ঢাকা : রাজধানীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে শয্যা স্বল্পতার কারনে চিকিৎসা সেবা নিতে এখানে ভর্তি হতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। বিশেষ করে গরীব ও অসহায় রোগীদের পরিস্থিতি সবচেয়ে শোচনীয়।
ঢাকার বাইরের এবং দূর থেকে আসা দরিদ্র রোগীরা যাতায়াত খরচ অধিক হওয়ায় ভর্তির সুযোগ পেতে কষ্ট ও নির্যাতন সহ্য করেও রাত দিন পড়ে থাকছেন ক্যান্সার হাসাপাতালের বারান্দা কিংবা খোলা জায়গায়।
রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত জাতীয় ক্যন্সার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসাপাতাল (এনআইসিআরএইচ) ঘুরে এ সব তথ্য পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যন্সার হাসপাতালের মূল ফটকগুলো বন্ধ থাকলেও এর সামনের খোলা জায়গার সারি সারি মেঝেতে শুয়ে, বসে কিংবা ঘুমিয়ে রাত কাটাচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা মানুষেরা।
ক্যান্সার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে কমপক্ষে ১ মাস ঘোরাঘুরি করলে তবেই পাওয়া যায় সোনার হরিনের চেয়েও দামি হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ এবং একটি সিট।
এ ব্যাপারে কথা হয় সাভারের আমিন বাজার থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মো. দুলাল মিয়ার সঙ্গে। দুলার মিয়া তার সম্পর্কে বেয়াইন হালিমা বেগমের(৪০) চিকিৎসার জন্য ৩ দিন হয় ঢাকায় এসেছেন। মা হালিমা বেগমের সঙ্গে ছেলে আমজাদ হোসেনও এসেছেন ক্যান্সার হাসপাতালে।
দুলাল মিয়া এবং আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, হালিমা বেগম গত দুই দিন আগে ভর্তি হয়েছেন। ২দিন ধরে তিনি জরুরি বিভাগেই রয়েছেন। এখনও কোন আসন(শয্যা) বরাদ্দ পাননি।
ফেনী থেকে এসেছেন পেয়ার আহম্মেদ। তার বোনের স্বামী আব্দুল হাইয়ের(৪৫) চিকিৎসার জন্য এসেছেন তিনি। ফেনী হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে বলা হয়েছে জরুরি ভিত্তিতে ক্যন্সার হাসপাতালে ভর্তি করতে। রোববার রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ক্যন্সার হাসপাতালে এসে পৌঁছলেও রাত আড়াইটা পর্যন্ত সাক্ষাৎ মেলেনি কোন ডাক্তারের। তাই বাইরেই কাটিয়ে দিচ্ছেন রাতের সময়টা।
রমিজা বেগম (৩৫)। টিউমার থেকে ক্যন্সার হয়েছে। নরসিংদীর মনোহরদি থেকে এসেছেন তিনি। ১০ দিন ধরে ভর্তির চেষ্টা করেও ভর্তি হতে পারছেন না। তার পরে এসেও অনেকে ভর্তি হয়েছেন বলে বাংলানিউজকে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘চিকিৎসা করতে পইসা লাগে আমরা গরীব মানুষ, পইসা-পাতি নাই, আনগোরে দূর দূর কইরা খেদাইয়া দেয়। ’
এ ধরনের একই অভিযোগ করেছেন জমিলা বেগম (৪৮)। তিনি এসেছেন একই জেলার ভোলানগর থানার আমিনগঞ্জ থেকে। তার জরায়ুতে ক্যান্সার হয়েছে। ছেলে মেয়ে কেউ না থাকায় নিজের চিকিৎসার জন্য একাই দৌড়াতে হচ্ছে। মেয়ে থাকলেও মেয়ে জামাই রোগী শ্বাশুরিকে দেখতে পায়না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রমিজা বেগম এবং জমিলা বেগম অভিযোগ করে বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালের বারান্দায় রাতটা কাটাতে চাইলেও সিকিউরিটি গার্ড দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন। মেঝেতে যেন বসে না থাকা যায় সেজন্য সিকিউরিটি গার্ড পানি ঢেলে ভিজিয়ে দিয়েছেন। পরেরদিন তাদের দেখলে পিটিয়ে বিদায় করবেন বলে হুমকি দিয়েছেন। তারা কখনও কখনও বাড়ি চলে যান। ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেতে আবার আসেন ধরনা দিতে। কিন্তু যাতায়াতের খরচ অনেক বেশি হওয়ায় বাড়ি না গিয়ে হাসপাতালেই কাটিয়ে দেন রাত দিন।
মহাখালীর ক্যান্সার হাসপাতালের আশে-পাশের এলাকায় বসবাসরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, পূর্বে ক্যান্সার হাসপাতালে সিট ছিল ৫০ থেকে ৬০ টি। এখন তা বাড়িয়ে ১০০ থেকে ১১০ টি করা হয়েছে। একজন রোগীকে এই হাসপাতালে ভর্তি করতে হলে কমপক্ষে ১ মাস আগে থেকে ধরনা দিতে হয়। যে কজন সিকিউরিটি গার্ড এখানে কাজ করছেন তারা কেউ সরকারি নয়। তারা চুক্তিত্তিক বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানি থেকে এসেছেন। তারাও ঠিকমত বেতন পাননা। ৪ থেকে ৫ মাস পর পর বেতন পেয়ে থাকেন।
তাছাড়া, সারা বাংলাদেশ থেকে এখানে চিকিৎসার জন্য লোকজন আসেন। এ হাসপাতালে কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০টি সিট প্রয়োজন বলেন জানান তারা।
বাংলাদেশ সময় : ০৬০০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১২
এএমএন/সম্পাদনা:রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর