ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

ওবামার রুশ রাঁধুনি বন্ধু

রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:৩৫, মে ২৭, ২০১২
ওবামার রুশ রাঁধুনি বন্ধু

ঢাকা : মানুষের হৃদয় জয় করার সহজতম পথ তার পাকস্থলী জয়—একথা অনেকেই মানেন। যারা একথা মানেন, বলা যায় তারা এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের বিষয়টিই মাথায় রাখেন।

তবে একজন শীর্ষ আমেরিকান ব্যক্তিত্বের হৃদয়ও যে পাকস্থলীর পথে জয় করা সম্ভব তার প্রমাণ দিয়েছেন এক সাধারণ রুশ গ্রাম্য নারী।

যখন আন্তর্জাতিক রাজনীতির দুই প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষার নিরন্তর কসরতে লিপ্ত, তখন রুশদেশীয় ওই গ্রাম্য বাবুর্চি খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন।

এই কৌতুহলোদ্দীপক কাহিনীকে পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম করতে হলে আপনাকে একটু পেছনে যেতে হবে। সময়টা এখন থেকে সাত বছর আগে ২০০৫ সাল আর স্থান রাশিয়ার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া মহাসড়কের পাশের কৃষিমাঠ।  

যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল প্রতাপশালী বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ২০০৫ সালে তার নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে আমেরিকারই খুব কম লোক চিনতেন, বাইরের পৃথিবীর কথা না হয় বাদই দেওয়া গেলো। ওবামা তখন ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় থেকে নির্বাচিত একজন সিনেটর মাত্র।

২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে রাশিয়ার সারাতোভ অঞ্চলে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট ওবামা। মূলত ওই ঘাঁটিতে রাখা রাশিয়ার দীর্ঘ ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস কার্যক্রম পরিদর্শনে যান তিনি।
 Obama-
ঘাঁটি পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধিদল শহরে ফিরছিলেন একটি কৃষিক্ষেত্রের ভেতর দিয়ে। সেখানে রুশ কৃষকরা তাদের ট্রাক্টর ও অন্যান্য কৃষিযন্ত্র নিয়ে মাঠে ব্যস্ত ছিলেন চাষাবাদের কাজে।

রাশিয়ার কৃষি যন্ত্রপাতিকে আরো কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের জন্য অনুসন্ধিৎসু ওবামা তার গাড়িটিকে দাঁড় করালেন মাঠের পাশে। এসময় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলার এক ফাঁকে ওবামাকে তাদের সঙ্গে খেতে বসতে আমন্ত্রণ জানান কৃষকরা। ওবামা সাদরে এই নেমতন্ন গ্রহণ করেন।

মাঠের ওই কৃষক দলটির জন্য রান্নার কাজ করতেন ৩৬ বছর বয়সী মারিয়া পেত্রোভা।

সেদিন মাঠে পরিবেশিত খাদ্যের মধ্যে ছিলো রাশিয়ার ঐতিহ্যবাহী খাবার বর্শ। এই বিশেষ খাবারটি সম্পর্কে ওবামা অনেক শুনেছিলেন কিন্তু কখনও চেখে দেখা হয়নি। তাই আগ্রহ ভরেই খাবারটির স্বাদ আস্বাদ করলেন তিনি।

মারিয়ার জাদুকরি রান্নার স্বাদে রীতিমত মুগ্ধ হলেন ওবামা। অসাধারণ স্বাদের চমৎকার খাবার খাওয়ানোর জন্য মারিয়াকে বারবার ধন্যবাদ জানান তিনি।

“তিনি এমনকি আমার রান্নার একটি রেসিপিও তাকে কাগজে লিখে দেওয়ার অনুরোধ করেন”, তেমা সারাতোফ অনলাইন সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেন মারিয়া।

“তিনি আমাকে আরো বললেন, আমেরিকার কৃষকরা মাঠে একাই কাজ করে থাকে। তখন আমি তাকে বলি, এক সঙ্গে কাজ করতে অনেক মজা। তিনি আমাকে তার কৃষি বিষয়ক উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব দিলেন। আমিও হাসতে হাসতে তাকে বলি, তার বরং উচিৎ আমাকে তার বাবুর্চি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া। কিন্তু আমি তখন জানতাম না তিনি কে। আমার স্মরণ আছে, একজন বিদেশির সঙ্গে কথা বলছি এই ভেবে আমি রোমাঞ্চিত ছিলাম। কারণ, আমি এর আগে কখনও কোনও বিদেশির সঙ্গে কথা তো বলিইনি, এমনকি নিজের চোখে দেখিওনি। ” এভাবেই ওবামার সঙ্গে তার কথোপকথন মুহূর্তের কথা সাক্ষাতকারে ব্যক্ত করেন মারিয়া।

ভাষার প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দুই পক্ষের জন্য এই কথোপকথন হয়েছিলো অনেক আনন্দঘন। পরে যখন মারিয়া জানতে পারলেন তার সঙ্গে পরিচিত হওয়া সেই সুদর্শন কম বয়সী ভদ্রলোক যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন, তখন তিনি নতুন প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।

“আমি কখনই ভাবতে পারিনি তিনি আমার চিঠি গ্রহণ করবেন। আমি শুধু তাকে চিঠিটি পাঠিয়ে দিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গেই ভুলে গেলাম। ”

কিন্তু এই মহিলার জন্য বিস্ময় অপেক্ষা করছিলো তার কল্পনার থেকেও বেশি। প্রেসিডেন্ট ওবামা যে শুধু তাকে চিঠির প্রতিউত্তরই দিলেন তাই নয়, একই সঙ্গে তাকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানালেন।

“আমি চিঠিটি পেয়ে স্তব্ধ হয়ে যাই। তিনি কিভাবে জানলেন আমার জন্মদিন কবে? তার সঙ্গে তো আমার জন্মদিন অথবা বয়স সম্পর্কে কোনো কথা হয়নি। ” চিঠিটি পাওয়ার পর তার কী পরিমাণ ভালো লেগেছিলো তা এই উক্তিতেই বোঝা যায়।

বর্তমানে এই দুই শুভাকাঙ্ক্ষী নিজেদের মধ্যে নিয়মিত পত্র বিনিময় করেন। জন্মদিন ছাড়াও বিশেষ দিন, যেমন, নববর্ষ, ক্রিস্টমাস এবং ইস্টার উপলক্ষে পরষ্পর শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তারা।

ওবামার পাঠানো সব চিঠি সযত্মে আগলে রেখেছেন মারিয়া।

মারিয়া বলেন, “আমি তাকে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে আমার লেখা কবিতা পাঠিয়েছিলাম। তিনি প্রতিউত্তরে লিখেছিলেন, তিনিও যুবক বয়সে কবিতা লিখতেন। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি তার নিজের লেখা কোনো কবিতা প্রেরণ করতে পারছেন না। তবে বেশ কিছু প্রখ্যাত আমেরিকান কবির কবিতা আমাকে পাঠান তিনি। ”

এখন মারিয়া যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন, তবে সেখানে থাকার কিংবা বসবাসের জন্য নয়। তার জীবনের এখন একটাই ইচ্ছা, এতবড় পদের এই বন্ধুর সঙ্গে একবারের জন্য হলেও আবারও দেখা করা।

“আমি বিশ্বাস করি বারাককে ফের একদিন দেখতে পাবো আমি। এজন্য আমি এখন টাকা জমাচ্ছি। যখনই আমার টিকেট কাটার টাকা হবে তখনই আমি সোজা যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো। ’ এভাবেই নিজের সঙ্কল্পের কথা জানালেন মারিয়া।

এখন দেখা যাক, মারিয়ার স্বপ্ন পূরণে বন্ধু বারাক ওবামাও উদ্যোগী হন কিনা।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫২ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।