ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছে নিশাতের পরিবার

আশরাফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪৭, মে ২১, ২০১২
অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছে নিশাতের পরিবার

ঢাকা : ছোটকাল থেকেই বেজায় শান্তশিষ্ট স্বভাবের মেয়ে নিশাত। আত্মীয়-স্বজন কেউ বাসায় এলে মোটেও দেখা মিলতো না তার।

ঘরের এককোণে বই নিয়েই মগ্ন থাকতো সে। সেই শান্ত মেয়েটিই এতবড় একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলতে পারেন, তেমনটা মোটেও ভাবেননি পরিবারের কেউ!

এভারেস্টজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাত মজুমদারের এতো বড় অর্জনে তার পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা। প্রিয়জন ও শুভার্থীদের অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন তারা। সোমবার বাংলানিউজ মুখোমুখি হয়েছে গর্বিত এই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে।

বাংলানিউজ পরিবারের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি জানতে চাওয়া হয় তাদের অনুভূতি, নিশাতের বেড়ে ওঠাসহ পারিবারিক নানা গল্প।

লক্ষীপুর জেলার রামগঞ্জের বাটরা গ্রামের মেয়ে নিশাত জন্মের পরেই বাবা-মায়ের সঙ্গে চলে আসেন ঢাকাতে। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান মজুমদার সব সন্তানদেরকেই বড় করেন প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনায়।

নিশাতের এভারেস্ট জয়ে পরিবারের সব সদস্যদেরই আনন্দের শেষ নেই। তবে বাবা মান্নান মজুমদারের আনন্দ আর উচ্ছাস যেন একটু বেশিই। কারণ, মুক্তিযুদ্ধে ‍অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন তিনি আর তার মেয়েই বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতারোহন করে বিশ্বজয় করেছেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশে বহুমাত্রিক সংকট চলছে। এর মধ্যে নিশাতের এভারেস্ট জয় জাতিকে একটি ঐক্যের জায়গায় নিয়ে গেছে। যেমনটা হয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিজয়ী হওয়ার পর। ধর্মান্ধতা-সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠে নারীরাও কিছু করতে পারে, সেটা নিশাত দেখিয়ে দিয়েছে। ’

আপ্লুত মান্নান মজুমদার বলেন, ‘দেশের ভেতর থেকে তো বটেই, বিদেশ থেকেও প্রচুর অভিনন্দন পাচ্ছি। চায়ের টেবিলে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে নিশাতকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ’ আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময়েও নারীদের অগ্রসরমান অবস্থার তুলে ধরতে নিশাতের এভারেস্ট জয়ের প্রসঙ্গে ওঠেছে বলেও জানান তিনি।

দু’বোন-দু’ভাইয়ের মধ্যে নিশাত দ্বিতীয়। সবার বড় শিউলী মারজান মজুমদার বিবাহিত। ছোট দু’ভাইয়ের মধ্যে আরহাম জাহির মজুমদার এয়ারফোর্সের ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট আর ইফতেখার মজুমদার রাজধানীর পুরান ঢাকায় আরকিড সেনেটারির কর্নধার। বোনের এ সাফল্যে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই তাদের মধ্যেও।

ইফতেখার মজুমদার বলেন, ‘আপুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সব কাজেই প্রচণ্ড একাগ্র আর ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন। তাই মেয়ে হয়েও তার ব্যতিক্রমী কাজকর্মে কোনো প্রশ্ন আসেনি। ’

নিশাতের পর্বতারোহনের ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে সব সময় উৎসাহ ছিল। এ বিষয়ে পরিবারের খুব বেশি দু:শ্চিন্তাও ছিল না বলে জানান নিশাতের আরেক ছোট ভাই বৈমানিক আরহাম জাহিন মজুমদার।

তার বৈমানিক হওয়াই নিশাতকে এতো বড় সাফল্য অর্জনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে বলে দেখছেন পরিবারের সদস্যরা।

নিশাতের চাচা অ্যাডভোকেট শাহ আলম বাদল বলেন, ‘বৃহত্তর নোয়াখালীর রক্ষণশীল সমাজে জন্ম নিয়েও আমাদের মেয়ে এত বড় সাফল্য দেখিয়েছে, এটা আমাদের গর্বিত করেছে। চাকরি করেও এমন একটি গৌরবময় ও দু:সাহসিক কাজ করা যায়, তা অকল্পনীয়। ’ যার ভেতর এত বড় প্রতিভা লুক্কায়িত রয়েছে, সে অনেক দূর এগিয়ে যাবে, এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

তবে পরিবারের সদস্যদের এতো সব উচ্ছ্বাস এখনই খুব বেশি স্পর্শ করছে না নিশাতের মা আশুরা মজুমদারকে। মেয়ে সুস্থ শরীরে ঘরে ফিরে এলেই পরিপূর্ণ আনন্দ পাবেন তিনি। তাই মেয়ের জন্য সকলের কাছে দোয়া চান আশুরা মজুমদার।

বাংলাদেশ সময় : ১৬৩৮ ঘণ্টা, মে ২১,২০১২
এআই / সম্পাদনা : অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।