তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের চেয়ে খুব বেশি পিছিয়ে নেই। যার ক্রেডিট তরুণদের।
২০০৭ সালে প্রথম যখন ইন্টারনেটের সাথে আমার ভালো ভাবে পরিচয় হচ্ছে, তখনকার প্রেক্ষাপটের তুলনায় আজকের প্রেক্ষাপট অনেক বেশি ভিন্ন। তখন বাংলাদেশে ইন্টারনেট স্পিড ছিলো তুলনামূলকভাবে অনেক কম। দেশে ভালো ওয়েবসাইট ছিলো হাতে গোনা কিছু। প্রোগ্রামার যারা ছিলেন, তারা তখনো নিজস্ব একটা গন্ডির মধ্যে কাজ করতেন। আজকে ২০১২ সালের চিত্রটা আসলেই অনেক ভিন্ন। অনেকটা গর্ব করেই বলা যায়, আজকের বাংলাদেশে এখন অনেক প্রোগ্রামার আছেন, যারা বিশ্বমানের কাজ করছেন, এবং আরো ভালো কিছু করার ক্ষমতা রাখেন।
আমাদের সরকারের আরেকটু পৃষ্ঠপোষকতা এবং আরো কিছুটা ভালো সুযোগ সুবিধা পেলে বাংলাদেশ যে বিশ্ব আউটসোর্সিং মার্কেট এ একটা শক্ত অবস্থানে চলে আসবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমি আজো সপ্ন দেখি এমন এক বাংলাদেশের যেখানে একদিন পড়ার জন্য বই নয়, হাতে হাতে ডিজিটাল ডিভাইস থাকবে। থাকবে থ্রিজি ইন্টারনেট কানেকশন। মোস্তফা জব্বার স্যার তার প্রায় প্রতিটা সেমিনার এ এই কথাগুলো বলেন। তার সাথে আমিও সপ্ন দেখি এমন এক বাংলাদেশের, যেখানে সব কিছু হবে বিদূৎ গতিতে। লাইন দিয়ে ইলেকট্রিসিটি বিল দিতে হবে না কিংবা পকেটে থাকবে না ওয়ালেট, একটা ডিজিটাল ওয়ালেট হবে আমাদের টাকা রাখার ঠিকানা।
তবে এই কোনটাই সম্ভব না যদি আমরা আমাদের কিছু সমস্যা দূর করতে না পারি। বাংলাদেশে বিদূৎ জনিত সমস্যা আজও একটা বড় সমস্যা। নিরবচ্ছিন্ন বিদুৎ সরবরাহ নিশ্চিত না করতে পারলে, ডিজিটাল বাংলাদেশ কখনোই হবে না। আমাদের দেশে বর্হিবিশ্বের তুলনায় ইন্টারনেট এর খরচ অনেক বেশি। বাংলাদেশে সাধারন জি এস এম ইন্টারনেট এ এখনো গড়ে প্রতি গিগাবাইট এর দাম প্রায় ৩০০ টাকা। এটাকে আরো কমাতে পারলে, আমাদের দেশের আধুনিকায়ন এ এটা অনেক বেশি
সাহায্য করবে।
বাংলাদেশে ডিজিটাল এডুকেশন সিস্টেম এখনো অনেক পিছিয়ে। আমাদের দেশ থেকে এখনো কোন ভালো বিশ্ববিদ্যালয় ডিসট্যান্স এডুকেশন চালু করে নাই। দেশের সরকারি ওয়েব সাইট গুলোর অবস্থা তথবৈচ। এ ব্যাপারে আশু ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে কামনা করছি।
আজ যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, আজ থেকে ২৫ বছর পড়ে তার নাম নিশানাও থাকবে না। সপ্ন নয়, এ বাস্তবতা। ১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধের পরে এই ৪১ বছরে আমরা যে অবস্থানে এসেছি, সামনের সময়গুলোতে পরিবর্তন এর ধারা প্রতি ৫ বছরে দ্বিগুন হবে। যখন আমি প্রথম প্রোগ্রামিং শুরু করি, তখন ইংলিশ ফিকশন মুভিগুলো দেখতাম, আর ভাবতাম কবে এগুলো সত্য হবে। খুব বেশি দিন লাগেনি, মাত্র ৫ বছরে তথ্য প্রযুক্তির যতোটা উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে, তাতে অ্যাভাটার মুভির বাস্তবতায় যেতে আমাদের খুব বেশি হলে আর ১০ বছর লাগবে।
ডেক্সটপ কম্পিউটার থেকে ট্যাবলেট পিসিতে আসতে যতোটা সময় লেগেছে, ট্যাবলেট থেকে হলোগ্রাফিক কম্পিউটার স্ক্রিনে যেতে পাঁচ বছরও লাগবে না।
দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ, মেধার সঠিক ব্যবহার করুন। আপনার গায়ের জোর কিংবা আপনার পকেটের জোর আপনার শক্তি নয়। আপনার শক্তি যদি কোথাও থেকে থাকে, সেটা আছে আপনার মস্তিস্কে। আপনার মেধাকে কাজে লাগান। আজ থেকে ১০ বছর পরে এই গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা থাকবে না। তাই নিজেকে প্রস্তুত করুন ভবিষ্যতের জন্য।
আমি বলছিনা সবাই কে প্রোগ্রামার হতে হবে। আউট সোর্সিং এর অনেক শাখা উপশাখা আছে। যে কোন একটি বা একাধিকটির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। কোন কাজ ছোট নয়। একজন প্রোগ্রামার কোডিং করে ইনকাম করছে, আপনি ডাটা এন্ট্রি করে ইনকাম করছেন, এর অর্থ এই নয় যে আপনি ঐ প্রোগ্রামার এর চেয়ে কোন অংশে ছোট। বাংলাদেশের রেমিট্যান্সে আপনাদের দুইজনের কারো ভূমিকাই কম নয়। তাই কোন কাজকে ছোট ভেবে এড়িয়ে যাবেন না। একটা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে একজন ফুটপাথ এর পরিচ্ছন্ন কর্মী থেকে শুরু করে একজন শিল্পপতি, কারো ভূমিকাই কম নয়।
নিজের লক্ষে সুস্থির ভাবে এগিয়ে যান, কে কি বললো সেদিন মনোযোগ না দিয়ে। নিন্দুকেরা অনেক কথাই বলবে। আপনার ক্ষুদ্র ভূমিকাই একদিন বাংলাদেশকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাবে, যেখানে আপনি আমি, কানায় কানায় পূর্ণ হৃদয় নিয়ে দেখবো আমাদের সপ্ন গুলো সত্য হচ্ছে।
অরীত্র আহমেদ
প্রোগ্রামার, বিজয় ( আনন্দ কম্পিউটার্স )