাই খুব অপরাধবোধে ভুগছি আমরা সবাই। আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু বলেই যাচ্ছি, রাজেশ, কে তোমাকে কতটুকু সম্মান দিল আমার জানা নেই। যে তুমি একসময় মানুষের বিপদে সাহসের সঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলে। সেই আমরাই তোমার চলে যাওয়ার পর সেই সাহসের গল্প করতে পারলাম না। তোমাকে আমরা কিছুই দিতে পারলাম না।

আমাদের ক্ষমা করে দিও রাজেশ।   

লেখক:

আবদুল্লাহ আল রেজওয়ান (নবীন)
ইয়ুথ কমিশন সদস্য, আন্তর্জাতিক ফেডারেশন অব রেডক্রস ও ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ
প্রাক্তন যুব প্রধান, নোয়াখালী রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১২
সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, ইয়ুথ এনগেজমেন্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।