ঢাকা: পানির অপচয় না কমালে সামনে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। কারণ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ঢাকা ওয়াসা: কার্যক্রম, চ্যালেঞ্জ ও জন প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ আশঙ্কা করেন।
সেমিনারের প্রধান অতিথি ঢাকা-১১ আসনের সাংসদ আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘এখন পানির অভাব তুলনামূলকভাবে কমেছে। আমাদের পানির ট্যাংক পরিষ্কার রাখতে হবে। পানি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। ’
তিনি বলেন, ‘ঢাকায় জমির যে সংকট চলছে তা সবাই জানেন। তাই উপরিস্তরের পানি তোলা কঠিন। যেভাবে ঢাকার পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নামছে। এবাবে চলতে থাকলে মহাবিপদ দেখা দিবে। ঢাকার জনসংখ্যা দেড় কোটি হলেও প্রতিদিনই কয়েকলাখ লোক আসে। তাই পানির অপচয় রোধ করতে হবে। ’
তিনি ওয়াসাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় ওয়াসার সদর দপ্তর। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মতো ওয়াসা পানির উৎপাদন বাড়াতে কাজ করছে। গণমাধ্যম এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে পারে। ’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সেমিনারের সভাপতি এ এস এম শাহজাহান বলেন, ‘অনেকে বাপার (বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন--বাপা) সমালোচনা করে পরিবেশ আন্দোলন না করে উন্নয়নে কাজ করতে বলেন। কিন্ত বাপার কাজ উন্নয়ন নয়, আন্দোলন করা বা সচেতন করা। সবকিছুর মূলে জনসম্পৃক্ততা দরকার। তাই ওয়াসার কাজকে আরও জনমুখি করতে হবে । এজন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করতে হবে। ’
ওয়াসার সাবেক চেয়ারম্যান ও নগর গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ওয়াসা জনগণের টাকায় চলে। ওয়াসাকে চিন্তা করতে হবে কত সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা দিতে পারবে। আমি ওয়াসাতে দুই বছর ছিলাম। ঢাকা ওয়াসা বোর্ড যে কোনো পাবলিক ইনস্টিটউশনের চেয়ে বেশি গণতান্ত্রিক। এখানে সব সংস্থা ও নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও আসেন। শুধু রাজউক আসে না। এই বোর্ডকে একটি নিযমতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান বলা যায়। ’
তিনি নারায়ণগঞ্জের পানির দায়িত্ব ওয়াসাকে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘কারণ নারায়ণগঞ্জ এখন সিটি করপোরেশন। টঙ্গী ও গাজিপুরে ওয়াসার কাজ সম্প্রসারণ করা উচিত হবে না। আলাদা সংস্থা গঠন না করে সবগুলো সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাকে নিজ ব্যবস্থাপনায় পানি সরবরাহ করা উচিত। ’
তিনি আমলাতন্ত্রের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমি ১৫ বছর আগেও বলেছিলাম, আমাদের বহিঃস্থ পানির উৎস থেকে পানি উত্তোলন করতে হবে। এখনও শুনছি হবে। হয়তো ১৫ বছর পরও শুনবো হবে। ’
সেমিনারের বিশেষ অতিথি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘ওয়াসার অবস্থা খুব একটা ভালো হয়েছে বলে মনে হয় না। তবে ভালোর দিকে যাচ্ছে। রাজউক ও সিটি করোপরেশন ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। ’
অধ্যাপক সায়ীদ বলেন, ‘ঢাকা একটি বিশাল শহর । গত ৪০ বছরে ঢাকার অবিশ্বাস্য স্ফীতি হয়েছে । সিটি সম্পর্কে আমাদের জাতির কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তাই উন্মাদের মতো বিকশিত হচ্ছে। আমরা কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না। রাজউকে অনেক আন্দোলনের পর আমরা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা পেয়েছি। ’
তিনি বলেন, ‘এখনকার ঢাকা শহর বৃষ্টিহীন, প্রাণহীন ধূসর। ভারতের সাহারা সাহেবও বলেছেন এই শহর প্রাণহীন ও অপরিকল্পিত। আমার এলাকায় পানি সমস্যা, আমরা কার কাছে যাবো। সবাইতো ওয়াসার এমডির কাছে যাবে না। আমাদের বর্জ্য অন্যভাবে আমাদের কাছেই আসছে। এভাবে চলতে পারে না।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান , পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, খাইরুল ইসলাম, সিটিজেন রাইটস মুভমেন্টের মহাসচিব তুষার রেহমান, আইসিডিডিআরবির জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফারজানা শাহনাজ মুন্নী, ওয়াসার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সিরাজ উদ্দিন, বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় প্রমুখ সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১২
এমআইআর/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর