ঢাকা: সিরাজগঞ্জের কেএম মশিউর রহমান ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে লেভেল ক্রসিংয়ে দুঘর্টনা ঠেকাতে এবং সময়ের অপচয় রোধ করতে একটি অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তাদের এ প্রজেক্টের নাম ডিজিটাল রেল ক্রসিং।
এ পদ্ধতিতে লেভেল ক্রসিং থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত ট্রেন আসার পর লেভেল ক্রসিংয়ের বারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাস্তা বন্ধ করে দেবে। আবার ট্রেনটি লেভেল ক্রসিং পার হয়ে গেলে বারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাস্তা খুলে দেবে।
একই প্রজেক্টের মধ্যে যানজট কমাতে রয়েছে ডিজিটাল সংকেত ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে কোনো রাস্তায় যানজট থাকলে অন্য রাস্তায় থাকা গাড়ি চালকরা তা বুঝতে পারবেন। এক্ষেত্রে রাস্তায় যানজট থাকলে সাংকেতিক বাতিগুলো একটানা জ্বলে থাকবে। অন্যথায় বাতি একবার জ্বলবে আরেকবার নিভবে।
এ প্রজেক্টটি তৈরি করা হয়েছে কয়েকটি বৈদ্যুতিক বর্তনীর মাধ্যমে। লেভেল ক্রসিং থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে রেললাইনের উপর এবং রাস্তার উপর বিভিন্ন জায়গায় এ বর্তনীগুলো স্থাপন করা থাকে। যখন এসব বর্তনীর উপর ট্রেন চলে আসে তখন বারগুলো লেভেল ক্রসিং এর উপর দিয়ে গাড়ি চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। একই কারণে ট্রেন চলে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাস্তা খুলে যায়। রাস্তার বাতিগুলোর ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
এই গ্রুপের সদস্যরা সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।
৩৩তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় সারা দেশ থেকে বাছাইকৃত ক্ষুদে বিজ্ঞানীর দল সমৃদ্ধ দেশ গড়তে মজার মজার নানা রকম বিজ্ঞান প্রজেক্ট উপস্থাপণ করে। তারই কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হল।
বার্গলার প্রজেক্ট
ব্রাহ্মণবাড়িয়া টেকনিক্যাল স্কুলের ছাত্র ইলিয়াস আহমেদ। বার্গলার প্রজেক্টের দলনেতা। এই প্রজেক্ট তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে একটি আলোক সংবেদনশীল ডিভাইস, বাতি, কলিং বেল। বার্গলার প্রজেক্ট তথা সিঁধেল চোর ধরার এই যন্ত্রটি লুকিয়ে ঘরে ঢোকা চোরদের শনাক্ত করণে বেশ পারদর্শী।
ঘরের প্রবেশ পথে আলোক সংবেদনশীল ডিভাইসটি লাগানো হবে। এরপর কেউ লুকিয়ে বা অনুমতি ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতে গেলেই ঘরের ভেতরে লাগানো সাংকেতিক বাতিটি নিভে যাবে এবং সঙ্গে সঙ্গে কলিংবেলটি বাজতে শুরু করবে।
এক্ষেত্রে ঘরে প্রবেশ করতে আসা লোকের ছায়া আলোকসংবেদনশীল ডিভাইসের ওপর পড়ে যন্ত্রটিকে চোর ধরার কাজে সক্রিয় করে তুলবে। এ যন্ত্রটি শুধু ঘরের দরজাতেই নয় যে কোনো কিছুর পাহারাদার হিসেবে কাজে লাগানো যাবে।
স্বয়ংক্রিয় বায়োগ্যাস প্লান্ট বর্জ্য পরিষ্কারক
দেশে সাধারণত দুই ধরণের বায়োগ্যাস প্লান্ট রয়েছে। একটি ভাসমান ডোম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, অন্যটি স্থায়ী ডোম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট। বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর ভেতরে থাকা গোবর বা বর্জ্য অপসারণ করতে হয়।
স্থায়ী ডোম বায়োগ্যাস প্লান্টটি অনেক গভীর হওয়ায় এটি থেকে গোবর বের করা বেশ কষ্ট কর এবং ঝুকিঁপূর্ণ। কারণ, অনেক সময় এ প্ল্যান্টের তলদেশে গ্যাস জমে থাকে। এসব কারণে লোকজন এ প্ল্যান্ট খুব একটা তৈরি করে না। অথচ এ প্ল্যান্টের মাধ্যমে বেশি গ্যাস উৎপাদন করা যায়।
এসব সমস্যা মোকাবেলায় নিলফামারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র কৌশিক তৈরি করেছেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বর্জ্য পরিষ্কারক বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট।
এ প্ল্যান্টের তলদেশ একদিকে ঢালু থাকবে। একপাশে একটি সুইচ গেট থাকবে। গেটের বাইরের দিকে ঠিক পাশেই থাকবে ছোট একটি চেম্বার বা প্রকোষ্ট। এই চেম্বারের সঙ্গে একটি চেইন যুক্ত থাকবে। চেইনটির অপর প্রান্ত থাকবে ভূ-পৃষ্ঠে। চেইনের সঙ্গে একটি মোটর যুক্ত থাকবে। চেইনের কাঠামোটা হবে অনেকটা চলন্ত সিঁড়ির মতো। চেইনের পিঠে অনেকগুলো পাত লাগানো থাকবে।
এখন সুইচ গেটটি উপর থেকে খুলে দিলে প্ল্যান্টের তলায় জমা বর্জ্যগুলো চেম্বারে গিয়ে জমা হবে। এবারে মোটরের মাধ্যমে চেইন ঘুরালে সঙ্গে থাকা পাত গুলো বর্জ্য পদার্থগুলোকে উপরে নিয়ে আসবে। এক্ষেত্রে মোটরটি চলবে বায়োগ্যাস থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ দিয়ে।
মাল্টিপারপাস ব্রিক ক্লিন প্রজেক্ট
নিলফামারীর ভাগ্যবন্ধু রায় তৈরি করেছে মাল্টিপারপাস ব্রিক ক্লিন প্রজেক্ট। এ প্রজেক্টটির মাধ্যমে ইটের ভাটার সৃষ্ট ধোঁয়া আটকানো যায়। তার স্কুলের ল্যাবরেটরিতে করা হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৪০ শতাংশ কার্বন কণা আটকানো যায় এর মাধ্যমে। ধোঁয়া বা কার্বনডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্নকারী যে কোনো ক্ষেত্রে কার্বন নিঃসরণের হার কমাতে এ যন্ত্রটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ যন্ত্রটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে পানি, তিনটি ছাকনি, পাম্প ও একটি চিমনি। ইটের ভাটার চিমনির মধ্যে প্রথমে একটি ছাকনি বসাতে হবে। তার উপর একটি হাইড্রোলিক যন্ত্র বসাতে হবে। হাইড্রোলিক যন্ত্রটি মূলত একটি মোটা পানির পাইপ বা ওয়াটার চেম্বার। পাইপের ওপরের প্রান্তের সঙ্গে একটি বড় পানির উৎসের সংযোগ থাকবে। অন্য প্রান্তদিয়ে পানি অপসারণের ব্যবস্থা থাকবে। ওয়াটার চেম্বারের ওপরে আরেকটি ছাকনি থাকবে। এ ছাকনির ছিদ্রগুলো প্রথম ছাকনির ছিদ্রগুলোর চেয়ে সামান্য ছোট। তার ওপর আরেকটু ছোট ছিদ্র যুক্ত ছাকনি লাগানো থাকবে।
যন্ত্রটি কাজ করবে যেভাবে
ইটের ভাটায় চিমনি দিয়ে নির্গত ধোয়া সঙ্গে থাকা বড় ধরনের পোড়া ছাই আটকিয়ে দিবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ছাকনিগুলো আরো ছোট ছোট গ্যাস কণাকে আটকিয়ে দেবে। এদিকে ওয়াটার চেম্বারের ভেতর পানি থাকায় এটি সবসময় ঠাণ্ডা থাকবে। ফলে এই ঠাণ্ডা চেম্বারের দেওয়ালে লেগে বেশ কিছু কার্বন কণা গ্যাসীয় অবস্থা থেকে কঠিন অবস্থায় ফিরে আসবে। এ প্রক্রিয়ায় চেম্বার গরম হয়ে গেলে পানি বদল করে দিতে হবে।
হাইড্রলিক আর্ম যন্ত্র, হোপ’স আই, ভূ-কম্পন নির্ণয় যন্ত্র, সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিকল্পিত নগরের মডেলসহ এ রকম আরো চমৎকার চমৎকার সব প্রজেক্ট নিয়ে এ মেলায় সারাদেশের ১৯টি জেলার ৩৮টি দল অংশগ্রহণ করেছে। ৩দিন ব্যাপী এ মেলা চলছে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে। মঙ্গলবার এ মেলার শেষ দিনে প্রতিযোগীদের মাঝে পুরস্কার দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১২
এমইউএম/ সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর
ahsan@banglanews24.com