ঢাকা, সোমবার, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

লিচুর গ্রাম গুনাইগাছা

শামীম হাসান মিলন, চাটমোহর প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:০৭, মে ২৭, ২০১২
লিচুর গ্রাম গুনাইগাছা

চাটমোহর (পাবনা): পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের কৃষকরা দেশি লিচু চাষ করে এবার আশানুরূপ সাফল্য পেয়েছেন।

লিচু বিক্রি করে ভালো উপার্জন হওয়ায় তাদের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক।

১০-১২ বছর আগে যে জমিতে অন্যান্য ফসল আবাদ করে সংসার চলতো না, সেই জমিতে লিচুবাগান করে কৃষকরা এখন লাখপতি।

উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নে ঢুকলে রাস্তার দুপাশে যেদিকে চোখ যায়, শুধুই লিচুর বাগান। গুনাইগাছা ইউনিয়নের ৬টি গ্রাম এখন পাবনাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে ‘লিচুর গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত।

ওই গ্রামের লিচু চাষিদের সাফল্য দেখে, আশপাশের গ্রামের মানুষেরাও লিচুবাগান করতে শুরু করেছেন। উপজেলা সদরের পূর্ব দিকে গুনাইগাছা ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর, নতুনপাড়া, জালেশ্বর, বোয়াইলমারী, মল্লিক চক ও গুনাইগাছা এ ৬টি গ্রামে সাড়ে ৩ জন চাষি সাড়ে ৫শ বিঘা জমিতে দেশি লিচুর বাগান গড়ে তুলেছেন। বসতবাড়ি ছাড়া এখন আর পতিত জমি নেই এসব গ্রামে।

উপজেলায় লিচুগ্রাম হিসেবে পরিচিত গুনাইগাছা`র লিচু চাষিদের মুখে এবার হাসির ফোয়ারা। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও এবার লিচুর ফলন ভালোই হয়েছে। প্রায় ২ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়েছে বলে চাষি ও ব্যাপারিরা জানিয়েছেন।

উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরের চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া সড়কের পাশে বড়াল নদীর পারের গুনাইগাছা ইউনিয়নের মণ্ডলপাড়া, গুনাইগাছা, জ্বালেশ্বর, মলিকচক, পৈলানপুর, রামচন্দ্রপুর ও নতুনপাড়া গ্রামে রাস্তার ধারের লিচু বাগানগুলোতে এখন চলছে লিচু ভাঙার উৎসব।

গাছ বোঝাই লাল টুকটুকে সিঁদুর রাঙা দেশি জাতের লিচু ভেঙে ঝাকা বোঝাই করে ব্যাপারিরা ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে।

লিচুগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লিচু ভাঙার কাজে ব্যস্ত ব্যাপারিদের যেন কথা বলার ফুরসত নেই। ঈশ্বরদী ও শাহজাদপুর এলাকার ব্যাপারিরা এসব বাগান কিনে পাহারা বসায় লিচুর বোল আসার সময়। এরা বহুদিন ধরে এসব বাগানের লিচু কিনে ব্যবসা করে আসছেন।

কথা হয়, বাগান মালিক আব্দুল মান্নানের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে জানান, এবার লাখ টাকায় বাগান বিক্রি করেছেন তিনি।
লিচুচাষি আলহাজ নূরুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার লিচু বাগানগুলো ৩০ হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। ‘

লিচুচাষি নাসির হোসেন, লিয়াকত আলী, ওয়াজেদ আলী বাংলানিউজকে জানান, এই এলাকার মানুষ এক সময় অসচ্ছ্বল ছিলেন। ফসল হতো না জমিতে। চাষাবাদ করে সংসার চলতো না অনেকেরই।

তারা বলেন, ‘শুধু লিচুই নয়, কুল বরইয়ের বাগান গড়ে উঠেছে এখানে। প্রতি মৌসুমে কোটি টাকার কুলও বিক্রি হয়ে থাকে। ‘

লিচুচাষি আবুল হোসেন শেরজান, জহুরুল হোসেন ও পলাশ জানান, লিচু বাগান করে তারা এখন সচ্ছ্বল। প্রত্যেকের বাড়িঘর পাকা হয়েছে। ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করছেন।

গুনাইগাছা ইউনিয়নে কমর্রত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, এলাকার প্রায় ১০২ হেক্টর জমিতে লিচু বাগান গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, এলাকাটি এখন ‘লিচুর গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। এদের দেখে উপজেলার উঁচু এলাকাগুলোতেও লিচু চাষ বিস্তৃত হচ্ছে।

লিচু ব্যাপারি জামাল উদ্দিন ও পলাশ হোসেন বলেন, ‘এবার আবওহাওয়া বিরূপ থাকায় লিচুর মুকুল বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও আমাদের হিসাবে এবার মোটামুটি ২ কোটি টাকার লিচু বেচাকেনা হবে।

তারা আরও বলেন, এবার লিচুর দামটাও একটু বেশি। বর্তমানে লিচুর হাজার ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রওশন আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘লিচু চাষ লাভজনক বলে প্রতিবছরই বাগান বাড়ছে। ফলে এক সময় দেখা যাবে, চাটমোহরও পার্শ্ববর্তী ঈশ্বরদী উপজেলার মতো লিচুচাষের জন্য সুখ্যাতি পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০১২

সম্পাদনা: রোকনুল ইসলাম কাফী, নিউজরুম এডিটর, আশিস বিশ্বাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।