ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

হানিমুন ট্রাভেল : বাংলাদেশি তরুণীদের পাচারের নতুন কৌশল

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩২, মে ২০, ২০১২
হানিমুন ট্রাভেল : বাংলাদেশি তরুণীদের পাচারের নতুন কৌশল

ঢাকা : মানব পাচারকারীরা নিত্য-নতুন কৌশলে বাংলাদেশি তরুণীদের বিদেশে পাচার করছে। পচারকারীরা এক্ষেত্রে সাধারণত স্থলবন্দরপথই ব্যবহার করে থাকে।

সীমান্ত অতিক্রম করার সময় কাস্টমস চেকিংয়ে এসব তরুণীকে নববিবাহিত হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়।

এসময় তরুণীদের সঙ্গে থাকা পাচারকারীদের একেকজনকে তাদের স্বামী হিসেবে পরিচয় দেওয়া হচ্ছে। এ সূত্রে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখানো হচ্ছে ভূয়া কাবিননামাও।

পাচারকাজ সহজ করার জন্য কাস্টমসকে বলা হয়—মধুচন্দ্রিমায় বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছে তারা।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের(বিজিবি) প্রধান শনিবার সংবাদমাধ্যমকে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, তার বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত থেকে গত তিনমাসে এরকম ৭০ জন অল্পবয়সী নারীকে উদ্ধার করেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সীমান্ত অতিক্রম করানোর সময় এসব তরুণীকে ‘হানিমুন কাপল’ বা মধুচন্দ্রিমা উদযাপনকারী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জেনারেল আনোয়ার আরও বলেন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে পাচারকারীরা নিত্যনতুন কৌশল অবলম্বন করে আর পাচারের রুট পরিবর্তন করে থাকে। সাধারণত বাংলাদেশের কমবয়সী তরুণীদের ভারতে ভালো বেতনের কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজেদের খপ্পড়ে ফেলে পাচারকারীরা।

গত শনিবার ঢাকায় ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের জন্য ‘ন্যাশনাল প্লান অব অ্যাকশন টু কমব্যাট ট্রাফিকিং’ কার্যক্রমের উদ্বোধন উপলক্ষে দেওয়া এক সাক্ষা‍ৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।

জেনারেল আনোয়ার জানান, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে মানবপাচারের জন্য পাচারকারীদের নয়টি কৌশল শনাক্ত করেছে বিজিবি। এগুলোর ভূয়া হানিমুন কাপল, ভূয়া পর্যটনের আমন্ত্রণ, ভূয়া চাকরির আমন্ত্রণ এবং ভূয়া বিবাহ অন্যতম।

তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, অধিকাংশ সময়ই এসব কমবয়সী মেয়ে সীমান্ত অতিক্রমের সময় আইনশৃংখলাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে না বুঝে পাচারকারীদের সহযোগিতা করে থাকে। সাধারণত উন্নত জীবন যাপনের প্রতিশ্রুতিই তাদের এ কাজে প্রলুব্ধ করে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশ থেকে বছরে ঠিক কত মানুষ পাচার হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান কারো কাছে না থাকলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একটি হিসাবে ধারণা করা হয়েছে- এ সংখ্যা এক থেকে দু’লাখের মধ্যে হবে। পাশাপাশি দিন দিন এই মানব পাচারের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েই চলেছে।

এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কামালউদ্দিন বলেন, মানব পাচারের মাধ্যমে সারাবিশ্বে বছরে প্রায় ১ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার আয় হয়ে থাকে। অর্থের এই পরিমাণ সারাবিশ্বে অবৈধ মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের মাধ্যমে অর্জিত অর্থের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এশিয়া অঞ্চলে মানব পাচারের একটি অন্যতম উৎস হচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতিবছর এদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ পাচারের শিকার হয় যার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। মানবপাচারের শিকার বেশিরভাগ হতভাগ্যই মূলত বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভনে পড়ে এর শিকার হন। পাচারের শিকার হওয়া নারীদের শেষ পর্যন্ত আশ্রয় জোটে মূলত ভারত বা মধ্যপ্রাচ্যের কোনো পতিতালয়ে।

আইনের সঠিক প্রয়োগ ও কার্যকর নজরদারির অভাব, সরকারের উদাসীনতা এবং এই ব্যবসার সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু সদস্যদের যোগসাজশ ইত্যাদি কারণে বাংলাদেশে মানব পাচারের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানই একমাত্র জঘন্য এই ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে বলে মনে করেন অভিজ্ঞরা।

বাংলাদেশ সময় : ১৭০১ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১২

সম্পাদনা : রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর; আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।